E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে উদ্ধার করা জমিতে সূর্যমুখীর মিষ্টি হাসি  

২০২৩ মার্চ ০২ ১৮:৫৩:৩৭
টাঙ্গাইলে উদ্ধার করা জমিতে সূর্যমুখীর মিষ্টি হাসি  

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০ একর জমি ইটভাটার জন্য বরাদ্দ করে। সাত দশক আগে ইটভাটাটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে স্থানীয় লোকজনরা জমিটি অবৈধভাবে দখলে রেখেছিলেন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জমিটি উদ্ধার করা হয়েছে। এখন সেই জমিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় ১০ টন সূর্যমুখী উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। 

ফুল থেকে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এই সূর্যমুখী ফুল টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিনামূল্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭০ বছর আগে গোপালপুর পৌরসভার ভুয়ারপাড়া এলাকায় ইটভাটাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে জমিটি পরিত্যাক্ত থাকায় স্থানীয়রা ওই জমিতে ফসল না ফলিয়ে বিভিন্নভাবে দখল করা শুরু করে। কেউ কেউ ওই জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন। পরে সরকারের উদ্যোগে জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে আনা হয়। সম্প্রতি ওই ১০ একর জমির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে জমিটি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে’ সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সেখানে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের নির্দেশনায় ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এবছর ২৩০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু এবার ২৪২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬৪ মেট্রিক টন।

সরেজমিনে গতকাল সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ দখলে থাকা উদ্ধারকৃত জমি বাঁশ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে সূর্যমুখী চাষে সবুজের সমারোহ। ইতিমধ্যে ফুল ফোঁটায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তা দেখতে আসছেন। গাছ পরিচর্যার কাজে শ্রমিকদের ব্যস্ত থাকতেও দেখা গেছে।

টাঙ্গাইল শহরের কাগমারা এলাকা থেকে আসা মামুনুর রহমান বলেন, গোপালপুরে বিশেষ একটি কাজে এসেছিলাম। সূর্যমুখী বাগানের কথা শুনে তা দেখার কৌতুহল সৃষ্টি হয়। এই বাগানটি দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।

বাগানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আব্বাস আলী বলেন, আগে আমি শ্রমিকের কাজ করতাম। একদিন কাজ করলে আরেক দিন বসে থাকতে হতো। এখানে আমার নিয়োমিত কাজ করতে হয়। এতে আমার সংসার খুব ভালোভাবেই চলছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক তেল বীজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সূর্যমুখীতে তেল বেশি পাওয়া যায়। এই ফুলের তেল স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করে। ক্যান্সার এবং হৃদরোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ত্বকের স্বাস্থ্য বাড়ানোর কাজেও অনেক উপকারী সূর্যমুখী ফুল।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার দেওয়া হয়েছে। ১০ একর জমিতে ৪০ কেজি সূর্যমুখী বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেচের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এখানে যারা শ্রমিকের কাজ করছেন তাদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া সুর্যমুখী চাষের জন্য অনেক উপযোগী। দুই হাজার টাকা কেজি বীজ কিনে রোপণ করেছিলাম। আমরা আশা করছি এখান থেকে প্রায় ১০ টন সুর্যমুখী উৎপাদন হবে। এক মন বীজ থেকে ১৭ থেকে ২০ কেজি তেল হয়। প্রতি কেজি সূর্যমুখী তেলের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সূর্যমুখীর উপকারীতা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে পারলেই সুর্যমুখী চাষ আরও বাড়বে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ মল্লিক বলেন, আমরা মনে করি সারাদেশে এটি সর্ববৃহৎ সূর্যমুখীর প্রকল্প। সূর্যমুখী উঠানোর পরে উদ্ধারকৃত জমিতে সয়াবিনের চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রকল্প দেখে অনেক মানুষ উৎসাহ পাবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘এই বাগান থেকে যে পরিমাণ সুর্যমূখীর বীজ উৎপাদন হবে তা টাঙ্গাইলের ১২ টি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিনামূল্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’

(এসএম/এসপি/মার্চ ০২, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test