E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পানি কচু চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে ফুলবাড়ীর চাষিদের

২০১৯ মে ১০ ১৫:১৩:২৭
পানি কচু চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে ফুলবাড়ীর চাষিদের

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপর ফুলবাড়ী পৌর এলাকার নয়াপাড়া গ্রামে বাড়ীর পাশে ডোবায় পানি কচুর চাষ করে স্থানীয় বাজারে কচুর লতি ও কচু বিক্রয় করে ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হয়েছে সাদেকুল ইসলাম।

সাদেকুল ইসলাম আগে ফেরি করে ভাংড়ির কেনা-বেচা করত। তাতে তার সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। বর্তমানে সে বাড়ীর পার্শ্বে পরিত্যাক্ত ১ বিঘার ডোবা জমি বর্গা নিয়ে পানি কচু চাষ করে পরিবারসহ স্বচ্ছল ভাবে জীবন যাপন করছে।

সাদেকুল ইসলাম জানান, শীত,বর্ষা,গরমে প্রতিদিন ঘাড়ে করে ভার নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাংড়ির মালামাল সংগ্রহ করে সেই ভাংড়ির মাল বাজারের আড়তে বিক্রয় করে বৌ,বাচ্চা নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যেতো। দু-বেলা দু-মুঠো ঠিকমত খাবার জুটতো না। পানি কচু আবাদ করে প্রতি সপ্তাহে কুচুর লতি তুলে বাজারে বিক্রয় করে বেশ ভালই চলছে সংসার। জমি নিজের হলে আরো বেশি লাভবান হওয়া যেতো।

তার কচু চাষে সাফল্যতা দেখে অনুপ্রাতিন হয়ে পানি কচু চাষ শুরু করেছেন একই গ্রামের মনু মহন্ত।
মনু মহন্ত জানান, সাদেকুল পরিত্যাক্ত ডোবায় পানি কচু চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছে দেখে আমিও এবার আমার পরিত্যাক্ত ডোবায় পানি কচু লাগিয়েছি। যে পরিমান পানি কচু ফলন হয়েছে তাতে বেশ লাভবান হবো বলে আশা করছি।

বাজার ঘুরে দেখা যায় পানি কচুর চেয়ে পানি কচুর লতি‘র গ্রাহক বেশি,বিভিন্ন ভাবে তরকারীতে পানি কচুর লতি ব্যবহার হওয়ায় এর চাহিদা বেশি বলে জানান অনেক ক্রেতায়।

এদিকে নিউটন মন্ডল বলেন, বেসরকারি পাটকলে কাজ করেছেন প্রায় এক যুগ। একপর্যায়ে পাটের ধুলায় তিনি শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় তাকে পেয়ে বসে। এক পর্যায়ে তিনি জুট মিলের ওই কাজ ছেড়ে দেন। বাড়ির পার্শ্বে ৩৪ শতক জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন ধান চাষ। লাভজনক না হওয়ায় জমির একটি অংশে স্থানীয় জাতের পানি কচুর চারা রোপণ করেন। এরপর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তার প্রতিবছর আয় লাখ টাকা।

২০০৫ সাল থেকে তিনি পানি কচু চাষ করছেন। গত বছর ২ লাখ টাকার ওপর কচুর লতি, ফুল ও কচু বিক্রি করেছেন। এবছর সবে বিক্রির মওসুম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০০টির মত কচু বিক্রি করে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। কচুর লতি বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকার মত। পূর্ণ বয়স্ক কচুর চারা বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় এক লাখ টাকার মত। কচুর ফুল বিক্রি করে পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকার মত। এখন পর্যন্ত লাখ টাকার মত কচু বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ টাকা আয় করতে তার নিউটন মন্ডলের খরচ পড়েছে ২৫ হাজার টাকার মত।

আবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘেরের পাড় থেকে দেশি জাতের কিছু পানি কচুর চারা সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে চারা রোপণ করা হয়। মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারির মধ্যে গাছ লাগানো শেষ হয়ে যায়।

সারিবদ্ধভাবে তিন ফুট দূরত্বে কচুর চারা রোপণ করা হয়। এক ফুট গভীর করে কোদাল দিয়ে চাষ দেন তিনি। চারা লাগানোর পর জৈব ও রাসায়নিক সার দেন সুষমভাবে। রোপণের ৪৫ দিনের মাথায় লতি তোলা যায়। কচুগুলো ১০ ফুটের মতো লম্বা হয়। একেকটির ওজন হয় ২০-৩২ কেজি। নিজস্ব ভ্যানে করে খুলনা শহরে নিয়ে কচু বিক্রি করেন নিউটন। এ জন্য মাসিক বেতনের একজন কর্মীও রয়েছে তাঁর। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও বিক্রয় কার্যক্রম করে থাকেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক ক্রেতা তার কাছে চাহিদার কথা জানান। তারা খেত থেকে কচু কিনে নিয়ে যান। এমন কি খুলনার মধ্যে হলে সেটি তিনি নিজেই ভ্যানযোগে পাঠিয়ে দেন।

নিউটন বলেন, গত বছর এক লাখ টাকার ওপরে কচুর চারা বিক্রি করেছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তায় চারা বিক্রি হয়েছে বরগুনার বামনা, রূপসা, যশোর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিটি চারার দাম তিন-চার টাকা। নিউটনের স্ত্রী স্মৃতিলতা মালাকার বলেন, কচু চাষ করার পর থেকে আমার পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। টাকা জমিয়ে গরুর খামার করেছি। খামারে তিনটি উন্নতজাতের গাভী রয়েছে।

বাড়ির পাশে পেয়ারার চাষও শুরু করেছেন নিউটন-স্মৃতিলতা দম্পতি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভিন্ন কিছু চাষের চেষ্টা থেকেই এই কচু চাষের ধারণা ও সাফল্য অর্জন বলে জানালেন নিউটনের স্ত্রী স্মৃতিলতা মালাকার।

এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলার শলুয়া ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিউটন মন্ডলের দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে কচু চাষ করছেন। তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে কচু ক্ষেত দেখতে ঢাকার খামারবাড়ি থেকে কর্মকর্তারা এসেছিলেন। তারা নিউটনের কচু ক্ষেত দেখে প্রশংসা করেছেন। কচু চাষে এখানকার অনেকের ভাগ্য খুলেছে। নিউটন-স্মৃতিলতা দম্পতি এখন কচু চাষের মডেল।

(এইচ/এসপি/মে ১০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test