E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বুলবুলের পর অসময়ের বৃষ্টিতে হতাশ কৃষক

২০২০ জানুয়ারি ০৪ ১৭:১৪:০৬
বুলবুলের পর অসময়ের বৃষ্টিতে হতাশ কৃষক

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জেলাজুড়ে আমন ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। একদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব অন্যদিকে পোকার আক্রমণে আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় কিছুটা হতাশ কৃষক। এছাড়া বাজার দরও তেমন ভাল ওঠেনি বলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। 

এরইমধ্যে পৌষের অসময়ের বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি ও রবি শষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় চরম হতাশ হয়ে পরেছেন কৃষকরা।

আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের চাষিরা জানান, এ বছর তিনি এক একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। কিন্তু ফলন সন্তোষজনক হয়নি। তাই লোকসানের আশঙ্কা করছেন। ওই এলাকার অন্যান্য আমন চাষিরা বলেন, একদিকে বুলবুলের ক্ষতি অন্যদিকে ধানে প্রচুর পরিমাণে চিটা এবং ছেনি পোকার (শীষ কাটা লেদা পোকা) আক্রমণ। ধান মাড়াই করতে গিয়ে হতাশ হয়েছি। ক্ষেতের তিন ভাগের দুই ভাগ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে ধান কাটার ধুম পরেছে। ফলন নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া চাষিদের মধ্যে। বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং পোকার আক্রমণ কৃষকদের জন্য শঙ্কার কারণ। তবে অনেক চাষি ফলন নিয়ে খুশি। বাজার দাম বৃদ্ধি এবং সরকার থেকে সবার ধান সংগ্রহ করা হলে চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশা করছেন।

সূত্রমতে, শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোর থেকে পৌষের অসময়ের বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার আমন ধান, শীতকালীন সবজি ও রবিশষ্যসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পরেছেন কৃষক। বৃষ্টির কারণে পাকা আমন ধান মাটিতে হেলে পরেছে। ক্ষেতে পানি জমে থাকায় কৃষক ধান কাটতে পারছেন না। তাছাড়া বৃষ্টিতে মাটির সাথে মিশে গেছে এসব এলাকার শীতকালীন শাকসবজি। এছাড়া রবিশষ্য বিশেষ করে খেসারির ডাল চাষে নেমে এসেছে বিপর্যয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার প্রায় ১ লাখ ২৭ হেক্টর জমিতে আমন এবং প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। এর একটি বড় অংশই অসময়ের বৃষ্টিতে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক।

মুলাদী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নন্দিরবাজার সংলগ্ন এলাকার কৃষক কাঞ্চন হাওলাদার জানান, তিনি দেড় একর জমিতে এবার ঢেঁড়শ, লালশাক, করল্লা, টমেটো, পুঁইশাক রোপণ করেছিলেন। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে তা বিনষ্ট হয়ে গেছে। খেসারির ডাল এবার ঘরে তুলতেই পারবেন না বলেও উল্লেখ করেন। এছাড়া পাকা আমন ধান মাটিতে হেলে পড়ায় পানির স্পর্শে নষ্ট হচ্ছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা এলাকার কৃষক মোঃ শাহিন জানান, ধান কাটা শুরু হলেও বৃষ্টিতে সর্বনাশ হচ্ছে। গৌরনদীর মাহিলাড়া এলাকার কৃষকরা জানান, বৃষ্টিতে রবি শষ্যের গোড়া পচে গেছে। এছাড়া টমেটো, লালশাক, পালংশাক, করল্লার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। হিজলা উপজেলার মেমানিয়া, হিজলা গৌরবদি এলাকার খেসারি, ধান, গম, সরিষার ক্ষেত অসময়ের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের কুন্দিয়ালপাড়া, টুঙ্গিবাড়িয়ার বিশারত, বডিরকোলা এলাকার একাধিক কৃষক আশঙ্কা করেছেন বৃষ্টিতে আমন ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, অসময়ের বৃষ্টিতে আমন ধান কিছু হেলে পরেছে। তবে পাকা ধানের ৫০ শতাংশ এরইমধ্যে কেটে নেয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, এবার জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। বৃষ্টিতে অনেকটা ক্ষতি হয়েছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিকল্প চাষে কৃষকদের পরামর্শ ও একইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রস্তাবনা পাঠানোর কাজ চলছে।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ০৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test