E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উৎপাদন খরচই উঠছে না রাজবাড়ীর পেঁয়াজ চাষিদের

২০২১ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৭:৩৯:১৪
উৎপাদন খরচই উঠছে না রাজবাড়ীর পেঁয়াজ চাষিদের

আবুল কালাম আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলাটি পেয়াজ উৎপাদনে দেশের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। দেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদন হয় রাজবাড়ীতে। এবছর বিঘা প্রতি পেঁয়াজ আবাদে চাষিদের, সার, বীজ, কীটনাশক, চাষ ও দিন মজুর সহ খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকারও বেশি। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বিঘা প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ মণ। প্রতি মণ পোঁয়জ মান ভেদে পাইকারী বাজার দর বর্তমানে ৮ শত টাকা থেকে ১ হাজার ১ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। এতে বিঘাতে লোকসান হচ্ছে ১৫ হাজার টাকারও বেশি। 

গত বছর পেঁয়াজের বাজার দর কয়েকগুন বেশি পাওয়ায় চাষিরা বেশি লাভবান হয়েছেন এবং অধিক লাভের আশায় পেঁয়াজ আবাদও বাড়িয়েছেন। পেঁয়াজ আবাদে বেশি খরচে হওয়ায় এবং বাজার দর আশানুরুপ না পাওয়ায় চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে পেঁয়াজ চাষিদের । বর্তমান বাজারে নতুন মুড়ি কাঁটা পেঁয়াজ উত্তোলোন শেষের দিকে। এ পেয়াজ দিয়েই বাজারের চাহিদা মিটছে ক্রেতাদের। প্রতি কেজি মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকায়। বাজার দর কমে যাওয়ায় বিঘা প্রতি চাষিদের খরচের টাকাই ঘওে আসছে না।

পেঁয়াজের বাজার দর কমে যাওয়ায় চাষিদের বিঘা প্রতি প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মুড়ি কাটা পেঁয়াজই লোকসান হচ্ছে। বাজার দরের এমন অবস্থার কারনে হালি পেয়াজ আবাদে চাষিদের বড় ধরনের লোকসান হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এবছর রাজবাড়ীতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ৫ হাজার হেক্টর ও হালি পেঁয়াজে ২৬ হাজার হেক্টর লক্ষ মাত্রা নিধারন করেছে কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তর। তবে গত বছরের চাইতে এবছর পেঁয়াজের বীজের দাম কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে অর্ধেকেরও বেশি।এতে আবাদে যে পরিমান খরচ হয়েছে মুড়ি কাটা পেঁয়াজে সে খরচও উঠে আসছেনা চাষিদের।

রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের ধো-বাড়িয়ার পেঁয়াজ চাষি সদর আলী মন্ডল ও হারেজ শেখ, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবছরও বেশ কয়েক বিঘা পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। আবাদে পেঁয়াজ বীজ, সার, ঔষধ, কীটনাশক ক্ষেত মুজুর ও সেচ সহ সব চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বিঘা প্রতি তাদেও ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। এবছর বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বেশির কারনে বিঘাতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা খরচ হয়েছে উৎপাদনে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুন।

এদিকে ভারত সহ অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জেলার পেঁয়াজ চাষিরা। তারা বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার দর উৎপাদন খরচের চাইতে অর্ধেকে নেমে গেছে, এতে তারা আর্থিক ভাবে মারাত্বক লোকসানে পরেছেন। পেঁয়াজ আবাদের খরচ না ওঠায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। পেঁয়াজ আবাদ করে এবছর লোকসান গুনছেন রাজবাড়ীর পেঁয়াজ চাষিরা।

পাইকারী ও খুচরা পেঁয়াজ ব্যাবসায়ীরা বলেন, আগের চাইতে পেয়াজের দাম কমে গেছে। বর্তমানে দেশি মানভেদে পেঁয়াজ পাইকারী কিনছেন ২০ টাকা থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে। আর বিক্রি করছেন ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজিতে। পতি মণ পেঁয়াজ পাইকারী কিনছেন ৮শত থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়।তবে বর্তমানে দেশে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তাই বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে কৃষকেরা আরো লোকসানে পরবেন বলে জানান।

রাজবাড়ীকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরউপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)মনিরুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ চাষের জন্য রাজবাড়ী গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। দেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ রাজবাড়ীতে উৎপাদিত হয়ে থাকে। গত বছর পেঁয়াজের দাম ভালো থাকায় এবছর পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করছে কৃষকেরা। এবছর মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের লক্ষ মাত্র নির্ধারন করা হয়েছে ৩১ হাজার হেক্টরেরও বেশি। তবে পেঁয়াজ বীজের দাম বেশি থাকায় এবছর ৩ থেকে ৪ গুন বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে অনেক বেশি। তবে উৎপাদিত পেঁয়াজ বর্তমান বাজার মূল্য থাকলে চাষিরা লোকসানে পরবেন এবং বাজার মূল্য না পেলে আগামী বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারানোর আশঙ্কা করছেন কৃষি অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test