E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাণীনগরে ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকরা

২০১৯ মে ০৮ ১৪:০০:৫১
রাণীনগরে ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকরা

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় পুরো দমে শুরু হয়েছে ইরি-বোরো ধান কাটা। তবে শেষ মহুর্তে ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমনে দিশে হারা হয়ে পরেছে কৃষকরা। ব্লাস্ট রোগ আর কারেন্ট ও মাজরা পোকার আক্রমনে ধানের ফলন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। এছাড়াও বাজারে ধান বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারনে বিঘা প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লোকসানের কবলে পরেছেন বর্গা চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে রাণীনগর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে। শুরু থেকে আবহাওয়া ভাল থাকায় ধানের গাছ বেশ ভালই ছিল। কৃষকরা বলছেন, ধান বের হবার পর থেকে হঠাৎ করেই ব্লাস্ট রোগ আর মাজরা পোকার আক্রমনে ধানের শীষ মরতে থাকে। বিভিন্ন কিটনাশক ছিটিয়েও তেমন কোন ফল পাওয়া যায়নি। ফলে ধানের ফলন নিয়ে কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দেয়। এছাড়া শেষ সময়ে কারেন্ট পোকা আক্রমন করায় ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন চাষীরা।

তবে এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেছেন, এলাকা জুরে কোথাও কারেন্ট পোকার আক্রমন নেই, তবে আবহাওয়ার কারনে অনেক জায়গায় ব্লাস্ট, মাজরা পোকার আক্রমন দেখা দিলেও ধানের ফলনের কোন কমতি হবে না।

কৃষকরা জানান, গত আমন মৌসুমে অণু খাদ্যের অভাবে ধান গাছ লাল বর্ণ হয়ে শত শত হেক্টর জমির ধান মরে যায়। এতে চরম লোকসানে পরেন তারা। লোকসান কাটিয়ে উঠতে কেউ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋন নিয়ে আবার কেউ হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল বিক্রি করে প্রতি বিঘা জমি সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে বোরো ধান রোপন করেন।

চাষিদের মতে, চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে বর্গাসহ ধান রোপন থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত অঞ্চল ভেদে প্রায় ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ধানের ফলন হচ্ছে ২০ থেকে ২৪ মন। সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে এক মন ধান এক হাজার চল্লিশ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হবার কথা থাকলেও রাণীনগর উপজেলা তথা অত্র অঞ্চলের মধ্যে ধানের মোকাম খ্যাত আবাদপুকুর বাজারে প্রতিমন ধান রকম ভেদে ৬ শ’ ২০ টাকা থেকে ৬ শ’৭০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে। এতে জমির মালিকদের কিছুটা লাভ হলেও বিঘা প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে বর্গা চাষিদের।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলার সিলমাদার গ্রামের গোলাম রাব্বানী, গুয়াতা গ্রামের আনোয়ার হোসেনসহ আরো অনেক বর্গা চাষীরা জানান, চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে মাটি ও অঞ্চল ভেদে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ পরেছে। পক্ষান্তরে প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২৪ মন পর্যন্ত ধানের ফলন হচ্ছে। এই ধান বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করে বিঘা প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। বাজারে ন্যায্য মূল্য পেলে লোকসান কাটিয়ে বেশ ভাল লাভবান হওয়া যেত।

রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর বাজার ধান-চাল আড়ৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন হেলু মন্ডল বলেন, মোকামে প্রচুর মজুদ থাকায় আগ্রহ নিয়ে কোন মহাজন ধান ক্রয় করছেনা। এছাড়া বর্তমান চালের বাজার দর কম হওয়ায় মোকামের দাম অনুসারে ধান ক্রয় করতে হচ্ছে ।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভাবে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে প্রতি মন ধান এক হাজার চল্লিশ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হবার কথা। কিন্তু স্থানীয় বাজারে যে দামেই বেচা-কেনা হোক না কেন এতে আমাদের কিছু করার নেই।

(এসকেপি/এসপি/মে ০৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test