E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশ্বরদীতে বিষমুক্ত চাষবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

২০২২ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৩:৪৫:৩৩
ঈশ্বরদীতে বিষমুক্ত চাষবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে  প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ  বিষমুক্ত চাষবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে এই চাষাবাদের খবর ছড়িয়ে পড়ায় দেশব্যাপীও সুখ্যাতি ছড়িয়েছে। শাকসবজি বা ফল, যে আবাদই হোক না কেন ফসলের মাঠে ব্যবহার হয় না রাসায়নিক সার। এক রত্তি কীটনাশকও ছিটানো হয় না। ফলন বাড়াতে ব্যবহার হচ্ছে জৈব বালাইনাশক, কেঁচো কম্পোস্ট ও জৈব সার। অন্তত:পক্ষে ২০ জন কৃষক এখন রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশক বর্জন করে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন।

যেসব জমিতে কিছুদিন আগেও রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল আবাদ হতো সেসব জমিতেই এখন কৃষকরা বিষ না ছিটিয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে দিব্যি ভালো ফলন ঘরে তুলছেন। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পেছনে বাড়তি খরচ হয়। কিন্তু জৈব সারের ব্যবহারে খরচ অনেকটাই কম। ঈশ্বরদীর গ্রামে গ্রামে বেশ কয়েকজন কৃষক নিজেরা কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে আবাদি জমিতে ব্যবহার করছেন। উদ্বৃত্ত অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই কয়েকজন কৃষক শুধু কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে তা থেকে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছেন। ঈশ্বরদীর কয়েকটি গ্রামের কৃষক, মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এক ফসলি যেসব জমিতে আগে তেমন ফসল কিংবা সবজি উৎপাদন হতো না, এখন সেসব জমির মাঠজুড়ে ফল ও সবজির সমারোহ। কৃষকরা জানান, সার-বিষ প্রয়োগ না করেও যে ভালো ফলন হতে পারে তা তারা দেখিয়ে দিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতার কথাও তারা বলেছেন।

সাহাপুরের মহাদেবপুর গ্রামের কৃষক শাহীন সরদার বলেন, সার-বিষ ছাড়াই জৈব বালাইনাশক ও কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছি সব ফসল আবাদে। তিনি রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ছাড়াই ১৫ বিঘা জমিতে পেয়ারা, ১৫ বিঘা জমিতে বাউকুল, ১০ বিঘা জমিতে গাজর, ৮ বিঘা জমিতে লিচু, ৪ বিঘা জমিতে লাউ, ৫ বিঘা জমিতে কলা ও ৩ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেন। এ ছাড়া এখন তিনি বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি বরইয়ের চাষও করছেন।

শাহীন সরদার ৪০ বিঘা জমিতে প্রথমে বাউকুল লাগিয়ে বেশ সফলতা পান। আরও ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন তিনি। বিশাল আয়তনের এসব জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন পেয়ারা, বাউকুল, লিচুর বাগান। বাগান ছাড়াও বাকি জমিতে গাজর, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিটি বেগুন, তরমুজ, মুলা, টমেটো ধনেপাতাসহ বিষমুক্ত নানা জাতের সবজি ও ফসল উৎপাদন করছেন তিনি। সার ও বিষমুক্ত উপায়ে আবাদ করে এখন শাহীন সরদার ফল বাগান ও সবজি খামার থেকে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন।

সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের চাষি মিশন আলী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বেগুন ক্ষেতে কীটনাশকের বদলে জৈব বালাইনাশক এবং রাসায়নিক সারের বদলে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে আগের চেয়ে ভালো ফলন পাচ্ছেন। একই গ্রামের মজিবর রহমান পাঁচ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। আবদুল জলিল তার দুই বিঘা জমিতে ঢেঁড়স আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন। লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের কৃষক আমান মল্লিক, মুকুল প্রামাণিক, কামালপুর গ্রামের জহির উদ্দিনসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২০ জন কৃষক এখন একই উপায়ে আবাদ করছেন বিভিন্ন ফল, ফসল ও সবজি।

এদিকে সার-বিষমুক্ত সবজি আবাদের কারণে ঈশ্বরদীতে জৈব বালাইনাশক ও ডার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির প্রতিও ঝুঁকেছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। তারা বাড়ির আঙিনায় জৈব সার উৎপাদন করে যা আয় করছেন তাতে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বছরে বাড়তি দুই থেকে তিন লাখ টাকা লাভ থাকছে।

ঈশ্বরদীর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজন রায় বলেন, ঈশ্বরদীতে সার-বিষমুক্ত সবজি আবাদ করা অন্তত ২০ জন কৃষকের প্রতি আমাদের আলাদা নজর রয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ক্রমশ: জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত ফল, ফসল ও সবজি আবাদের প্রতি কৃষক আগের চেয়ে এখন বেশি আগ্রহী। ৮-১০ হেক্টর জমি এখন সম্পূর্ণ প্রকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ঈশ্বরদীতে ৬০-৭০ টন কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি হচ্ছে। কৃষি অফিসের মাঠকর্মীরা সবসময় এসব কৃষককে তাৎক্ষনিক পরামর্শ দিচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাবনার অতিরিক্ত উপপরিচালক আবদুল লতিফ জানান, বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি ঈশ্বরদীর এসব চাষি এখন কৃষি উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে পেয়ারা, বাউকুল বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা, বাঙ্গি, লাউ, টমেটো, ওলকপি, রসুন, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজি ও ফসল উৎপাদন করে সফলতা দেখিয়েছেন।

(এসকেকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test