E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডিমের বাড়তি দামেও লোকসান গুনছে ঈশ্বরদীর পোল্ট্রি খামারিরা

২০২২ জুন ০১ ১৭:০৯:৫২
ডিমের বাড়তি দামেও লোকসান গুনছে ঈশ্বরদীর পোল্ট্রি খামারিরা

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : ব্রয়লার মুরগী ও ডিমের বাড়তি দামেও লোকসান গুনতে হচ্ছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পোল্ট্রি খামারিদের। এক কেজি ওজনের একটি মুরগী উৎপাদন খরচ ১৪০ টাকা হলেও খামারীদের বিক্রি করতে হচ্ছে ১১৮ টাকা কেজি দরে। একটি ডিম উৎপাদন খরচ ৮টাকা ২০ পয়সা। বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা ৫০ পয়সা। ডিম প্রতি ২০ থেকে ৩০ পয়সা আপাতত লাভ হলেও মাত্র এক মাস আগে রোজার মধ্যেও এক পিছ ডিম বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা ৫০ পয়সা। ডিম প্রতি উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় ২ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।  এজন্য খামারিরা পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। 

ঈশ্বরদী পোল্ট্রি খামার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত খামারী আকমল হোসেন বলেন, খামার এখন উদ্যোক্তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুন উদ্যোক্তারা বেকারত্ব ঘুচাতে ও স্বাবলম্বী হতে পোল্ট্রি খামার করেছিলেন। এখন অনেক খামারী লোকসানের কবলে পড়ে মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। ঈশ্বরদীতে প্রায় দু’শ খামার ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি পোল্ট্রি খামারীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, চলতি বছরে চারবার খাদ্যের দাম বেড়েছে। চার মাস আগেও এক বস্তা (৫০ কেজি) মুরগির খাবার ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এখন ২৭৫০ টাকায়। একই সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকের বেতন, খাচা ও সেড নির্মাণ সামগ্রীর দাম। প্রতিনিয়ত উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কিন্তু মাংস ও ডিম কত টাকায় বিক্রি হবে সেটা নির্ধারণের ক্ষমতা খামারিদের হাতে নেই। এটি নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সিন্ডিকেট। ফলে মাংস ও ডিম বিক্রি করে ক্ষুদ্র খামারিরা তাদের খরচই উঠাতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের এস এম পোল্ট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী জানান, বর্তমানে একটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় ৮.২০ পয়সা। এর মধ্যে খাদ্য ৬.৭০ টাকা, শ্রমিক ০.৫০ পয়সা, বিদ্যুৎ ০.৫০ টাকা, ঔষধ ০.৪০ টাকা, ডিম পরিবহণ ও ভাঙাসহ অন্যান্য ০.১০ টাকা। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে যখন খামার করেছি তখন (৫০ কেজি) খাদ্যের মূল্যে ছিল ১৩০০ টাকা এখন ২৭৫০ টাকা। দ্বিগুনের বেশি দাম বেড়েছে। কিন্তু ডিমের দামতো বাড়েনি। তখন প্রতি পিছ ডিম ৮ টাকায় বিক্রি হতো এখনো সে মূল্যেই বিক্রি হয়। ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পোল্ট্রি খামার করেছি। খামারে ৩৩০০ মুরগী রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৮০০ ডিম হয়। ক্ষুদ্র খামারি হিসেবে শুধু এটুকুই বলতে পারি, যেভাবে খাদ্যের দাম বাড়ছে এভাবে চলতে থাকলে খামার বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

একই এলাকার খামারী শিমুল খন্দকার বলেন, স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক হওয়ায় এ এলাকার বেকার, শিতি যুবকরা ২০০৫-০৬ সালের দিকে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেই সময় গুটি কয়েক ছোট আকারের পোলট্রি খামার দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে খামারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে উপজেলা জুড়ে নীরব বিপ্লব ঘটে এ শিল্পের। কিন্তু সরকারের উদাসীনতা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে একের পর এক মুরগির খাবারের দাম বাড়তে থাকায় বহু খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও এ ব্যবসায় এখন বড় পুঁজির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করেছে। ফলে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব অনেক ক্ষুদ্র খামারি।

মুলাডুলি গ্রামের খামারি আহাদ আলী বলেন, খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগী রয়েছে। প্রতিটি ব্রয়লারের ওজন এখন ১ কেজি ৯০০ গ্রাম। প্রতিটি ব্রয়লার মুরগীর পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৬৫ টাকা। অর্থাৎ এক কেজি ওজনের একটি মুরগী উৎপাদন খরচ ১৪০ টাকা। এখন এ মুরগী পাইকারী বিক্রি করতে হচ্ছে ১১৮ টাকা কেজি দরে। এভাবে আর কতদিন লোকসান দেয়া যায়? খাদ্যের দাম বাড়ানোর পাশাপশি পোল্ট্রি মাংসের দাম না বাড়ালে ক্ষুদ্র খামারিরা হয়তো অচিরেই নিঃস্ব হয়ে যাবে।

সলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের সততা পোল্ট্রি খামারির স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামান মাসুম বলেন, এই শিল্পটাকে ধরে রাখার জন্য এবং যুবকদের স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি এ খাতে সরকারি প্রণোদনা বাড়াতে হবে। খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারকে অবশ্যই মাংস ও ডিমের মূল্য বাড়াতে হবে। তা নাহলে বন্ধ হয়ে যাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব খামার। এতে দেশের লাখ লাখ যুবক পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব বেকার হয়ে পড়বে। এতে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাবে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে ৪৫১ টি পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এরমেধ্যে ব্রিডার ৭, লেয়ার ২২৬ ও ব্রয়লার ২১৮ টি। খামারিদের প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও পরামর্শসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নাজমুল হোসেন বলেন, পোল্ট্রি খামারের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খামারিরা সম্মানের সঙ্গে অর্থ উপার্জন করছেন। বর্তমানে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে। তবে একই সঙ্গে মাংস ও ডিমের দামও বেড়েছে। পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। ঈশ্বরদীর খামারিরা এখনো পর্যন্ত ভালো রয়েছেন।

(এসকেকে/এসপি/জুন ০১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test