E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গাইবান্ধার খামারিদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’

২০২২ মে ৩০ ০০:০২:৩৯
গাইবান্ধার খামারিদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জে পোল্ট্রি ও মাছের পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প হিসেবে খামারিদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা ‘কালো সৈনিক মাছি।’ পরিবেশবান্ধব এই পোকা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আল মামুন নামে এক উদ্যোক্তা।

জানা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের রামধন গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আল মামুন ঢাকায় থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে জন্মস্থানে এসে এলাকার খামারিদের নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। বিদেশি এক বন্ধুর কাছে পরামর্শ পেয়ে মাত্র পাঁচ কেজি ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা ‘কালো সৈনিক মাছি’ দিয়ে তার বাড়ির জমিতে গড়ে তোলেন বিদেশি এ পোকার খামার। অল্প সময়ে তার খামারে এই লার্ভা থেকে তৈরি হয় ব্ল্যাক সোলজার পোকা। এতে সাফল্য আসে মামুনের। একটি স্ত্রী পোকা প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম দিতে পারে। ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নেওয়ার পর ২১ দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা মাছ, মুরগি ও পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে খামারিদের কাছে এই পোকা বা লার্ভা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অল্প সময়ে পোকার নাম ছড়িয়ে পড়ে গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন খামারিদের কাছে। খামারিরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে পোকা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে লার্ভাও কিনে নিচ্ছেন চাষের জন্য। জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে খামারও সম্প্রসারিত হয়েছে, চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তথ্যমতে, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’র উপযুক্ত আবাস হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা, তরকারির অবশিষ্টাংশ, খাবারের উচ্ছিষ্ট, পচা ফলমূলের মতো ময়লার ভাগাড়। দেশে এ ধরনের পরিবেশ খুবই সহজলভ্য হওয়ায় 'ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই' পোল্ট্রিশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে অনেকেই চাষ করছেন। পোল্টি ও মৎস্য শিল্পে এই পোকা আধুনিক খাদ্য হিসেবে নতুন সংযোগ হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। এর থেকে তৈরি জৈবসারও কৃষির জন্য উপকারী।

স্থানীয় কয়েকজন পোল্ট্রি খামারি জানান, সব সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই। এই পোকা খুবই উচ্চ প্রোটিন যুক্ত ও অন্যান্য ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। আর শতভাগ প্রাকৃতিক। এটি খাদ্যের অনেক খরচ কমিয়ে এনেছে। সেই সাথে মাছ, মাংস ও ডিমের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আল মামুন বলেন, ‘আমার এই পোকা দিয়ে যদি খামারে সফলতা আসে, তাহলে আমারও সফলতা আসবে। মৎস্য ও পোল্ট্রি ফিডের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে প্রতি কেজি লার্ভা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মাতৃপোকা সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এই পোকা থেকে উৎপাদিত জৈব সার বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাইয়ের খামার দেওয়ার পর থেকে সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা বা কোন পরামর্শ পাইনি। তাদের সহযোগিতা বা পরামর্শ পেলে আরও ভালো কিছু করতে পারতাম। এই পোকা নিয়ে খামারিদের অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ফলে অনেক খামারি এটি ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের উচিত এ বিষয়ে খামারিদের সঠিক ধারণা দেওয়া। তাহলে খামারিরা নির্ভয়ে ব্লাক সোলজার ফ্লাই ব্যবহার করবে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে খাদ্য খরচ কমিয়ে উৎপাদনশীলতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিবে। এটি উৎপাদন করে হাঁস-মুরগী ও মাছের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারলে খামারিরা লাভবান হবেন এবং এতে মাছ, মাংস ও ডিমের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এ পোকার চাষাবাদ নিশ্চিত করার পাশাপাশি খামারিদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের যৌথভাবে কাজ করতে হবে।’

(এসআইআর/এএস/মে ৩০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test