E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুদালীছড়া খননে জলাবদ্ধতা না থাকায় বেড়েছে আমনের উৎপাদন

২০২২ ডিসেম্বর ০৩ ১৬:৪৯:৩০
কুদালীছড়া খননে জলাবদ্ধতা না থাকায় বেড়েছে আমনের উৎপাদন

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : অতিরিক্ত বৃষ্টি আর প্রকৃতির বৈরিতার মাঝেও এবছর মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হাওর আর গ্রামাঞ্চলের কৃষি জমি গুলোতে আমনের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে। অন্য বছরের তোলনায় বেড়েছে সোনালী ফসল আমণ ধানের উৎপাদন। এই অধিক ফলনকে আল্লাহর বিশেষ রহমত হিসেবেই দেখছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার খাইঞ্জার হাওর ও বিন্নার হাওর আর আশপাশের গ্রামাঞ্চলের কৃষি জমিতে পানি প্রবাহের একমাত্র খাল এ দুটি হাওরের কৃষি উৎপাদনের হৃৎপিন্ড হিসেবে পরিচিত কুদালীছড়া খালটি দুই-দুইবার খননের ফলেই এবারের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। এবছরের অগ্রাহয়ণের প্রথম সপ্তাহ পেরুতেই মৌলভীবাজারের হাওর আর গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে উৎসবে-আনন্দে আমন ধান কাটা আয়োজনের। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি আর সার নিয়ে হতাশায় কৃষক মনে নানা শঙ্কা থাকার পরও আমনের ফলন অন্যান্য বছরের চেয়ে ভাল হওয়ায় প্রতিটি কৃষক পরিবারে আনন্দের জোয়ার বইছে। তবে দাম ভাল পেলে উপকৃত হবেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। 

অগ্রাহয়নের শুরুতেই উপজেলার বিভিন্ন হাওর আর গ্রামাঞ্চলে আমণ ধান পাকা শুরু হয়। তবে ধান কাটতে গিয়ে এবছর সবচেয়ে বেশি শ্রমিক সঙ্কটে পরতে হয়েছে কৃষকদের। শ্রমিক সঙ্কটে অনেকেই ঝুঁকছেন আধুনিক প্রযুক্তির দিকে। ধান রোপণ,হালচাষ থেকে শুরু করে ধান কাটা ও মাড়াই সবই এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, মোস্তফাপুর ও নাজিরাবাদসহ ৩টি ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ কুদালীছড়া খাল প্রবাহিত হওয়ায় এখানকার হাজারও কৃষকের জীবনের সাথে সপ্নের মতো মিশে আছে এই ঐতিহ্যবাহী খালটি। দীর্ঘ সময় খালটি খননের কোন উদ্যেগ নেয়া না হলেও বিগত বছর দু’য়েক আগে পরপর দুইবার খালের বেশ কিছু একাধিক অংশ খনন হওয়ায় প্রাণ ফিরে পায়। খননের ফলে এখন আর আগের মতো জলাবদ্ধতা নেই হাওরে, জমে থাকা পানিতে ক্ষেত তলিয়ে যাবারও নেই কোন সম্ভাবনা। বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিও মুহুর্তেই চলে যাচ্ছে হাওরের নিচু এলাকা হয়ে হাইল হাওরের গভীরে। যার কারনে কৃষকরাও স্বাচ্ছন্দে চাষাবাদ করতে পারছেন। এবছর হাওরে আমন রোপণের পর অতিরিক্ত সার ব্যবহার করেননি কৃষকরা। তার পরও ফলন হয়েছে অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। শুধু এবছরই নয়, বিগত তিনবছর যাবতই হাওর গুলোতে ফলন ভাল হয়ে আসছে। তবে আমনের বাম্পার ফলন হলেও সেচ সুবিধা না থাকায় বুরো মৌসুমে দেখা দেয় পানির তীব্র সঙ্কট। যার কারণে বুরো না হওয়ায় বার বার কৃষকের সপ্নভঙ্গ হচ্ছে।

সদর উপজেলার জগন্নাথপুরের খাইঞ্জার হাওর,গোমরা-নিতেশ্বর এলাকার বিন্নার হাওর, আজমেরু, ভুজবল, আনিকেলীবড়, কমলাকলসসহ আশপাশের হাওর আর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ হাওরজুড়ে শুধুই ধান আর ধান। কৃষকরাও আনন্দে সারি সারি পাকা ধান কাটছেন। তবে যাদের কৃষি জমির পরিমাণ বেশি তাদের অনেকেই ধান কাটছেন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি কম্বাইন্ড হাভেস্টারের মাধ্যমে। তবে বেশিরভাগ ধান কাটা হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিইে। কৃষকদের আশা, এবছর ফলন ভাল হওয়ায় প্রতি কিয়ারে ১৫ থেকে ১৬ মণ করে পাওয়া যাবে আমণ ধান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,বিন্নার হাওরে এবছর প্রথমবারের মতো রোপা আমন চাষে ধানি গোল্ড,ব্রি হাইব্রিড-৬ ও হিরা-১০ জাতের হাইব্রিড বিজ রোপন করা হয়েছে অন্তত ২০ হেক্টর জমিতে। উচ্চ ফলনশীল এই হাইব্রিড বিজ রোপনের ফলে প্রতি হেক্টর জমিতে বেড়েছে ধানের উৎপাদন। কৃষকের মাঝেও বাড়ছে আগ্রহ। বিন্নার হাওর ও খাইঞ্জার হাওরে মোট কৃষি জমির পরিমাণ ২৪৩ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে সর্বমোট ২০০ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে এবছর সাড়ে ৪ মেট্রিকটন ধান পাওয়ার সম্ভানা রয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোপা আমন চাষাবাদে কৃষকরা রোপন করেছেন ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮৭, ব্রি ধান-৫১, ব্রি ধান-৫২ ও ব্রি ধান ৪৯।

জগন্নাথপুর এলাকার কৃষক লুকমান উদ্দিন বলেন, অন্য বছরের তোলনায় এবছর ফলন ভাল হয়েছে। কৃষকরা প্রতি কিয়ারে ১৫ থেকে ১৬ মন করে ধান পাচ্ছেন। কারন হিসেবে তিনি মনে করেন, আগে হাওরে জলাবদ্ধতায় ফলন ভাল হতোনা, এখন হাওরে জলাবদ্ধতা নেই, ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা নেই।

সদর উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন, কৃষিতে একটা নিরব বিপ্লব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রষারণ অধিদপ্তর কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে সেটা হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তির কারণে। আগে যে সিমাবদ্ধতা ছিলো কৃষকের সাথে যোগাযোগ। এখন সরাসরি কৃষক পরামর্শ পাচ্ছে, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এগুলো মাঠে বাস্তবায়নের কারণে কৃষকদের অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। একসময় কৃষক ফসলের নায্য মূল্য পেতো না, এখন কৃষক নায্য মূল্য পাচ্ছে, যার কারণে বেড়েছে কৃষিতে উৎপাদনও।

এদিকে সদর উপজেলার হাইলহাওরসহ অন্যন্য হাওর গুলোতেও এবছর রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়ে বলে জানা গেছে। এসব হাওরের কৃষকরা এখন পুরোদমে ব্যস্ত আমন ধান কাটায়।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ০৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test