E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমনের ফলন কম হওয়ায় কৃষকের আহাজারি

২০২৩ ডিসেম্বর ১১ ১৫:৫৩:০২
আমনের ফলন কম হওয়ায় কৃষকের আহাজারি

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের কৃষক আসলাম মিয়া এবার আট বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলেন। ধান চাষে তার ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি ৮ বিঘা জমিতে ধান পেয়েছেন মাত্র ১০৪ মন।

গত বছর এই মৌসুমে সমপরিমাণ জমিতে তার আমন ধান হয়েছিল ২২০ মন। আসলাম মিয়ার মতো জেলার শত শত কৃষকের এবার মাথায় হাত উঠেছে। সার কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি, বৃষ্টির স্বল্পতা ও কারেন্ট পোকার আক্রমনে ফলনে ধ্বস নেমেছে বলে বেশির ভাগ কৃষক মনে করেন। জীবনা গ্রামের কৃষক আইয়ুব হোসেন জানান, বংকিরা মাঠে তার এবার আমনের আবাদ ছিল। কিন্তু গড়ে ফলন হয়েছে বিঘায় ১৪ মন করে। এতে উৎপাদন খরচ ওঠেনি।

বংকিরা গ্রামের কৃষক বাবুল বিশ্বাস জানান, এক বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে সর্বনিম্ন ব্যায় হয়েছে ১৩ হাজার ১০০ টাকা। এরমধ্যে জমি চাষ ১৫০০ টাকা, ধান লাগানো ১৫০০ টাকা, সার, কীটনাশক ও নিড়ানো ব্যায় ৫ হাজার টাকা, ধান কাটা বিঘা প্রতি ২৫০০ টাকা ও ধান ঝাড়া ১৫০০ টাকা করে ব্যায় হয়। ধান চাষ করতে গিয়ে অনেক কৃষক এনজিও থেকে ঋন নিয়েছেন। ফলন ভালো না হওয়ায় এখন জমি বন্ধক রেখে সার-কীটনাশকের দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে বলে ওই কৃষক জানান।

জীবনা গ্রামের জিয়াউর রহমান বদরগঞ্জ বাজারে ধানের ব্যবসা করেন। তিনি জানান, শনিবার হাটে ৫১ জাতের ধান প্রতি মন বিক্রি হয়েছে ১১০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ বাশমতি ধান বিক্রি হয়েছে প্রতি মন ১৪৮০ টাকা মন। ধান ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জানান, ধানের ফলন কম হওয়ায় ঘরে ঘরে কৃষকের আহাজারী উঠেছে। আমন আবাদে কৃষকরা পথে বসেছে।

বংকিরা গ্রামের কৃষানী লিলিমা খাতুন জানান, এক বিঘা জমিতে এবার তার ধান হয়েছে মাত্র ৯ মন। এই হতাশাজনক ফলনে তার উৎপাদন খরচই ওঠেনি। একই কথা জানান হাজরা গ্রামের আব্দুল মালেক। রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, তিনি দুইবার জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও কারেন্ট পোকার আক্রমন ঠেকাতে পারেনি। ফলে বিঘায় তার ১১ মন করে ধান হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন বাজারে যে কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে তাতে ভেজাল রয়েছে। এ কারণে এবার ধানের কারেন্ট পোকা দমন করা যায়নি।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃসিবিদ আজগর আলী জানান, গেল আমন মৌসুমে জেলায় এক লাখ চার হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ। আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও পুরণ হয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষকের কাছ থেকে সরকার ১২০০ টাকা মন ধান কিনছে। বাজারে ধানের দাম কম হলে কৃষকরা এ্যাপস ব্যবহার করে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারবে। ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও শৈলকূপা উপজেলায় এ্যাপস চালু করা হয়েছে।

ধানের কারেন্ট পোকার আক্রমন নিয়ে তিনি বলেন, বেশির ভাগ কৃষক কারেন্ট পোকা দমন পদ্ধতি জানেন না। ফলে এই পোকার হাত থেকে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করতে পারেনি।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ১১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test