E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফলন কম, নেই ন্যায্য দর

রাণীনগরে আমন আবাদেও লোকসানে কৃষক

২০১৯ ডিসেম্বর ০৭ ১৫:৫৮:২৯
রাণীনগরে আমন আবাদেও লোকসানে কৃষক

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় চলছে ধান কাটা মাড়াইয়ের ভরা মৌসুম। নানা রকম রোগ-বালাইয়ে একদিকে যেমন ধানের ফলন কমে গেছে অন্য দিকে ন্যায্য দর না পাওয়ায় লোকসানের কবলে পরেছেন কৃষকরা। গত ইরি-বোরো মৌসুমে একই অবস্থায় লোকসানের পর আমন আবাদেও লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে রাণীনগর উপজেলা জুরে ১৮ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ১৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত রয়েছে ২৪৫ হেক্টর জমিতে। এতে চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৮১ হাজার ৫৬২ মেট্রিকটন। যদিও রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম কৃষকদের দাবি নাকোচ করে বলেছেন, কোথাও ধানের ফলন কম হয়নি, লক্ষমাত্রা যা নির্ধারণ করা আছে তার অধিক হবে।

কিন্তু কৃষকরা বলছেন, ব্লাস্ট, খোলপচাসহ বিভিন্ন রোগের আক্রমনে শীষ মরে যাওয়ায় ধানের ফলন কমে গেছে। ফলে চলতি মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে না। কৃষকদের মতে, গত ইরি-বোরো মৌসুমে নানা কারনে ধানের ফলন কমে যাওয়ায় এবং সরকার নির্ধারিত দর না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসানের কবলে পরেন কৃষকরা। লোকসান কাটিয়ে উঠতে আমন আবাদে কোমড় বেধে মাঠে নামেন তারা।

অনেকেই হাঁস-মুরগি, কেউবা আবার গরু-ছাগল বিক্রি করে এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমন আবাদ করেছেন। আবাদের শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধান বেশ ভাল হয়েছিলো। এতে কৃষকের মুখে স্থান করে নিয়েছিলো সোনালী হাসি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাশ, দূর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা কৃষকদের। গাছ থেকে ধান বের হতেই ব্লাস্ট এবং খোলপচাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ মরতে থাকে।

এর পরে ধান কাটা-মাড়াই করে একদিকে যেমন আসানুরুপ ফলন পাচ্ছেন না, অন্য দিকে বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য মূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে সরকার মোটা ধান ১ হাজার ৪০ টাকা প্রতি মন ধানের দর বেধে দিলে রাণীনগর উপজেলা থেকে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ১৮ শ ৬১ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করা হয় গত ২০ নভেম্বর। ওই দিনই মাত্র ৫ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হলেও অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় এর কোন প্রভাব বাজারে পরেনি।

ধানের মোকাম খ্যাত উপজেলার আবাদপুকুর বাজারে গত বুধবার ধান রকম ভেদে ৫৮০ টাকা থেকে ৭১০ টাকা মন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়া আতব ধান প্রতি মন ১ হাজার ৩ শ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এতে গার্হস্থ্যরা আবাদ করে আংশিক লোকসানের কবলে পরলেও বড় লোকসানে পরেছেন বর্গা চাষিরা। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ধানের আবাদ করতে রোপণ থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ৯ হাজার থেকে জমি ভাড়া (বর্গা অংশ) সহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে কৃষকদের। পক্ষান্তরে প্রতি বিঘা জমিতে এলাকা ভেদে ৮ থেকে ১৬ মন পর্যন্ত ধানের ফলন হচ্ছে। ফলে ফলন কম এবং ন্যায্য দর না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমিতে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের কৃষক বিফুল ফকির, ভাটকৈ গ্রামের নয়ন চন্দ্র, নিমগাছী গ্রামের লেবু আহম্মেদসহ আরো অনেকেই জানান, বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের কারনে ধানের ফলন কমে গেছে। এছাড়া ধান বিক্রিতে ন্যার্য মূল্য না পাওয়ায় বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ধানের আবাদ করা মস্কিল হয়ে পরবে। তারা ধানের ন্যায্য দর পেতে সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সরকারি ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আল মামুন বলেন, ইতি মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে লটারীর মাধ্যমে কৃষকদের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এসব ধান সংগ্রহ শুরু হলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পরবে। এতে কৃষকরা কিছুটা হলেও দর বেশি পাবেন।

(এসকেপি/এসপি/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test