E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্দিন চলছে মাগুরার পান চাষিদের 

২০২১ ডিসেম্বর ০৪ ১৫:৪৯:৩৭
দুর্দিন চলছে মাগুরার পান চাষিদের 

দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা : বৈরী আবহাওয়ার ফলে উৎপাদন কম, পানের বাজার মন্দা,অত্যাধিক পোকার আক্রমণ, কীটনাশক ওষুধ, সার, বীজ ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় চলতি বছরে মাগুরা জেলার  পানচাষীদেও  চলছে র্দুদিন। বানিজ্যিক ভিত্তিতে জেলায় পান চাষ শুরু না হলেও পান চাষে অনেক সাফল্য রয়েছে । এ চাষে গত বছর পান চাষিরা অনেক লাভবান হয়েছিল । কিন্তু চলতি বছর উৎপাদন খরচই উঠছে না তাদের । ফলে পান চাষীরা পড়েছেন বিপাকে। 

মাগুরা সদরের আঠারোখাদা ইউনিয়নের অক্কুর পাড়া গ্রামের পানচাষী দিদল বিশ্বাস জানান, এ চাষে পরিশ্রম ও খরচ বেশি । চলতি বছরে আমি ১৫ শতক জমিতে পান চাষ করেছি । জমিতে মাটি পিলি করে ফাল্গুন মাসে পান গাছের বীজ রোপন করি । তারপর বাশেঁর মাচা তৈরি করে সুতা টানাতে হয় । গাছ একটু বড় হলে লাঠিতে বেধে দিতে হয় । এরপর পরিচর্যা বাড়াতে হবে । পান গাছের লতা বড় হতে শুরু করলে খইল দিতে হবে । পোকার আক্রমন থেকে গাছকে বাঁচাতে প্রয়োজন মতো ঔষধ দিতে হবে । একটি পান গাছ পরিপক্ক হতে ৫-৬ মাস সময় লাগে । গাছ পরিপক্ক হলে একটি পান গাছে ১৫-২০ পান ধরে । নিয়মিত পরিচর্যার জন্য গাছে ভালো পান ধরবে ।

তিনি আরো বলেন, গত বছর পানের চাহিদা বেশি ছিল । বিভিন্ন স্থানের পাইকারি আড়তদাররা জেলায় এসে পান ক্রয় করে নিয়ে যেত । পানের বাজার ভালো থাকায় আমরা ভালো দামও পেয়েছিলাম । কিন্তু এ বছর জেলার পানের বাজার খুবই খারাপ থাকায় আমাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না । ১০ বছর ধরে আমি এ চাষ করছি । সবকিছুই মিলিয়ে এবার পানের ভালো ফলন হলেও আমাদের চলছে র্দুদিন ।

একই গ্রামের অন্য পানচাষী রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এ বছর পান চাষের ফলন ভালো হলেও লাভের চেয়ে লোকসান হচ্ছে বেশি । সার,বীজ ও শ্রমিক বাদ যে খরচ হচ্ছে তাতে বেঁচে থাকাই কষ্ট । এ চাষে পরিশ্রম বেশি কিন্তু লাভ কম । গত বছর ভালো পানের পান ৭০-৮০ টাকা পোন, মাঝারি সাইজের ১ পোন পান ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল । কিন্তু এ বছর পানের চাহিদা কম এবং দামও কম । বাজারে ভালো মানের ১ পোন পান আমরা পাইকেরি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করছি । আর মাঝারি সাইজের পান ১ পোন ১৫-২০ টাকায় পাইকেরি দাম । ফলে আমাদেও উৎপাদন খরচ উঠছে না বরং ভুর্তক্তি দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত । তাই চাষ থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে । এ চাষের পাশাপাশি আমি ধান, পাট, সরিষা সহ অন্যান্য করছি । তাতে ভালো লাভ হচ্ছে ।

পান চাষি রাজকুমার, নৃপেন বিশ্বাস,সত্যেন বিশ্বাস ও মনিকুমার আক্ষেপ করে বলেন, প্রায় ১৫ বছর আমরা এ চাষের সাথে যুক্ত । বাপ-দাদার এ চাষ আমরা বংশ পরাপর করে আসছি । এ চাষে এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে আমরা কোন পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়নি । কোন কৃষি কর্মকর্তা আমাদের মাঠ পরিদর্শনে আজও আসেনি । তাই আমরা সকল চাষে তাদের সহযোগিতা কামনা করছি । তারা আরো বলেন,এ বছর পানের বাজার মন্দা থাকায় আমরা খুবই বিপাকে আছি । শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য খরচে আমাদের নিজের পুজিঁ খরচ করতে হচ্ছে ফলে চাষীরা এ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে ।

বাটাজোড় গ্রামের দিলীপ বিশ্বাস জানান আমরা প্রায় ২০ বছর যাবৎ পানের চাষ করে আসছি। তবে এবছরে আমাদের খরচের টাকা উঠবেনা।

কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় পান চাষের উৎপাদন খুবই কম । জেলার সব অঞ্চলে এ চাষ হয় না । এ চাষে জেলার কৃষকদের আগ্রহ কম । চলতি বছর ১০ হেক্টর জমিতে জেলায় পান চাষ হয়েছে । যদি এ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ে তবে কৃষি বিভাগ তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও সহযোগিতা করবে ।

(ডিসি/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test