E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাপাসিয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে ধনেপাতা চাষ

২০২০ এপ্রিল ২৬ ১৭:৩১:১৬
কাপাসিয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে ধনেপাতা চাষ

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি : বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ধনেপাতা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। রমজানে বাজারে ধনেপাতা বিক্রির আশায় নিয়মিত গাছের যত্ন নিচ্ছেন তারা, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের তিন গ্রামে অন্তত অর্ধশতাধিক কৃষক ধনেপাতা চাষ করছে। 

শীতের শেষ সময়ে চাষিরা পতিত জমির আগাছা পরিষ্কার করে মাটি কর্ষণ ও হালের মাধ্যমে ধনেপাতা চাষ শুরু করেন। চৈত্র মাস থেকে পুরোদমে চলে ক্ষেতের পরিচর্চা। কার্তিক মাসে ফসল তোলা শুরু হয়। এর মধ্যে ৪-৫ বার ফসল বিক্রি করা যায়। প্রায় সারা বছরই ক্ষেতে ধনে পাতা থাকে। ধাপে ধাপে বিক্রি করা হয় সব পাতা। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানান কুষকরা।

গ্রামগুলোতে ৬-৭ বছর ধরে এ ফসল চাষের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গাছের নিচের ছায়ায়ও এ ফসল ভালো জন্মে। বাজারে প্রতি কেজি পাতা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পাইকাররা গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করে কয়েকশ মণ ধনেপাতা ঢাকার কাওরান বাজারে নিয়ে যায়। কুষকরা জানান,এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ মণ ধনেপাতা উৎপাদন হয়ে থাকে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের নাশেরা, দড়িনাশেরা, ফেটালিয়া ৩ গ্রামে অর্ধশতাধিক কৃষক ধনেপাতা চাষ করছে। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় নতুন এ ফসল চাষে উৎসাহী হচ্ছে তারা। কৃষকরা তাদের স্ত্রী, বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সন্তান ও শ্রমিক নিয়ে ধনেপাতা ক্ষেতে কাজ করে থাকে। কেউ কেউ পাতা তুলছে আবার কেউ ঢাকা পাঠানোর জন্য প্যাকেট করছে। সারা দিনের কাজ গুছিয়ে বাড়ির পাশে ধনেপাতা ক্ষেতে সময় দিচ্ছে পরিবারের সবাই। সবার কাজের জন্য চাষিকে দিতে হচ্ছে আলাদা মজুরি। বাড়তি লাভের আশায় ধনেপাতা ক্ষেতে নিড়ানির কাজে ঝুঁকছেন স্থানীয় মহিলারা।

দৈনিক তাদের ২০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। ফেটালিয়া গ্রামের ধনেপাতা চাষি কেশব চন্দ্র দেবনাথ বলেন, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছি। দুই বছরের জন্য জমি লিজ নিয়েছি ৬০ হাজার টাকা দিয়ে। বীজ বপন, সেচ দেওয়া, নিড়ানি, কীটনাশক প্রয়োগ, পাতা তোলাসহ বিক্রির আগ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়। আশা করি ১০-১২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। সুদমুক্ত ঋণ পেলে আরও বেশি লাভবান হতে পারবে বলে ও তাদের আশা রয়েছে। একই গ্রামের চাষি জাবেদ আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছি।

খুব বেকায়দায় আছি।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাদের ক্ষেতে আসে না। তাদেরকে খুজে ও পাওয়া যায় না। বীজ বপন করলে মাঝে মাঝে চারা উঠে না। ক্ষেতে অনেক রোগ দেখা দেয়। পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ নেই। গাছের পাতা ও মূলে পচন ধরে, ক্ষেতের আংশিক অংশ সাদা হয়ে যায়, পাতা লালচে হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। কৃষি অফিসারকে না পেয়ে আমরা নিজেরা বুঝে ঔষধ ব্যবহার করছি। উপজেলার তিন গ্রামে ৫০-৬০ বিঘা জমিতে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক ধনেপাতা চাষ করছে বলে ওই কুষক জানান।

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, কয়েকজন কৃষক ধনেপাতা চাষ করে। আমাদের কাছে প্রকৃত হিসাব নেই। আমি ওই এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বলছি কৃষকদের ক্ষেতে যাওয়ার জন্য।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক বলেন, ধনে পাতা চাষ হচ্ছে তা তিনি জানেন না, তবে ধনেপাতা দীর্ঘকাল ধরে আমাদের দেশে মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তরকারি, আচার, চাটনির স্বাদ ও সুঘ্রাণ বাড়াতে এর বেশ কদর রয়েছে। তবুও আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।

(এসকেডি/এসপি/এপ্রিল ২৬, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test