E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কীটনাশক ব্যবহারে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা

২০২২ মার্চ ২৮ ১৩:০৫:৪৯
কীটনাশক ব্যবহারে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা

এ.কে আজাদ, রাজবাড়ী : কৃষি সমৃদ্ধ জেলা রাজবাড়ীর মাটির গুনাগুণ পরীক্ষা ছাড়াই লাগামহীনভাবে ব্যবহার হচ্ছে সার ও কীটনাশক। মাটিতে বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছর উর্বরতা হারাচ্ছে বিপুল পরিমান কৃষি জমি।

দেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ সরবরাহ হয় পদ্মাকন্যা খ্যাত রাজবাড়ী থেকে। জেলার পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালিসহ অধিকাংশ অঞ্চলে পেঁয়াজ চাষের ওপর নির্ভর করে অধিকাংশ কৃষক। পেঁয়াজের পাশাপাশি আবাদ হয় রসুন, কালোজিরা, ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজি।

দেশে সবজি উৎপাদনে শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যেও অন্যতম রাজবাড়ী। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা সবজি চাষের জন্য দেশের অন্যতম বৃহৎ অঞ্চল। এ উপজেলার বিপুল পরিমান সবজির আবাদ হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত শিম, ফুলকপি, বাধাকপি, শসা, গাঁজর, টমেটো ছাড়াও বিভিন্ন সবজি পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজি কিনতে পাইকারী ব্যাপারীরা ভিড় করেন এখানে। এছাড়া এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা হয় লিচু, পেয়ারা, বরই, স্ট্রব্রেরি, তরমুজসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সুস্বাদু ফল। সবজি মৌসুমে ওই এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ ট্রাক সবজি ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।

কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, রাজবাড়ী ৫টি শ্রেণির মাটি দ্বারা গঠিত বিভিন্ন বৈশিষ্ঠ্যের কৃষি জমি রয়েছে। কৃষকরা ভালো ফলনের আশায় অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করায় নষ্ট হচ্ছে মাটির উর্বরতা। তবে মাটির রাসায়নিক উপাদানের তারতম্যের উপর ভিত্তি করে সুষম সার ব্যবহার করে এখনো মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা সম্ভব।

সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাংশা, বালিয়াকান্দি এবং কালুখালি উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণির মাটি পরীক্ষা করে অধিকাংশ মাটিতেই পাওয়া গেছে উদ্বেগজনক মাত্রার ফসফরাস, জিংক ও আর্সেনিক। যা বিষাক্ত করে তুলছে মাটি এবং উৎপাদিত শাক সবজীসহ ফসলকেও।

এছাড়াও ইতোপূর্বে রাজবাড়ীর বিভিন্ন অঞ্চলেরর মাটির শ্রেণি এবং বৈশিষ্ঠ অনুসারে ৩৮৬ টি নমুনা পরীক্ষা করে দেখতে পায়, শতকরা ৯০ শতাংশ জমিই দ্রুত হারিয়ে ফেলছে উর্বরতা শক্তি। প্রায় শতভাগ বাণিজ্যিক জমিতেই পাওয়া যায়নি পরিমিত মাত্রার জৈব পদার্থ। অতি নিম্ন এবং নিম্ন মাত্রার জৈব পদার্থ পাওয়া গেছে ৫০ শতাংশ জমিতে। এ ছাড়া অধিকাংশ মাটিতেই হাইড্রোজের সক্রিয়তা, ফসফরাস, নাইট্রোজেন, দস্তাসহ সব উপাদানই ভারসাম্যহীন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃঞ্চ দাস বলেন, ‘‘শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, সুষম সার ব্যবহার না করার কারণে উৎপাদিত ফসলও নানা রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। অনুমান নির্ভর রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক মাত্রায় সুষম সার ব্যবহার করা হলে বৃদ্ধি পাবে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের উপর সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষকদের মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সুষম সার গ্রহণের উপর ব্যবহারিক ধারণা দেয়া হচ্ছে। অবশ্য রাজবাড়ীর কিছু এলাকায় কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে কম্পোজড সার তৈরি করছে। এ সার ব্যবহার করে ইতিবাচক ফলাফলও পাওয়া গেছে।’’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটন মনে করেন, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে অধিকাংশ কৃষকই মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই যত্রতত্র সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করছে। লাগামহীন এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে মানুষ যেমন স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়েছে অনুরুপভাবে কৃষিতে কোনো রকম পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটিও স্থায়ীভাবে হারিয়ে ফেলছে উর্বরতা শক্তি।

অচিরেই জমির উর্বরতা শক্তি রক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন না করলে কৃষি উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

(একে/এএস/মার্চ ২৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test