E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আবদুলপুরে বছরে ২৫ কোটি টাকার সবজি চারা উৎপাদন 

২০২৩ অক্টোবর ২৯ ১৮:০০:০১
আবদুলপুরে বছরে ২৫ কোটি টাকার সবজি চারা উৎপাদন 

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যশোরের আব্দুলপুরে বছরে ২৫ কোটি টাকার সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। এই জেলা থেকেই দেশের চাহিদার সিংহভাগ সবজি সরবরাহ করা হয়। যে কারণে এই অঞ্চলকে সবজির জোনও বলা হয়ে থাকে। সবজি উৎপাদনের অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে চারা। সবজির চারা উৎপাদন ও বিপণন করেই বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আয় করছেন যশোর সদর উপজেলার আবদুলপুর গ্রামের চাষীরা। এই জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায়ও সরবরাহ করা হচ্ছে সবজি চারা। মানসম্মত সবজি চারা পাওয়ায় বিভিন্ন প্রান্তের চাষিরা ছুটে আসেন এখানে। সবজি উৎপাদনে যেমন সহায়ক ভূমিকা রাখছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও সাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা।

জানা যায়, যশোর সদর উপজেলার আবদুলপুর গ্রামে সাত হেক্টর জমিতে সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। দেড় শতাধিক কৃষক বীজতলায় চারা উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতি বছর বৈশাখ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত চলে বীজতলায় চারা উৎপাদনের হিড়িক। বিশেষ ব্যবস্থায় বীজতলা প্রস্তুত করে বাঁধাকপি ও ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, কাঁচা মরিচের বীজ বপন করেন কৃষকরা। এরপর ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করে। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতি হাজার চারা ৮শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

যশোরের ঝিকরগাছা, চৌগাছা, মণিরামপুর, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, নড়াইল, লোহাগড়া, সাতক্ষীরা জেলার কৃষক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা আবদুলপুর গ্রামের সবজি চারা ক্রয় করতে আসেন। প্রতি বছর প্রায় ২৫ কোটি টাকার চারা বিক্রি করেন এই গ্রামের কৃষকরা। বীজতলা পরিচর্যা ও বিপণনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন আরও ৪ শতাধিক পরিবার। তাদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে।

আবদুলপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন করেছি। এই জমিতে ৬ মাসে প্রায় ১৫ লাখ চারা উৎপাদন করেছি। যার বাজার মূল্য ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। দাম বেশি পাওয়ায় লাভবান হয়েছি। এখনো মৌসুম চলমান রয়েছে। আশা করছি আরও লাভ হবে।

আবদুলপুর গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ২৫ বছর ধরে সবজির চারা তৈরি করছি। উন্নত মানের বীজ থেকে চারা তৈরি করি। আশপাশের জেলার কৃষকরাও আমাদের কাছে চারা কিনতে আসেন। আমরা বাজার দর অনুযায়ী সবজি চারা বিক্রি করি। পুরো মৌসুমজুড়ে একই দামে বিক্রি হয় না। কখনো বাড়ে, কখনো কমে। বর্ষা দাম কমে, শুষ্ক মৌসুমে দাম বাড়ে। আমাদের ছয় মাসের ব্যবসা এটি। ভাল দাম পেলে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লাভ হয়। অনেক সময় লোকসানও হয়।

তরিকুল ইসলাম নামে এক চাষী বলেন, আবদুলপুরের কৃষকদের উৎপাদিত এসব কপির চারার মান ভালো অন্যদিকে দামও সাশ্রয়ী। যাচাই বাছাই করে ক্রয় করতে পারি। এই চারায় ফলনও ভাল হয়। এজন্য খরচ একটু বেশি হলেও এখানকার চারা কিনি।

বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের কৃষক শংকর মন্ডল বলেন, ১৮ বছর ধরে আবদুল গ্রামে উৎপাদিত সবচির চারা কিনি। এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত চারা কখনো ভেজাল পাইনি। তারা যা বলে সেটিই পায়। উন্নত জাতের চারা পাওয়া আমার মত অনেকে এখানে আসছে।
যশোর সদর উপজেলার আমদাবাদ গ্রামের কৃষক স্বপন ঘোষ বলেন, পাঁচ বছর ধরে আবদুলপুরের সবজির চারা ক্রয় করছি। এখানকার চারার মান ভাল হওয়ায় ফলনও ভাল হয়। এজন্য এখানেই আসি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের অতিরিক্ত উপপরিচালক প্রতাপ মন্ডল বলেন, যশোর জেলা সবজি উৎপাদনের উর্বর ক্ষেত্র। এখানে রবি মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এই সবজি উৎপাদনে ক্ষেত্রে চারা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। আবদুলপুর গ্রামে সাড়ে সাত হেক্টর জমিতে সবজির চারা উৎপাদন হচ্ছে। এখানকার চাষিরা বছরে অন্তত ৬ বার চার উৎপাদন করেন। এই চারা বিক্রিতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আয় করেন কৃষকরা। দেড় শতাধিক কৃষক সরাসরি সবজি চারা উৎপাদনে জড়িত। কৃষি বিভাগ সব ধরণের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করে আসছে। কৃষি বিভাগ চারা বিপণনের বাজার তৈরিতেও সহায়তা করেছে।

(এসএ/এসপি/অক্টোবর ২৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test