E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষাণিরাও ব্যস্ত চাষাবাদে

২০২০ ডিসেম্বর ৩০ ১৮:২১:১৪
বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষাণিরাও ব্যস্ত চাষাবাদে

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামে কৃষির উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো গত ৫দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েছে। আর এ ক্ষতি কমাতে পুরুষরা অন্য জেলায় বেড়িয়ে পরেছে কাজের উদ্যেশে। অপরদিকে নারীরা লেগে পড়েছে বিকল্প চাষাবাদে। অনটন আর সংসারের চাহিদা মেটাতে গৃহিনীরা এখন হয়েছেন কৃষাণি।

বুধবার সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সুভারকুটি গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, নারী কৃষাণিদের কর্মযজ্ঞ। ৫দফা বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ধান ক্ষেতে কেউ লাগিয়েছে শশা, কেউ সিম, কেউ কুল বড়ই, পেঁপেসহ নানান সবজি। সেপ্টেম্বরে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ২৫শতক জমিতে শশা লাগিয়েছিলেন কৃষাণি মেঘনা বেগম। তিন মাসে শশা বিক্রি যোগ্য হয়ে গেছে। তা ২হাজার ৮শ’ টাকার শশা বিক্রি করলেন তিনি। এই সবজিচাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন, ১লক্ষ ২০ হাজার টাকার শশা বিক্রি করতে পারবেন। তাহলে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন তিনি।

প্রতিবেশী আমিনা বেগম জানালেন, বন্যায় স্বামীর বাড়িভিটা ভেঙে যাওয়ায় বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিভিন্নভাবে ঋণ করে বাবার ৬০শতক জমিতে আপেল কুল, পেঁপে, মরিচ ও বেগুন লাগিয়েছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। স্বামীর ৩০শতক জমিও বন্ধক রাখতে হয়েছে তাদেরকে। এবার ধানচাষ করে অনেক টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে তাকে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এবার বিকল্প চাষবাস করে নিজের মাথা গোঁজার জন্য জমি কেনার স্বপ্ন দেখছে সে। এই সংকটময় সময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ। নারী কৃষাণিদের সহযোগিতায় তারা ১৩হাজার নারীকে প্রশিক্ষণসহ ২হাজার থেকে ১২হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি পূণর্বাসনের অর্থ সহযোগিতা দিয়েছে। এর সাথে অন্যান্য ঋণ করে ভাগ্য বদলাতে চাইছেন তারা।

এই গ্রামের ইতি বেগম জানান, এই এলাকায় কখনো বন্যা হতো না। গত ২০১৭ সাল থেকে বন্যা হচ্ছে। এবার ৫দফা বন্যায় তিনবার বীজতলা ও ধানক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে। এতে লোকসান হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। আরডিআরএস থেকে পূণর্বাসনের জন্য প্রায় ১২হাজার টাকা পেয়েছেন। তার সাথে নিজের কিছু অর্থ দিয়ে ৩০শতক জমিতে সিম লাগিয়েছেন। সিম বিক্রি করে লোকসান পুরণ করতে চাইছেন এই কৃষাণি।

হলোখানা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার গোলজার হোসেন জানান, দিনকাল বদলে গেছে। বাড়ির বউ-ঝিরা এখন শুধু ঘরের কাজ নয, স্বামীর সাথে কৃষিকাজেও হাত লাগাচ্ছে। আবাদকিস্তি কিভাবে করতে হয় তা জেনেছে তারা। ফলে এখন পুরুষবা জমি তৈরী করে অন্য জেলায় চলে যান কাজের আশায়। আর বউ-ঝিরা কোমড় বেঁেধ লেগে পড়ে আবাদ-কিস্তিতে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের শুধু সুভারকুটি গ্রাম নয়। বন্যা কবলিত কুড়িগ্রামের পাঁচগাছী, যাত্রাপুর ও উলিপুর উপজেলার বজরা এবং বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষাণিরা এখন বিকল্পচাষাবাদ করে ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছেন।

উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের খামার বজরা মুন্সিপাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী হাসিনা বেগমের মুখে হাসি ফুটেছে একটি সেলাই মেশিন কিনে। বিভিন্নভাবে প্রকল্প থেকে প্রায় ২২হাজার টাকা পেয়ে সেলাই মেশিন কিনেছে সে। সেটা দিয়েই ভাগ্য বদলাতে চেষ্টা করছে সে। তার এই কর্মকান্ডে খুশি এলাকার মানুষ।

পার্শ্ববর্তী কালপানি বজরা ব্যাপারী পাড়া গ্রামের শিউলী বেগম ২০১৮ সালে পূণর্বাসনের জন্য ১১ হাজার ৬শ’ টাকা। তার সাথে নিজের কিছু অর্থ যোগ করে একটি বাছুর কিনেছিল। এখন তার ঘরে ৩টি গরু ও একটি বাছুর রয়েছে। গাভীটি দুধ দিচ্ছে। তা বিক্রি করে পরিবারে সহযোগিতা করছে সে।

বাস্তবায়নকারি সংস্থা আরডিআরএস’র প্রকল্প সমন্বয়কারী তপন কুমার সাহা জানান, ‘আর্থিক অন্তর্ভূক্তি ও উন্নতিকরণের মাধ্যমে নারী ও যুবাদের ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী, যাত্রাপুর ও উলিপুর উপজেলার বজরা এবং বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ১৩হাজার নারী ও যুবাদের আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি ক্ষমতায়নে কাজ করা হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ট্রিকেলাপ ও মেডলাইট ফাউন্ডেশন। এতে কারিগরি সহযোগিতা করছে কনসার্ন ওয়াল্ড ওয়াইড।

হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উমর ফারুক জানান, সমাজে বেকার বসে থাকা নারী ও যুবাদের এই কর্মকান্ডে যুক্ত করার ফলে তারা নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। কিছু নারী ও যুবা এই কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদলে সফলতা দেখিয়েছে।

(পিএস/এসপি/ডিসেম্বর ৩০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test