E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাকা ধানের চর দখলে রশি টানাটানি

২০১৪ ডিসেম্বর ১৪ ১৭:৫৭:০৬
পাকা ধানের চর দখলে রশি টানাটানি

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ভোলা ও পটুয়াখালী পাশাপাশি দু’টি জেলা। দুই জেলার মানচিত্র সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে ভোলার চরফ্যাশন ও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার মধ্যে। মানচিত্র অনুযায়ি স্থাপন করা হয়েছে ৬৪টি পিলার। কিন্তু দখলবাজরা তাতে নিবৃত হতে পারেনি। প্রশাসনিকভাবে চিহ্নিত করা সীমানা এবং স্থাপিত পিলার মানছে না ভূমিদস্যুরা। উতোমধ্যেই তারা উপড়ে ফেলেছে সিমানা পিলারগুলো। অর্ধশত বছরের চেষ্টা আর শ্রমের ফসলে দুই জেলার বিরোধপূর্ণ সীমানা চিহ্নিত করে পিলার স্থাপন করা হলেও স্থায়ী বিরোধের  কোন অবসান হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে মিথ্যা মামলা আর কৃষক হয়রানী।

ভূমিদস্যুদের এই বেপরোয়া আচরণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চরফ্যাশনের মুজিবনগর ইউনিয়নের তিন চরের প্রায় ৩ হাজার কৃষক। উঠতি পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে তাদের দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ। পরিজন নিয়ে থাকতে হচ্ছে চরম আতংক আর উৎকন্ঠায়। চর এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানার ইউনিয়ন মুজিব নগর। তেতুলিয়া নদীর কারণে উপজেলা সদরের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই ইউনিয়নের চর মনোহর, চর লিউলিন ও চর মোতাহার মৌজার সঙ্গে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার উত্তর চর বিশ্বাস, চর বড় শিবা, চর কপালবেড়া এবং দশমিনা উপজেলার চর শাহজালাল ও চর বোরহান মৌজার সীমানা বিরোধ চলে আসছে যুগ যুগ ধরে ।

চরফ্যাশন এবং গলাচিপা অংশে বুড়া গৌরাঙ্গ নদীর পূর্ব পাড়কে আন্তঃজেলা সীমা রেখা হিসেবে প্রশাসনিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে চরফ্যাশন ও দশমিনা অংশে বুড়া গৌড়াঙ্গ নদীর অস্তিত্ব না থাকায় এ অংশে আরএস ম্যাপের লাইনকে সীমানা রেখা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

প্রশাসনিকভাবে এই সীমানা রেখা চিহ্নিত করার পর চলতি বছর ৯ জুন চরফ্যাশনের সঙ্গে গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলার সীমানা চিহ্নিত করে ৬৪টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। দুই জেলার তিন উপজেলার ভূমি প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে চরফ্যাশনের সঙ্গে গলাচিপা অংশে ৪৮টি এবং দশমিনা অংশে ১৬টি পিলার স্থাপন করেন।

কিন্তু সীমানা পিলার স্থাপন করে প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার পরই গলাচিপা ও দশমিনার ভূমি দস্যুরা সীমানা পিলারগুলো উপড়ে ফেলে দেয়। পটুয়াখালী অংশের ভূমিদস্যুদের দাবি, ১৯৪০-১৯৪২ সালের আরএস ম্যাপের লাইন অনুসরণ করে আন্ত:জেলা সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।

মুজিবনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল অদুদ মিয়া জানান, চরফ্যাশন ও গলাচিপার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়া গৌরাঙ্গ নদীকে আন্তঃজেলা সীমানা রেখা হিসাবে জরিপ বিভাগসহ প্রশাসনিকভাবে চিহ্নিত করা আছে। বুড়া গৌড়াঙ্গ নদীটি মরে যাওয়ায় (অস্তিত্ব না থাকায়) চরফ্যাশন ও দশমিনার মধ্যে আরএস ম্যাপের লাইন মেনে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সীমানা নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু পটুয়াখালীর দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার প্রভাবশালী কিছু ভূমিদস্যু মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত মানছে না। ওই সীমানা অমান্য করে চলতি মৌসুমের শুরুতে গলাচিপার ভূমিদস্যুরা মুজিবনগরে দুই দফা হামলা চালিয়েছে। এই অবস্থায় পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন ওই এলাকার কৃষক পরিবারগুলো।

গলাচিপার উত্তর চরবিশ্বাসের কৃষকদের দাবি, তারা ২০০০-২০০১ সালে পটুয়াখালীর ভূমি বিভাগ থেকে ওইসব জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। তাদের ভাষায়, চরফ্যাশনের চর মোতাহার, চর মনোহর ও চর লিউলিন মৌজার কৃষকরা ওই জমি জবরদখল করছেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুসারে বিরোধীয় জমি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সরেজমিনে আন্তঃজেলা সীমানার পরিমাপ শেষ করা হয়েছে। ওই সীমানা বুঝে নেওয়ার জন্য ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত চরফ্যাশন, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা ভূমি প্রশাসনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জরিপ বিভাগ কয়েক দফা পিলার স্থাপন করে। জরিপ বিভাগের স্থাপন করা সীমানা পিলারগুলো পটুয়াখালীর ভূমিদস্যুরা বারবার উপড়ে ফেলে।

চর মনোহরের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেছেন, গ্রামগুলোতে ধান রোপার মৌসুমেও হামলা হয়েছে। এখন পাকাধান কাটার সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে হুমকি-ধামকি বাড়ছে। স্থানীয় মেম্বর ফারুক হোসেন অভিযোগ করেন, সীমান্তবর্তী ধানের ক্ষেতে দশমিনার লাঠিয়ালবাহিনী সশস্ত্র মহড়া শুরু করেছে। তারা মারধর করছে কৃষকদের।

চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে বৈঠক করেছেন। ভূমিদস্যুদের হামলা ও ধান লুট এড়াতে বিরোধীয় এলাকায় (মুজিবনগরে) একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃত চাষিরা যাতে তাদের ধান কেটে নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা জানিয়েছেন, আন্ত:জেলা সীমানা বিরোধকে চিহ্নিত করে মীমাংসার জন্য কার্যক্রম চলছে। বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে শিগগিরই আন্ত:জেলা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রকৃত কৃষকরা যাতে ঘরে ধান তুলতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৪)


পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test