E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শীতকালীন সবজিচাষে ঈশ্বরদীর কৃষকরা মহাব্যস্ত

২০১৯ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৭:৪৪:১৭
শীতকালীন সবজিচাষে ঈশ্বরদীর কৃষকরা মহাব্যস্ত

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা) : শীতকালীন শাকসবজি চাষে ঈশ্বরদীর কৃষকরা ব্যস্ত সময পার করছেন। আগাম শাক-সবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশী টাকা লাভ হবে-এই প্রত্যাশায় সবজি চাষে কৃষকদের মাঝে ধুম পড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজি ক্ষেত বপনের জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে। তাই নারী ও পুরুষ কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। আগাম ফুলকপি, পাতাকপি, মূলা ও শিম প্রায় মাসখানেক হলো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আগাম এসব সবজি কৃষকরা বেমী দামে বিক্রি করতে পারায় লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, দেশের শাকসবজি ও ফলমূল চাষের প্রধান এলাকা হিসেবে ঈশ্বরদী পরিচিত। কৃষি পণ্য চাষে সফলতায় কারণে ঈশ্বরদীর অনেক কৃষকই রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন। এখানে ব্যাপকভাবে গাজড়, শিম, ঢ্যাড়স, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ধনেপাতা, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের চাষ হয়। এছাড়াও এখানে দেশসেরা লিচু, পেয়ারা, কুল ও কাঁঠালের ব্যাপক আবাদ রয়েছে। চলতি বছর ঈশ্বরদীর প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বেসরকারিভাবে লক্ষ্যমাত্রা আরো বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঈশ্বরদীর ছলিমপুর, মুলাডুলি, লক্ষ্মীকুন্ডা, সাহাপুর ও পাকশী ইউনিয়নে এসব শাকসবজির আবাদ সবচেয়ে বেশি।

গত শনিবার সকালে কয়েকটি গ্রামে সবজির মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা সবজির চারা তুলতে ব্যস্ত, আবার কেউ কেউ ক্ষেতে সবজির চারা লাগাচ্ছেন। কেউবা নিড়ানি দিয়ে আগাছামুক্ত করছেন। এ সময় কথা হয় ছলিমপুরের কৃষক সিদ্দিকুর রহমানের সাথে। তিনি বক্তারপুরে সবজির ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন। তাঁর মোট ২০০ বিঘা জমি রয়েছে। এরমধ্যে নিজের ৫০ বিঘা। বাকী জমি তিনি বাৎসরিক লীজ নিয়েছেন। বক্তারপুর ও মুলাডুলির আড়কান্দিতে ২৩ বিঘা জমিতে টমেটো, পেঁয়াজ, ঢ্যাড়স, বেগুন, লাউ, শিম, পুইশাক, মুলাসহ শীতের সবজি চাষ করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বৃষ্টির পর রোদ উঠায় ক্ষেত শীতকালীন শাকসবজি চাষের উপযোগি ।

মুলাডুলি ইউনিয়নের স্টেশনপাড়ার কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, মুলাডুলির পুরো ইউনিয়ন শিম চাষের জন্য বিখ্যাত। আগাম জাতের শিম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। মৌসুমের শুরুতে শিম উঠলে দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের কৃষক আকমল হোসেন জানান, তিনি তিনবিঘা জমিতে শীতকালীন শাকসবজি লাগিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে শীত মৌসুমের শুরতেই শাকসবজি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

২০১১ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্ত গ্রাম্য বধূ নুরুন্নাহার নিবিড় সবজি চাষ, ফলমূল, পোল্ট্রি ও গাভির খামার করে এলাকার নারীদের কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। তিনি এবারে ২ বিঘা জমিতে ড্রাগন, ৫ বিঘাতে পেঁপে, ২ বিঘা জমিতে কলা, ৪ বিঘা লাউ, ৪ বিঘা ফুলকপি, ৪ বিঘা পেঁয়াজ, ৩ বিঘায় রসুন, ১ বিঘা জমিতে টমেটো, ৩ বিঘাতে বেগুন, ৩ বিঘা মটর, ২ বিঘা গম, ৪ বিঘা জমিতে আলু এবং ২০ বিঘা মশুর চাষ করছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, ঈশ্বরদীর চাষিদের বিশেষ নজর শীতকালীন সবজির দিকে। তাছাড়া বছরজুড়েই ঈশ্বরদীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সবজি, ফলমুল ও ফসলের আবাদ হয়। বিশেষ করে শীতকালীন সবজি চাষে কে কত ভালো করতে পারে এরকম অদৃশ্য একটা প্রতিযোগিতা চলে। শীতকালীন সবজি চাষের জন্য ঈশ্বরদী এখন দেশের অন্যতম প্রধান উপজেলা। কৃষকেরা কোনোভাবেই মাঠের জমি অনাবাদি রাখতে চান না। আবহাওয়া এখনকার মতো অনুকূুলে থাকলে এবছর ঈশ্বরদীতে এবারে রেকর্ড পরিমাণ শীতকালীন সবজি আবাদ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

(এসকেকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test