E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় বোরো ধানে ব্লাষ্ট রোগ

২০২২ মার্চ ১৯ ১৮:৫৩:৫৪
সাতক্ষীরায় বোরো ধানে ব্লাষ্ট রোগ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলায় বোরো ধানের পাতায় ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ধান গাছ আক্রান্ত হতে না হতেই মাঠ কি মাঠ পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে।

সরেজমিনে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদরের যোগরাজপুর, উত্তর দেবনগর, আখড়াখোলা, তুজুলপুর, মাধবকাটি ও রামেরডাঙাসহ বিভিন্ন বিলে যেয়ে দেখা গেছে বোরো ধানের খেতে বিশেষ করে ২৮ ধানের পাতা শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। ধান গাছ ক্রমশঃ ছোট হয়ে যাচ্ছে। কোন দিশা না পেয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক স্প্রে করছেন। তবে সফলতা পাচ্ছেন না বলেই অভিযোগ অনেক চাষীদের।

যোগরাজপুর গ্রামের সাবান আলী জানান, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে ২৮ ধানের চাষ করেছেন। দু’ সপ্তাহ আগে বিনেরপোতা, নগরঘাটা এলাকায় ধানে ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে মর্মে তিনি তার মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন। তার তিন দিন না পেরোতেই নিজের খেতে ধানের পাতা সাদা হতে দেখেন। কোন উপায় না দেখে আলাপ করেন কয়েকজন কৃষকের সাথে। তারা বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ি তিনি ইউরিয়া সারের সঙ্গে কীটনাশক ফসত্রিন ও উল্কা মিশিয়ে ধান খেতে ছড়িয়েছেন। এতে তার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৪০০ টাকা। এর আগে তিনি ভৃতাকো স্প্রে করেছিলেন। এক সপ্তাহ কেটে গেলেও ব্লাষ্ট রোগ কমেছে এটা বলতে পারছেন না। বরং ধান গাছ আরো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

একই গ্রামের নূর মোহাম্মদ জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে ২৮ জাতের বোরো চাষ করেছেন। আগামি ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ধানে ফুল আসবে। অথচ এক সপ্তাহ আগে থেকেই পাতা ব্লাস্ট রোগে গাছ সাদা হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। নাটিভো, ট্রুফার ছড়িয়ে বা ফিনিয়া স্প্রে করেও কোন লাভ পাচ্ছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধান তো নয়ই, বিচালি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাতে দোকানে বকেয়া পরিশোধ করতে পারবেন না। একইভাবে উত্তর দেবনগরের তাপস দাস, ছাতিয়ানতলার আনন্দ দাস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তারা যে ধান লাগিয়েছেন তাতে পাতা বলাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে খেত সাদা হয়ে গেছে। কোন ঔষধে কাজ হচ্ছে না। এ ধান দিয়ে তাদের ১২ মাস চলে উল্লেখ করে বলেন, এর আগে কখনো পাতা ব্লাষ্ট রোগে তাদের ক্ষতি হয়নি।

তুজুলপুরের মোখলেছুর রহমান ও মাধবকাটির গোপাল দাস জানান, তাদের খেতে পাতা ব্লাস্ট রোগ দেখা গেলেও তা মারাত্মক আকার ধারণ করার আগেই প্রতিকার করতে পেরেছেন। যারা জমিতে বেশি পরিমান ইউরিয়া সার ব্যবহার করেছেন তাদের ধানই বেশি ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তারা ডিএসপি ও পটাশ বেশি ব্যবহার করায় জমি লবণাক্ত কম হয়েছে । ফলে সামান্য আক্রান্ত হলেও ধান গাছ আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তবে বর্তমানে দিনে গরম, রাতে শীত ও সকালে কুয়াশার ফলে ব্লাস্ট রোগ হওয়ার আরো Íকেটি কারণ বলে তারা মনে করেন।

এ ব্যাপারে ঝাউডাঙা ইউনিয়ন ব্লক সুপারভাইজার কিরণ কান্তি সরকার বলেন, বোরো ধান সাধারণতঃ পাতা ব্লাষ্ট, গীট ব্লাষ্ট ও শিস ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এবার তুজুলপুর, যোগরাজপুর, আখড়াখোলাসহ বিভিন্ন বিলে পাতা ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলেও তা খুব বেশি নয়। কৃষকদের নাটিভো, ট্রুফার ও ফিনিয়া ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে সুফল ও পাচ্ছেন অনেকে। তবে গরম, ঠাণ্ডা ও কুয়াশাজনিত আবহাওয়ার কারণে এ রোগ দেখা দিচ্ছে। দক্ষিনা বাতাস শুরু হলে রোগের প্রাদুর্ভাব আস্তে আস্তে কমে যাবে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ১৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test