E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মধুখালীতে আপেল কুল চাষে ভাগ্যবদল কলেজ শিক্ষার্থী জসীমের

২০২২ জানুয়ারি ১১ ১৬:৪২:২৯
মধুখালীতে আপেল কুল চাষে ভাগ্যবদল কলেজ শিক্ষার্থী জসীমের

মো. মনিরুজ্জামান মৃধা মন্নু, মধুখালী : কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোঃ জসীম তার দুই বন্ধু সাজ্জাদ ও মামুনকে সাথে নিয়ে শখের বশে করেছিলেন বল সুন্দরী ও কাশ্মীরী কুলের বাগান। বাবা মায়ের কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে প্রায়  (৫০) শতাংশ জমিতে রোপন করেছিলেন ৩শ ৫০টি  কুলের চারা।  বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি আপেল কুলের এ বাগান দেখতে প্রায় নিয়মিত লোকজন ভীড় করছেন। আলোচিত এ কাশ্মীরি কুলের বাগানটি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের গড়াই নদীর ধারে সাবেক ইউ.পি. সদস্য নুরুন্নাহারের বাড়ীর পাশে ফুলবাড়ী মাঠে  অবস্থিত।

মোঃ জসীম একজন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। পাশে রাকিবের বাগান দেখে কুল চাষে উদ্বুদ্ধ হয় শিক্ষার্থী যুবক জসীম ও তার বন্ধুগন। জসীম জানান অনেক আগে থেকেই কৃষির প্রতি আমার বেশ আগ্রহ ছিল। রাকিবের বাগান দেখে কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠি। বিষয়টি মা বাবাকে জানালে তাদের উৎসাহের পাশাপাশি অর্থ সহ জমির যোগান দেন। পরে গোপালগঞ্জ থেকে কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী আপেল কুলের ৩৫০টি চারা সংগ্রহ করি। যাতায়তসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা চারা সংগ্রহের কাজে ব্যয় হয়। এরপর কামারখালী গড়াই নদীর ধারে ফুলবাড়ী মাঠে আমাদের নিজস্ব (৫০ শতাংশ) জমিতে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে ৩৫০টি চারা রোপন করি। এখন পর্যন্ত এই বাগানে আমার ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। মাত্র সাত মাস পরই গাছগুলোতে কুল আসতে থাকে। এখন প্রতিটি গাছ কুলের ভারে নুয়ে পরেছে। প্রথমে শখ থাকলেও এখন বানিজ্যিকভাবে চাষ করার ইচ্ছা আছে। বাগান দেখে জসীম নিজেই অভিভূত। আশেপাশে এলাকার লোকজন আগ্রহ নিয়ে আসছেন বাগান দেখতে। বাগানে যখন কিছু রোগ দেখা দেয় তখন কামারখালী ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আজিজুল হক এর পরামর্শ নিয়ে ও সঠিক পরিচর্যায় আমার বাগানের প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে কুল ধরেছে এবং ১মাস পরপর গাছে ঔষধ স্প্রে করতে হয়।

জসীম আরও জানান, ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ জমিতে চারা রোপনসহ নানা কাজে আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়, সেক্ষেত্রে লাভের অংশ অনেক বেশি থাকে, প্রথম দিক থেকে আমার বাগান থেকে ১১০ টাকা কেজি, পরে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি পাইকারি দরে বিক্রয় করছি। এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার কুল বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে পুরোদমে বাগানের কুল বিক্রির উপযোগী হবে। এ বাগান থেকে প্রায় ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবো বলে আশা করছি।

শিক্ষিত বেকার তরুন-যুবকদের উদ্দেশ্যে জসীম বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করা যায়। তিনি বলেন আরো আমার বাগানে সামনে ২৫ শতাংশ জমিতে কুল আবাদ করবো। বিশেষ করে কুল চাষে শ্রম ও পুজি লাগে কম, কিন্তু লাভ হয় বেশি, প্রতিটি কুল গাছ দীর্ঘ ৩ বছর সময় ধরে ভাল ফল দেয় এবং এই কুল চাষে প্রতি বিঘায় ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিন বছরে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করাও সম্ভব। আমি অনেকদূর থেকে চারা সংগ্রহ করায় খরচ একটু বেশী পড়েছে। প্রয়োজনে তরুন-যুবকদের এ কাজে আমার সহযোগীতা থাকবে সবসময়। তাছাড়া এই কুল সুস্বাধু ও মিষ্টি হওয়ায় মিনি আপেল নামে পরিচিত পাওয়া ও বাজারদর বেশি থাকায় বাড়তি লাভ করা যায়। এখান থেকে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের কৃষিখাতকে এগিয়ে নেওয়া যাবে।

কামারখালী ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আজিজুল হক কে জানালে তিনি বলেন, কলেজ পড়ুয়া ছেলের কৃষির প্রতি ঝোঁক দেখে খুশি হয়েছি। শিক্ষিত বেকার যারা তারাও এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। শখের কাশ্মীরী সহ উন্নত জাতের আপেল কুলের চাষ করলেও জসীম এর বাগানে এখন বাণিজ্যিকভাবে কুলের চাষ হয়েছে। তার এই কুল চাষ দেখে অনেক যুবক কৃষিতে আগ্রহ হচ্ছে। তাছাড়াও তিনি তাদের কুল বাগান পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে যে, কোন প্রয়োজনে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

কৃষি অফিসের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ঋনের সহায়তা করলে অনেক যুবকই জসীমের মত ফলের চাষ করে স্বালম্বী হতে পারে।

(এম/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test