E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাড়া ফেলেছে দুই তরুণ চাষির কীটনাশকমুক্ত আম

২০১৯ জুন ১৮ ১৬:১৭:৫৫
সাড়া ফেলেছে দুই তরুণ চাষির কীটনাশকমুক্ত আম

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে ফল-মূল, শাক-সবজি নিয়ে মানুষ যখন আতঙ্কে, ঠিক তখনই কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন শ্যামল ব্যানার্জি ও আবু বকর নামের দুই শৌখিন তরুণ চাষি।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের শ্যামল ব্যানার্জি ও গৌরনদী উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের আবু বকর এবার আশাব্যঞ্জক ফলনও পেয়েছেন। তাদের বাগানের মিষ্টি ও সুস্বাদু বিভিন্ন প্রজাতির রসালো আম ক্রয় করতে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ভিড় করছেন আম বাগানে। বেশির ভাগ আমই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বাগান থেকে।

জানা গেছে, শিকারপুর গ্রামের মৃত দিপক কুমার ব্যানার্জির পুত্র গুরুদাস ওরফে শ্যামল ব্যানার্জি এসএসসি পাস করে সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন ব্যবসায় নেমেছিলেন। প্রতিবারই তাকে লোকসানের মুখে পরতে হয়েছে। শেষে ২০০৪ সালে সামান্য পুঁজি নিয়ে বাবার এক একর জমিতে তিনি মাছের ঘের তৈরি করেন। ঘেরের চারপাশে ৫৫টি বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা রোপণ করেন। ঘেরের পানি শুকিয়ে গেলে ধান চাষ এবং গাছের ফাঁকে শাক ও সবজির চাষ করেন। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার এবং রোগ-বালাই দমনের জন্য ফেরমেন ফাঁদ ব্যবহার করেন। বর্তমানে উৎপাদিত ফসল তার পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে নিকটতম বাজারে বিক্রি করে খরচের চেয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করছেন।

শ্যামল ব্যানার্জি জানান, কৃষি কাজ তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কৃষি কাজ করে এখন তিনি পুরোপুরি সাবলম্ভী। জমিতে তিনি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেও তিনি অন্যান্য চাষীদের চেয়ে বেশি ফলন পাচ্ছেন। ২০০৯ সাল থেকে তার বাগানে আমের ফলন শুরু হয়। তার বাগানের আম মিষ্টি, সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক কদর রয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে তার বাগানে বারী আম-৫, বারী আম-৪, হারিভাঙা, গোপালভোগ, ফজলি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কিউজাই ও বারমাস প্রজাতির আম রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, আমিও তার বাগান থেকে কয়েকবার আম ক্রয় করেছি। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার কারণে তার আমে স্বাস্থ্যের জন্য কোন ঝুঁকি নেই।

জেলার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের এইচএসসি পাশ করা যুবক আবু বকর কয়েক বছর আগেও চাকরির পিছনে হন্য হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাবা আলী মোহাম্মদ হাওলাদারের পরামর্শে পাঁচ বছর আগে নিজেদের এক একর জমিতে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির আম গাছ রোপন করেন।

আবু বকর জানান, প্রথমে জমিতে বেড করে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে উন্নত জাতের ২৪টি আম গাছ সংগ্রহ করে রোপন করা হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১২৫টি আম গাছ রোপণ করা হয়েছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তিনি তার বাগান থেকে ফলন পেতে শুরু করেছেন।

এ বছর তার বাগানে আ¤্রপালি, মল্লিকা, হিমসাগর, ডগমাই, পালমাই, টিউজাই, খীশাপাত, সুরমা ফজলি প্রজাতির ৯২টি আম গাছে বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও জানান, গতবছর তার বাগানের ৫০টি আম গাছ থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে তা কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। রাসায়নিক ও ফরমালিন মুক্ত আম ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা আবু বকরের বাগানে প্রতিনিয়ত ভীড় করছেন।

জেলার একমাত্র বৃক্ষপ্রেমি দুইবারের শ্রেষ্ঠপদকপ্রাপ্ত মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, শুধু চাকরি বা ব্যবসা করেই যে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তা ঠিক নয়; যার প্রমাণ দিয়েছেন আবু বকর।

(টিবি/এসপি/জুন ১৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test