E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বাগেরহাটে অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষে বিপ্লব

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৫:০১:৪৬
বাগেরহাটে অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষে বিপ্লব

বাগেরহাট প্রতিনিধি : হিমালয় কন্যা নেপালের অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে শাক-সবজি চাষে বাগেরহাটে বিপ্লব ঘটেছে। দক্ষিণের এজেলার ফকিরহাট উপজেলায় এখন ৫০ একর জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই শাক-সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতি মাসেই বাড়ছে অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষের জমির পরিমান। এজন্য গড়ে তোলা হয়েছে বেতাগা অর্গানিক পল্লী।

উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে বেতাগা ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন দাস গত এক বছর ধরে কৃষকদের নিয়ে কাজ করে সফলতা পেয়েছেন। উৎপাদিত বিষমুক্ত শাক-সবজি বিক্রি হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। জমিতে জৈব সার ও সেক্স ফরমেট ট্রাপ ব্যবহার করায় এক বছরে সাশ্রয় হয়েছে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১৮০ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের সার ও ২০ হাজার টাকা মূল্যের কীটনাশক । সবজির আবাদ হয়েছে দ্বিগুণ। নিজেদের সুনাম ও পরিবেশ রক্ষায় কৃষকরা এখন আর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে রাজি নয়। সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই লাউ, ঝিঙ্গে, পটল, উচ্ছে, করল্লা, ডাটাশাক, পুঁইশাক, শসা, চিচিঙ্গা, ক্ষীরাই, শীত মৌসুমে বেগুন, আলু, টমেটো, সূর্যমুখী, থাইপেয়ারা ও মাল্টার চাষ করছে কৃষকরা।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন জানান, বাগেরহাট জেলার মধ্যে বেতাগা গ্রাম একটি উদাহরণ। শুধুমাত্র এখানেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার করে লাউ, করল্লা, শসার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কচুরিপানা, গোবর ও ইউরিয়া সার মিশ্রিত করে ৪ মাস পর সবজি ক্ষেতে ব্যবহার করছে। কীটনাশক দমনের জন্য সেক্স ফেরমোন ট্রাপ ব্যবহার করছে। কৃষকদের পরার্মশ্যের জন্য এখানকার মাসকাটা নামক গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কৃষি ও তথ্য সার্ভিস সেন্টার। তার দেওয়া তথ্যমতে ইউপি চেয়ারম্যান কাঠমুন্ডু সফরের পর অর্গানিক বেতাগা গড়ে তুলতে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুব্ধ করেন।

কৃষকের বন্ধু বেতাগা ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন দাস জানান, চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি সরকারী সফরে নেপালে গিয়ে সেখানের কৃষকদের অর্গানিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদন করতে দেখে অভিভুত হন। দেশে এসেকৃষকদের নিয়ে নেপালের কাঠমুন্ডুতে অর্গানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এখানে পরিবেশ বান্ধব শাক-সবজির আবাদে নেমে পড়েন। এক বছরের মধ্যে ৫০ একর জমি অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের আওতায় আসে। আগামী বছরের মধ্যে আরও ২০ একর জমিতে এপদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হবে। একদিকে যেমন কীটনাশক থেকে পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে অপর দিকে কৃষক আর্থিক ভাবে সাশ্রয় হচ্ছে। জৈব সার ব্যবহার করে এখানকার একজন কৃষক ১২ কাঠা জমিতে টমেটো চাষ করে দেড় লাখ টাকা উপার্জন করেন। পরিবেশ বান্ধব শাকসবজি উৎপাদনে জৈব সারের প্লান্ট নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২ লাখ টাকা ব্যয়সহ কৃষকের উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করতে দুই কিলোমিটার কাচাঁ রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে।

ইউপি সদস্য ও কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ইউনিয়ন সভাপতি ইউনুস আলী শেখ জানান, সবজি বাজারজাতকরণের জন্য অর্গানিক বেতাগা সবজি মার্কেট নামে একটি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ১৩ শতক জমির ওপর ১৮ লাখ ব্যয়ে মার্কেটটি নির্মাণ করছেন। বেতাগা গ্রামের চাষি গোবিন্দ দেবনাথ, পিযুষ দাস, ফিরোজ শেখ, মোশাররফ হোসেন ও চঞ্চল দাস বলেন, এক বিঘা জমিতে সবজি উৎপাদন করতে দুই হাজার টাকার রাসায়নিক সার প্রয়োজন হতো।

জৈব সার ব্যবহার করে এক বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করতে ৭শ’ টাকা খরচ হয়। স্থানীয় কৃষকরা এখনই বাঁধা কপি, ওলকপি, ক্ষীরাই ও টমেটো চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। বেতাগার চাষিরা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে আদৌ রাজি নয়। বেতাগা গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের এনামুল হকের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, কচুরিপানা, গোবর, ফসফেট ও ইউরিয়া সার মাটি চাপা দিয়ে রাখার চার মাস পর এ জৈব সার ব্যবহারের উপযোগী হয়। তার দেয়া তথ্যমতে, এখানকার প্রায় ৭০ জন চাষি জৈব সার ব্যবহার করে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অপর একটি সূত্র জানায়, উপজেলার হোচলা গ্রামে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত পরিবেশে সবজি আবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশাবাদী বেতাগার মত হোচলা গ্রামেও তারা অর্গানিক পদ্ধতিতে সফল হবে।

(একে/এএস/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test