E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পোরশায় পাতকুয়া সেচ প্রকল্পে সুফল পাচ্ছে না কৃষক

২০২৩ জুলাই ১০ ১৬:১২:০৫
পোরশায় পাতকুয়া সেচ প্রকল্পে সুফল পাচ্ছে না কৃষক

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর পোরশা উপজেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের খাবার পানি সরবরাহ ও বিভিন্ন শাক-সবজি চাষে বিনামূল্যে সেচ সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয়েছিল সৌরচালিত পাতকুয়া। কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে নির্মাণকৃত সেই পাতকুয়া সেচ প্রকল্পে সুফল পাচ্ছে না কৃষক। 

বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইডের সূত্রমতে, বাংলাদেশের মৃত্তিকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চল একটা বিশেষ মৃত্তিকা অঞ্চল। অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভের পানির স্তর মোটেই সমৃদ্ধ নয়। ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর এতই অনুন্নত যে তা গভীর নলকূপ বা অগভীর নলকূপ দ্বারা উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। তবে এসব এলাকায় পাতকূয়া খনন করলে কুয়ায় পানি জমে। কুয়ায় জমা পানি উত্তোলন করে খাবার পানি ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারসহ কম সেচ লাগে এমন ফসল চাষ করা সম্ভব। এ কারনে তৎকালিন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি’র পরামর্শে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকায় পাতকুয়া খনন কার্যক্রম শুরু করে।

উক্ত প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিভাগের ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকা চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার ৩টি (চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর, গোমস্তাপুর ও নাচোল) এবং নওগাঁ জেলার ৬টি (নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, সাপাহার ও পোরশা) মোট ৯টি উপজেলায় ৪৫০টি পাতকুয়া খনন করে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে স্বল্প সেচের ফসল উৎপাদনসহ ৩৩ হাজার ৭৫০ জন জনসাধারণকে খাবার ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

ফলে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। এ প্রকল্পের আওতায় গত বছর জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পোরশা উপজেলায় নির্মিত অধিকাংশ পাতকুয়া অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বছর যেতে না যেতেই পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কয়েকটি একাধিকবার মেরামত করা হয়েছে। প্রকল্পে সেচ সুবিধায় অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে দাবি করা হলেও বাস্তবে এর কোন মিল নেই বললেই চলে। প্রতিটি পাতকুয়ার জন্য সুবিধাভোগী কৃষকদের নিয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউই পাতকুয়া থেকে ঠিকমত পানি পায় না। এতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বরং সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।

এ উপজেলায় কোটি টাকার বেশী ব্যয়ে খনন করা ৪৫টি পাতকুয়া থেকে কোন সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। সেচ সুবিধা সহ খাবার পানি না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা। পাশের বিদ্যুৎচালিত মিনিডিপ অথবা মর্টার থেকে নগদ টাকা দিয়ে পানি সংগ্রহ করে ফসল ফলাতে হচ্ছে তাদের। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জালুয়া মৌজায় হাবিবুর রহমানের জমিতে একটি পাতকুয়া স্থাপন করা হয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাতকুয়া থেকে দুই বিঘা জমিতে পুরোপুরি সেচ দেয়া সম্ভব হয় না। তবে তার জমিতে পাত কুয়াটি দীর্ঘদিন অকার্যকর রয়েছে। কতৃপক্ষকে বলে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। এটি দিয়ে চাষাবাদ করা সম্ভব নয়।

গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নের হাজিপাড়া গ্রামের পাতকুয়া পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নাসির উদ্দিন জানান, এতো টাকা ব্যয় করে মাত্র ১-২ বিঘা জমি আবাদ হবে এটা কেমন অযৌক্তিক এক বিষয়। তার পরিচালিত পাতকুয়াটি দীর্ঘদিন অকেজো ছিল। কতৃপক্ষকে বলে কাজ না হওয়ায় নিজেই মেকানিক ডেকে সচল করেছিলেন। কিন্তু আবারও অকেজো হয়ে গেছে বলে তিনি জানান। এরপর থেকে সেচ সুবিধা বন্ধ রয়েছে।

তেতুলিয়া ইউনিয়নের বারিন্দা গ্রামের পাতকুয়া পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কৃষক হুমায়ন কবির জানান, তিনি পাতকুয়া থেকে সামান্য কিছু পানি পান। যা দিয়ে দুই বিঘার উপরে চাষাবাদ করা সম্ভব নয়।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পোরশা জোন সূত্রে জানা গেছে, পাতকুয়া খননের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় স্বল্প সেচে ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ৪৫টি পাতকুয়া খনন করা হয়েছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রকল্পটি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে শুরু হয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শেষ হয়।

এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পোরশা জোনের সহকারি প্রকৌশলী কাজিমুদ্দিন বলেন, প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকরা বিনামূল্যে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন। পাতকুয়ার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি অস্বীকার করেন। এবিষয়ে তিনি বেশী কিছু বলতে পারবেন না। তবে প্রতিটি পাতকুয়া সচল রয়েছে এবং এর পানি দিয়ে ১০বিঘা জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় কুমার সরকার জানান, তিনি এবিষয়ে তেমন কিছু জানেননা। তবে পাতকুয়াগুলো কৃষকের তেমন কোনো কাজেই আসছে না বলে তিনি মনে করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সেচ কমিটির উপদেষ্টা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ্ মঞ্জুর মোরশেদ চৌধুরী স্থানীয় বিএমডিএ কতৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

(বিএস/এসপি/জুলাই ১০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test