E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশ্বরদীর সুস্বাদু কাঁঠাল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে

২০২৩ জুলাই ০৯ ১৩:৫৭:০৭
ঈশ্বরদীর সুস্বাদু কাঁঠাল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : জাতীয় ফল হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদীর কাঁঠাল রসালো ও সুস্বাদু। আদিকাল হতেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঈশ্বরদীর কাঁঠালের কদর রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ঈশ্বরদীতে ব্যাপকভাবে লিচু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি কমেছে কাঁঠালের আবাদ। রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় কদর কমেনি কাঁঠালের। দো-আঁশযুক্ত বেলে মাটির কারণে ঈশ্বরদীতে দ্রুত বেড়ে ওঠে কাঁঠাল গাছ। অল্প সময়ের মধ্যেই রসালো ও সুস্বাদু কাঁঠালের ফলন পাওয়া যায়। লিচু ও আমের পুষ্টিগুণ থেকে কাঁঠালের পুষ্টিগুণ অনেক বেশী। অন্যান্য ফলের তুলনায় কাঁঠাল নিরাপদ খাদ্য। কাঁঠাল ফলনের জন্য সার-কীটনাশক-স্প্রে এর প্রয়োজন হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই ফলন পাওয়া যায়। পরিবেশগত ও প্রাকৃতিক কারণে আম-লিচুসহ অন্যান্য ফলের বিপর্যয় ঘটলেও কাঁঠাল চাষে তেমন সমস্যা হয় না। যেকারণে ঈশ্বরদীতে কাঁঠাল চাষ সম্প্রসারণের বিষয়ে কৃষকরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। 

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় কাঁঠালের হাট বসে ঈশ্বরদীতে। দেশের বিভিন্ন জেলায় এ মৌসুমে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল সরবরাহ করা হয়। উপজেলার সলিমপুর, সাহাপুর, লক্ষীকুন্ডা, পাকশী ও দাশুড়িয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে কাঁঠাল বাগান। বাগানগুলোতে ফলনও হয় ভরপুর। সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর বোর্ড অফিস মোড়ে প্রতিদিন বসছে ঈশ্বরদীর সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট। তবে এবারে আমের দাম কম থাকায় কাঁঠালের দামে হতাশ কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২ টার পর হতেই আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে রিকশা-ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং স্টায়ারিং গাড়িতে করে বিপুল কাঁঠাল আনা হয় জয়নগর বোর্ড অফিস মোড়ের এ হাটে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকাররা কাঁঠাল কিনতে আসেন এ হাটে। প্রতি গাড়িতে ১,২০০-১,৫০০ পিস কাঁঠাল থাকে। আকারভেদে হাটে প্রতিটি কাঁঠাল ৫০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় কাঁঠাল বাগানের মালিক রবিউল আলম বলেন, দুই থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম। কাঁঠাল চাষে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সারা বছর পরিবারের খরচ চলে। কাঁঠালের মোচা আসার সময় বৃষ্টিপাত কম অর্থাৎ খরা ছিলো। এজন্য মোচা অনেক নষ্ট হয়েছে। আবার এখন কাঁঠাল পাকার উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় গাছেই অধিকাংশ কাঁঠাল নষ্ট হচ্ছে। এবারে আমের দাম কম থাকায় গত বছরের তুলনায় কাঁঠালের দাম কিছুটা কম।

জয়নগর বোর্ড অফিস মোড়ের বাপ্পি ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী আবুর আলী জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র তিন মাস এ অঞ্চলে কাঁঠাল পাওয়া যায়। আড়ৎ থেকে প্রতিদিন ৪-৫ ট্রাক কাঁঠাল বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, আমতলী, গলাচিপা, বাকেরগঞ্জ, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় কাঁঠাল সরবরাহ করা হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজন জানান, প্রতিদিন বাগান থেকে কিনে ১০০-১৫০ পিস কাঁঠাল নিয়ে এ হাটে নিয়ে আসি। হাটে কাঁঠাল আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম। বিশ্বাস কাঠালের আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী মিনারুল বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় চাষী ছাড়াও বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল বিক্রি করতে এ হাটে আসেন। তার আড়ৎ থেকে নোয়াখালী, সিলেট, পটুয়াখালী সহ বিভিন্ন জেলায় কাঁঠাল পাঠানো হয়।

কৃষিতে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, এক সময়ে ঈশ্বরদীতে বিপুল পরিমাণ কাঁঠালের আবাদ ছিলো। এখানকার মাটি দো-আঁশযুক্ত বেলে হওয়ার কারণে দ্রুত বেড়ে ওঠে কাঁঠাল গাছ এবং খেতে রসালো ও সুস্বাদু। আমাদের দেশে বর্তমানে আম, লিচুসহ জনপ্রিয় ফলে ফুড সিকিউরিটি নেই। কারণ উচ্চ ফলনের আশায় ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, স্প্রে করতে হয়। কিন্তু কাঁঠালের ক্ষেত্রে এসবের প্রয়োজন পড়ে না। প্রাকৃতিকভাবে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে কাঁঠাল চাষ এখন বিলুপ্তির পথে। ঈশ্বরদীর মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য খুবই উপযোগী জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাতীয় ফল কাঁঠাল চাষের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, চলতি বছরে ঈশ্বরদীতে ১৫৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়েছে। এখানকার মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য খুবই ভালো তাই কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা করা হয়েছে।

(এসকেকে/এএস/জুলাই ০৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test