E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমন-বোরোর মাঝে ‘ফাও ফসল’ বারি-১৪ সরিষা

২০১৫ জানুয়ারি ১৪ ১৬:১৮:৫৬
আমন-বোরোর মাঝে ‘ফাও ফসল’ বারি-১৪ সরিষা

শেরপুর প্রতিনিধি : রোপা আমন ও বোরো আবাদের মধ্যবর্তী স্বল্পকালীন শেরপুরের শ্রীবরদীতে কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ। এটাকে কৃষকরা ‘ফাও ফসল’ হিসেবে বলে উল্লেখ করেছেন। উৎপাদন খরচ সমান হলেও দেশী জাতের চাইতে বারি-১৪ জাতের ফলন প্রায় তিনগুন বেশী। তাছাড়া এর সরিষা আবাদ করে একর প্রতি ১২/১৩ হাজার টাকা উৎপাদন খরচে বাদে মাত্র ৮৫ দিনে ৩৫/৪০ হাজার টাকার মতো লাভ পাওয়া যায়। অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন এ সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মাঠের পর মাঠ হলুদ রঙ ছড়াচ্ছে সরিষার আবাদ। কয়েক বছর যাবত কৃষকরা সরিষার ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার তুলনামূলক আবাদও হয়েছে বেশী জমিতে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও ফলন বেশী হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে উন্নত জাতের বারি-১৪ সরিষার আবাদ। রবি মৌসুমে বারি-১৪ সরিষার আবাদ কৃষকদের নিকট এখন নতুন আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব মতে, গত বছর শ্রীবরদীতে ৩২৫ হক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিলো। কৃষকদের আগ্রহের কারণে এবং বারি-১৪ সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার শ্রীবরদীতে সরিষার আবাদ হয়েছে ৭০০ হেক্টর জমিতে।

কৃষক ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলায় দেশী টড়ি জাতের সরিষার একর প্রতি ফলন পাওয়া যায় ৭/৮ মণ করে। আর বারি-১৪ জাতের সরিষার ফলন হয় একর প্রতি ২০/২২ মণ। এবারো তারা সরিষার গাছ ও ছেঁই দেখে আশা করছেন বিঘা প্রতি ২১/২২ মণ করে ফলন পাবেন। শালমারা গ্রামের কৃষক হাজী সেকান্দর আলী (৬২) বলেন, বারি-১৪ সরিষা চাষাবাদে তেমন পরিচর্যা করতে হয়না। সরিষার দানাগুলো খুব পুষ্ট হয় এবং এর চাহিদাও বেশী। অল্প খরচ, কম পরিশ্রম আর স্বল্প সময়ে আর্থিকভাবে এটা বেশ লাভজনক। তিনি বলেন, দুই বছর ধরে আমি কৃষি বিভাগের পরামর্শে বারি-১৪ সরিষা আবাদ করতাছি। ইবার পৌণে দুই একর জমিতে এ সরিষা লাগাইছি। গাছ যেভাবে বেড়েছে এবং যেভাবে ফলন ধরেছে, তাতে ইবার একর প্রতি ২৪/২৫ মণ করে ফলন হবে বলে আশা করতাছি।

জয়নাল আবেদীন (৬৫) নামে আরেক কৃষক বলেন, আমি এবার সোয়া এক একর জমিতে বারি-১৪ সরিষার আবাদ করছি। একরপ্রতি আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। ক্ষেতে যেভাবে ফলন দেখছি, তাতে উৎপাদিত সরিষার বিক্রী নামবে অন্তত: ৫০/৬০ হাজার টাকা। ক্ষেতের ফলন দেইখা এক পাইকার কয়দিন আগে এক হাজার ৬০০ মণ করে আগাম দাম দিতে চেয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষত ভাঙবো। এতে একরে প্রায় ৩৫/৪০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবো। কৃষক নিয়ামত আলী (৪৮) বলেন, বারি-১৪ সরিষা আমগর লাইগা একটা ‘ফাও ফসল’। রোপা আমন কাইট্টা আগে জমি পতিত থাকতো। পরে বোরো লাগানো অইতো। এহনতো আমনের পরে বারি-১৪ সরিষা কইরা বোরো করা যায়তাছে। কোনো সমস্যা নাই। এই সরিষা কইরা বোরো করলে সারও কম লাগে। সরিষার লাভের ট্যাকা দিয়াই বোরোর আবাদ করন যায়।

শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এফ এম মোবারক আলী বলেন, বারি-১৪ সরিষা বপনের মাত্র ৮৫ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারছেন বলে এটাকে কৃষকরা ‘ফাও ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। তিনি জানান, বারি-১৪ সরিষা গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পরে ক্ষেতে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে। এজন্য বারি-১৪ সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ অর্ধেক কম লাগে। তাছাড়া এর গাছগুলো লম্বা হওয়ায় এটি জ্বালানির জন্য ভালো লাকড়ি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আর্থিকভাবে লাভজনত হওয়ায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকেও আমন মৌসুমে স্বল্পমেয়াদী জাতের ধান চাষ করে উন্নত জাতের বারি-১৪ সরিষা আবাদের পর বোরো চাষের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ করা হচ্ছে।

(এইচবি/এএস/জানুয়ারি ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test