E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌরীপুরে ইরি-বোরো ধানে ব্লাস্টের হানা, দিশেহারা কৃষক

২০২২ এপ্রিল ২৩ ১৭:৪৯:২৬
গৌরীপুরে ইরি-বোরো ধানে ব্লাস্টের হানা, দিশেহারা কৃষক

গৌরীপুর প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ইরি-বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। পর্যাপ্ত পরিমাণ ছত্রাকনাশক দিয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা। আগেরদিন সন্ধ্যায় কৃষকের দেখে যাওয়া ক্ষেতের সোনালী ধান সকালে ছিটায় পরিণত হচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখে অনেক কৃষক ফসলের জমিতেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। ফসল নষ্ট হওয়ায় ঋণের বোঝা নিয়ে শংকিত কৃষক।

সরজমিনে গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামে যাওয়ার পর কৃষক মো. মফিজ উদ্দিন জানান, ৯এপ্রিল তার জমিনের ফসল ভালো ছিলো। উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেনের পরামর্শে ছত্রাকনাশক দেয়ার পরই মড়ক ধরে। ১১এপ্রিল সকালে গিয়ে দেখেন ধান ছিটা হয়ে যাচ্ছে। এক একর ৩০শতাংশ জমিতে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮৪ রোপন করেছিলেন। পুরো জমির ধান এখন ছিটা হয়ে গিয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক মো. রুকন উদ্দিনের ১১০শতাংশ, হাবিবুল্লাহ’র ১২০শতাংশ, হযরত আলীর ১৬০শতাংশ, মোবারক হোসেনের ৬০শতাংশ, আসমত আলীর ৮০শতাংশ, মো. বাবুল মিয়ার ৭০শতাংশ, রফিক উল্লাহর ৮০শতাংশ, তোতা মিয়ার ৭০শতাংশ, আব্দুল হাইয়ের ৩৫শতাংশ, পুর্বদাপুনিয়ার সুজন মিয়ার ৪৫শতাংশ, আব্দুল গফুরের ৫০শতাংশ, জমির ধান ছিটা হয়ে গেছে।

রামগোপালপুর ইউনিয়নের ভবানীপুরের মানিক মিয়ার ৮০শতাংশ, দুলার মিয়ার ১২০শতাংশ, আব্বাস আলীর ৬০শতাংশ, গোপীনাথপুর গ্রামের মাওলানা আব্দুল গণির ৮০শতাংশ, মো. আব্দুস সোবহানের ৬০শতাংশ, মো. আব্দুল মোতালেবের ৬০শতাংশ, আব্দুর রহিমের ৪০শতাংশ, আহাম্মদ হোসেনের ৭২শতাংশ, মো. সাইফুল ইসলামের ৬০শতাংশ, বিশ^নাথপুর গ্রামের ফজলুল হকের ৬০শতাংশ, নয়াগাঁও গ্রামে মোখলেছুর রহমানের ৫০শতাংশ, সাইদুর রহমানের ৫০শতাংশ, তোতা মিয়ার ২ একর, আব্দুর রশিদের ৮০শতাংশ, আমিরুল ইসলামের ৬০শতাংশ জমির ব্রি-২৮ জাতের ধান ছিটা হয়ে গেছে।

বোকাইনগর ইউনিয়নের অষ্টগড় গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ৪০শতাংশ, অচিন্তপুর ইউনিয়নে ও সহনাটী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, যেখানেই ব্রিধান-২৮ রোপন করা হয়েছে, সেখানেই ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে।
অচিন্তপুর ইউনিয়নের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান টিটু জানান, তিনি রাতেও দেখে আসছেন। কোনো রোগবালাই নাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে দেখেন, ধানের শীষ সব ছিটা হয়ে গেছে। শুধু তার নয় আশপাশের সব জমিনেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

লংক্ষাখোলা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তার ২একর ৫০শতাংশ জমিতে ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে। জমিতে কাঁচি নিয়ে যাওয়ার অবস্থা নেই। একই গ্রামের আব্দুল বারেকের ৭০শতাংশ, মো. শামীম মিয়ার ২একর, আব্দুল খালেকের এক একর, জোয়াদ উল্লাহ’র ৫০শতাংশ, আবুল হাসেমের ৩০শতাংশ, আব্দুল মালেকের ৫০শতাংশ, বাচ্চু মিয়ার ৬০শতাংশ, রইছ উদ্দিনের ৩০শতাংশ, মো. নাঈম মিয়ার ৪০শতাংশ, হেকিম মিয়ার ৩০শতাংশ, জমেদ আলীর ৬০শতাংশ, মিজানুর রহমানের ২০শতাংশ, খোকন মিয়ার ৮০শতাংশ, হুমায়ুন কবীরের ৬০শতাংশ, মোস্তাফিজুর রহমান টিটুর ১১০শতাংশ, হোসেন মিয়ার ৬০শতাংশ, আব্দুস সাত্তারের ৫০শতাংশ, হাসেন আলীর এক একর ১০শতাংশ, আব্দুস সালামের ৭০শতাংশ, নুর ইসলামের ৬০শতাংশ এবং সাদেক মিয়ার ৭৫শতাংশ জমিতে ব্লাস্ট আক্রমণ করায় সব ধান ছিটা হয়ে গেছে।

কৃষক আজিবুর রহমান জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে যত কীটনাশক দিচ্ছি, ক্ষেতের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। হাসেন আলী বলেন, কীটনাশকও কোনো কাজে আসছে না।

২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের সাতুতি, ইউসুফাবাদ, শাহবাজপুর, গাভীশিমুল, বেকারকান্দা, মইলাকান্দা ইউনিয়নের শৌলগাই, টিকুরী, গোবিন্দপুর, বোকাইনগর ইউনিয়নের বাংলাবাজার, নাহড়া, কিসমত বড়ভাগ, তেলিহাটি, ভাদেড়া, সহনাটী ইউনিয়নের সোনাকান্দি, ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের ধানক্ষেতে ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে। ধোপাজাঙ্গালিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান বুরহান জানান, তাঁর ৬০শতাংশ জমির ধান ব্লাস্টের কারণে ছিটা হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার জানান, এ বছর বোরো মৌসুমে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে; আবাদ হয়েছে ২০হাজার ৪৩৫ হেক্টর। এ পর্যন্ত ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হেক্টর। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ব্লাস্ট আক্রান্ত জমির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ব্রিধান ২৮ জাতের ধানক্ষেত মূলত ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে। এ ধান চাষে কৃষকদের নিরুসাহিত করা হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধের জন্য কৃষকদের মাঝে লিফলেট ও চিকিৎসাপত্র দেয়া হচ্ছে।

(এস/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test