E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাপ্তাইয়ে জুমের ধানে হাসি নেই চাষির মুখে

২০২৩ অক্টোবর ০৪ ১৮:৫৪:৪৭
কাপ্তাইয়ে জুমের ধানে হাসি নেই চাষির মুখে

রিপন মারমা, রাঙ্গামাটি : রাঙামাটি কাপ্তাই চিৎমরম ইউনিয়নের জামাই ছড়ি উঁচু  পাহাড়ে  সবুজ পাহাড় হলুদ হয়েছে জুমের পাকা ধানে। এতে খুশি হওয়ার কথা থাকলেও ফলন কম হওয়ায় হতাশ জুমিয়ারা (জুম চাষিরা)। পাহাড়ের ঢালুতে জুমে একসঙ্গে ধান, ভুট্টা, তিল, তিশি, কুমড়া, চিনাল (বাঙ্গি জাতীয়), মারফা,কলা (শসা জাতীয়) ও মরিচসহ কয়েক ধরনের ফসলের চাষ করে থাকেন জুমিয়ারা। তবে তাদের প্রধান ফসল হচ্ছে  ধান। এই জুম চাষ থেকে পাওয়া ফলন দিয়ে পুরো বছরের খাদ্য ও অর্থের যোগান দেন জুম চাষিরা।

এবারও পাহাড়ের চূড়ায় নানা ফসল রোপণ করেন তারা। কিন্তু এবার ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ফলন আশানুরূপ হয়নি বলে জানান জুমচাষিরা। ফলে জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল এই পাহাড়ি গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।

মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) সরেজমিনে চিৎমরম জামাই ছড়ি পাড়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় জুমচাষি রাগ্রাপ্রু মারমা সঙ্গে। তিনি জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ধান কাটা। কাটা ধান রাখা হয় ক্ষেতের পাশের জুমঘরে। সেখানে চলে মাড়াই। এরপর মাড়াই করা ধান শুকিয়ে নেওয়া হয় বসতঘরের আঙিনায়।

ফলন কেমন হলো জানতে চাইলে বিষাদ কণ্ঠে তিনি বলেন, গত বছর ২ হাঁড়ি (০৫ কেজি) ধানের বীজে জুম চাষ করে ১শ’ হাঁড়ি ধান পেয়েছিলাম। এ বছরও জামাই ছড়ি উঁচু পাহাড়ের ঢালুতে ০৩ কেজি ধানের বীজে আগাম জুম চাষ করি। কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুমে অপর্যাপ্ত বৃষ্টি ও বাতাস বেশি থাকায় ফলন তেমন ভালো হয়নি। গত বছর যেখানে ১শ’ হাঁড়ি ধান পেয়েছিলাম সেখানে এবার ৫০ হাঁড়ি ধান পাব কিনা সন্দেহ আছে।

এছাড়া জুমের ধানের সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয় মারফা (শসা জাতীয়), তিল, তিশি, শসা কুমড়া, ভুট্টা, বেগুন, কলা, টকপাতা, ধাণ্য মরিচসহ নানা ফলও সবজি। সেগুলোও পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু সেগুলোর ফলনও ভালো হয়নি। ফলে মূলধন ও আগামী বছর পরিবার নিয়ে খাদ্যাভাবের আশঙ্কা করছেন তিনি।

আরেক চাষি উচিংথোয়াই মারমা জানান, প্রায় ৬ হাঁড়ি বীজের ধান পাহাড়ি জমিতে জুম চাষ করেছেন। দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকের বেতনও বেড়েছে। আগে ধান কাটার জন্য ২ থেকে ৩শ’ টাকা দিয়ে শ্রমিক পাওয়া যেত। এখন জনপ্রতি ৫শ’ টাকা দিতে হয় শ্রমিকের বেতন। ফলন ভালো না হওয়ায় চিন্তিত তিনিও।

চিৎমরম ইউনিয়নের জামাই ছড়ি এলাকার বিধবা নারী জুমচাষী, পসুয়েথেই মারমা বলেন, ৪ হাঁড়ি ধানের বীজ জুম করেছেন তিনি নিয়মিত জুমচাষ করেন। কিন্তু এবার অনাবৃষ্টির কারণে জুমের ধানসহ অন্যান্য ফসল ভালোভাবে বেড়ে ওঠেনি। এতে আগামীতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন তিনি।

কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ বলেন, এবার কাপ্তাইয়ে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে।প্রথম পর্যায়ে আগাম জুমের আবাদ যারা করেছেন তারা অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়াতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে শেষে যারা আবাদ করেছেন তারা অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। এছাড়া সম্পূর্ণ জুম কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

(আরএম/এসপি/অক্টোবর ০৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test