E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশ্বরদীর বাজারে উঠেছে অপরিপক্ক লিচু, বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

২০২৪ মে ০৮ ১৪:২৯:১৭
ঈশ্বরদীর বাজারে উঠেছে অপরিপক্ক লিচু, বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : লিচুর রাজধানী বলে খ্যাত ঈশ্বরদীতে ওঠতে শুরু করেছে মধু মাসের রসালো ফল লিচু। টানা তীব্র দাবদাহে লিচু ঝরে যাচ্ছে, তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে পরিপক্ক হওয়ার আগেই লিচু বিক্রি করে দিচ্ছে বাগান মালিকরা। ফলে লিচুর আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তারা। নতুন ওঠায় দাম অনেক চড়া। প্রতি ১০০ পিস লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। তবে অপরিপক্ক লিচু না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকগণ। আর কৃষি বিভাগ বলছে লিচুর গুণগতমান ঠিক রাখার জন্য আরো কয়েকদিন পর লিচু সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঈশ্বরদীতে এবারে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ সব বাগানে, দেশী আঁটি লিচু (মোজাফ্ফর) বোম্বাই, চিলি বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে। লাভজনক হওয়ায় ঈশ্বরদীতে লিচুর আবাদ ক্রমশ: বাড়ছে। এখানকার লিচু রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের প্রায় সকল জেলায় চালান হয়।

ঈশ্বরদীর জয়নগরের শিমুলতলা লিচুর পাইকারি মোকাম। সোমবার ও মঙ্গলবার এ মোকামে সামান্য কিছু লিচুর আমদানি হয়। বাগান থেকেও সরাসরি বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে অপরিপক্ক দেশী লিচু ২,০০০-২,২০০ টাকা হাজার অর্থাৎ শতকরা ২০০-২২০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। শহরের বাজারে এই লিচু শতকরা ৩০০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে মোজ্জাফ্ফর জাতের (দেশি) লিচু অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড তাপপ্রবাহে কালচে হয়ে ফেটে যাচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে লিচু পাকার হলুদ ও লালচে রং ধারণের সঙ্গে সঙ্গেই লিচুর উপরের আবরণ কালচে হয়ে ফেটে যাচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর প্রতিটি লিচু গাছের প্রায় ৪০-৫০ ভাগ গুঁটি ঝরে গেছে।

কৃষিবিদরা জানান, ঈশ্বরদী সুমিষ্ট ও রসালো লিচুর জন্য বিখ্যাত। লিচু ২৮-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। প্রায় মাসাধিক সময় ধরে ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ৩৯-৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। ফলে লিচুর আকার ছোট হয়ে এবং সুমিষ্ট এ ফলের প্রাকৃতিক স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণেই পরিপক্ব হবার আগেই গাছ থেকে লিচু পেড়ে ফেলতে হচ্ছে। কারণ গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়ছে। গাছে লিচু ফেটে যাচ্ছে। তবে লিচুর আবাদে চাষিরা লোকসান গুনলেও লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

পরিপক্ক হবার আগেই লিচু বাজারে আসায় লিচুর স্বাদও কমছে বলে জানান ভোক্তারা। বাজারে লিচু কিনতে আসা আমজাদ হোসেন জানান, বাজারে নতুন ফল এসেছে। তাই বাড়ির ছেলে মেয়েদের জন্য কিনেছেন। যদিও স্বাদ কম। আরো কিছুদিন গাছে থাকলে লিচু পুষ্ট হতো স্বাদও পাওয়া যেতো।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লিচু চাষি আব্দুল জলিল বলেন, দেশি বা আঁটি জাতের অপরিপক্ক লিচু বাজারে উঠছে। প্রতি বছর মে মাসের ১০-১৫ তারিখের মধ্যে বাজারজাত হয়। অনাবৃষ্টির কারণে লিচু আকারে ছোট হয়ে গেছে। লিচু যখন পাকার উপযোগী হয় তখন কোনো অবস্থাতে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বেশি ধারণ করতে পারে না। রৌদ্রের তাপে গাছ থেকে লিচু একাই ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় পানি দিয়েও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা: আব্দুল বাতেন জানান, হাইপোগ্লাইসিন এ সাধারণত কাঁচা বা আধা পাকা অর্থাৎ পাকা নয়, এমন লিচুতে পাওয়া যায়। এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মারাত্মক বমি বমি ভাব সৃষ্টি করে। অন্যদিকে মিথাইলিন-সাইকো-প্রোপাইল-গ্নাইসিন উপাদানটি গ্রহণের ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত কমে যায়। এর কারণে বমি, অচেতন এবং দুর্বল হয়ে পড়ে রোগী। কাঁচা বা আধা পাকা লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সচেতনতাও বাড়াতে হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, লিচুর গুণগত মান ধরে রাখার জন্য আরও কয়েকদিন পর লিচু বাজারজাত করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। অপরিপক্ক লিচু খেলে ভোক্তারা লিচুর পুষ্টিমান পাবে না। লিচুর স্বাদ থেকেও বঞ্চিত হবে। এমনকি লিচুর যে ওজন হওয়ার কথা তাও হবে না। ##

(এসকেকে/এএস/মে ০৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test