E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জেলে থেকে মাছ চাষী যতীন্দ্র পেলেন রাষ্ট্রীয় পদক 

২০২৩ জুলাই ২৮ ১৬:৪৯:২৯
জেলে থেকে মাছ চাষী যতীন্দ্র পেলেন রাষ্ট্রীয় পদক 

গৌরীপুর প্রতিনিধি : জেলে থেকে মাছ চাষী হয়ে রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন গৌরীপুরের যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ। রেণুপোনা উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখায় জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৩ পেয়েছেন তিনি। চলতি বছর জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে গত ২৫ জুলাই  মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর হাত থেকে জাতীয় মৎস্য পদক (ব্রোঞ্জ) সংগ্রহ করেন যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ।

৯ ভাই বোনের সংসারে অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া হয়নি। জীবিকার তাগিদে ছোটবেলা থেকেই জেলে পেশায় জড়িয়ে পড়েন। খাল-বিল থেকে যেমন মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতেন। তেমনি টাকা রোজগার করতে শ্রমিকের কাজ করেছেন অন্যের মৎস্য খামারে। মাছ চাষের স্বপ্নটা তখন থেকেই শুরু তাঁর।

স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হাড়ভাঙা খাটুনির শ্রমে উপার্জিত টাকা থেকে মাটির ব্যাংকে জমানো পাঁচশ টাকায় ১৯৯৫ সালে মাছ চাষের জন্য একটি পুকুর ভাড়া নেন যতীন্দ্র বর্মণ।

এরপরের গল্পটা শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার। মাছ চাষের আয়ে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বর্মণ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। চলতি বছর সাফল্যের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান তিনি। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে রেণু পোনা উৎপাদনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় মৎস্য পদক পেয়েছেন তিনি।

যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে। গৌরীপুর-রামগোপালপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাহাদুর গ্রামে রয়েছে যতীন্দ্র বর্মণের প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হ্যাচারির পুকুরে মাছের খাবার ছিটাচ্ছেন যতীন্দ্র। কয়েকজন কর্মচারী মিলে করেছেন পুকুর ও হ্যাচারির চৌবাচ্চা পরিচর্যার কাজ।

একটি পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ শুরু করা যতীন্দ্রর হ্যাচারিতে এখন ২৫টি পুকুর রয়েছে। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের।

যতীন্দ্রের হ্যাচারিতে রুই, কাতল, মৃগেল, সরপুঁটি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, কার্ফু, কালিবাউশসহ দেশি-বিদেশী বিভিন্ন মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করা হয়।

স্থানীয়দের খামারিদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০ জন খামারি নিয়মিত এই হ্যাচারি থেকে মাছের পোনা ও রেণু সংগ্রহ করে থাকে।

তাই বছর শেষে ভাল লাভের মুখ দেখেন তিনি। করেছেন জমি ও বাড়ি। যতীন্দ্রের বয়স এখন বাষট্টি। মাছ চাষের পাশাপাশি সঙ্গীত ও যাত্রাশিল্পী হিসাবে সুনাম কুঁড়িয়েছেন। মাছ চাষে বেকার যুবকদের উদ্বুব্ধ করতে গান ও নাটিকা লিখেছেন।

স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ এগুলো বিভিন্ন সেমিনারে প্রচার করেন। ১৯৭৫ সালে তার গান শোনে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন জমিদার রুহিনী কান্ত লাহিড়ি চৌধুরী তাকে পৌর শহরের বাগানবাড়ি একখ- জমি উপহার দেন। সেই জমিতেই বাড়ি তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এখন এই মাছচাষি।

যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, ছোটবেলায় খাল-বিলে মাছ শিকার করার পাশাপাশি হ্যাচারিতে কাজ করতাম। সেখান থেকেই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখা। শুরুটা কঠিন হলেও পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছি। পেয়েছি জাতীয় পুরস্কার। মাছ ও গান আমার নেশা। এগুলো নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের সর্বশেষ যে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ ও রেণু উৎপাদন করতেন। আদর্শ এই মাছ চাষি জাতীয় মৎস্য পদক পেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি আরো ভালো কিছু করে সুনাম বয়ে আনবেন এটাই প্রত্যাশা।

(এস/এসপি/জুলাই ২৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test