E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে পান চাষে ভাটা, আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ২২ ১৭:৪৪:৩৫
মাদারীপুরে পান চাষে ভাটা, আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে পান চাষে ভাটা পড়ায় জেলার ৫ হাজার পান চাষি পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দিন। প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, সময় মত অর্থ যোগান না পাওয়া, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ার কারণে জেলার পান উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে পান চাষিরা। অনেকে পান চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা ও ব্যবসায় চলে গেছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এক সময় মাদারীপুর জেলার পান এলাকার চাহিদা পূরণ করেও ঢাকা পাঠানো হতো। ঢাকা থেকে এ পানের একটি অংশ বিদেশে রফতানি করা হতো। এখনও এ পানের সুনাম রয়েছে।

শিবচর ও কালকিনি উপজেলার বেশ কয়েকজন পান চাষির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৭০‘এর দশকে জেলার প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে পান চাষ হতো।

এর মধ্যে কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি, রমজানপুর, ভুরঘাটা, রাজদী, পাঙ্গাসিয়া, খাঞ্জাপুর, গোপালপুর, ডাসার ও ঠেঙ্গামারা এলাকায় প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে এবং শিবচরের ৫ ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে পানের বরোজ ছিল।

‘৭০ এর দশক থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত জেলার পানের উৎপাদন ছিল আশানুরূপ। ’৯১ সাল থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত পান চাষে ভাটা পড়লেও ’৯৭ সাল থেকে পান চাষিরা পানের উৎপাদনে আবার আশার আলো দেখতে পায়। কিন্তু ’৯৮ সালের মহাপ্লাবনে তাদের সে আশা-আকাঙ্খা বানের পানিতে ভেসে যায়। মূলত তখন থেকেই তাদের জীবনে দূর্দিন নেমে আসে। তারা তাদের সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি আজো।

খোজ নিয়ে আরো জানা গেছে, পরবর্তীতে ’৯৯-২০০০ অর্থ বছরে তারা আবার আশায় বুক বেঁধে চাষ শুরু করেন। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পান চাষে মন্দাভাব নেমে আসে। ফলে প্রায় ৫ হাজার পান চাষি পরিবারের ২০ হাজারের মত পোষ্য অভাব-অনটনের মধ্যে পড়ে যায়। এক সময় এ পান চাষীরা তাদের উৎপাদিত পান বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করেছে।

নানা প্রতিকূলতা ও ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ সিডর তাদের জীবনের সকল স্বপ্ন-সাধ কেড়ে নেয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। সেই থেকে জেলার পান চাষিরা আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে পান চাষ করতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় উৎপাদিত পন্যের মূল্য কম হওয়ায় তারা লাভবান হতে পারছে না।

এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বাঁশ, পাটখড়ি, তার, লোহা, খৈল, কুটা ইত্যাদি উপকরণের মূল্য গত ৪ দশকে ২‘শত গুণ বেড়েছে। অথচ পানের দাম সে অনুপাতে বাড়েনি।

শিবচর উপজেলার উমেদপুর, কাঁচিকাটা, রামরায়ের কান্দি, উত্তর ও দক্ষিণ কাঁচিকাটা, শিবচর, বহেরাতলা চাঁন্দেরচর ও কালকিনি উপজেলার রাজদী ও ভূরঘাটার অনেক পান চাষি পান চাষ ছেড়ে দিয়ে ঐসব জমিতে হলুদ, মরিচ, বেগুন, মূলা, করলা, টমোটো, ধান, পাট, তিল, তিষি, সরিষা ইত্যাদি চাষ করতে বাধ্য হচ্ছে।

তবে মাদারীপুর সদর ও রাজৈর উপজেলায় পান চাষ তেমন একটা হয় না। যা হতো তাও নানা প্রতিকূতার কারণে অনেক চাষি পান চাষ ছেড়ে দিয়েছে।

কালকিনির এরফান খা’র চার বিঘা জমিতে পানের বরোজ ছিলো, তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পান একটি লাভজনক ফসল হলেও সমস্যা রয়েছে অনেক। তারা সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পায় না। এমন কি এসব দেখভালের জন্য কোনদিন তেমনভাবে এগিয়ে আসেনি।

শিবচরের আদর্শ পানচাষী কাদের ও মজিবর বলেন, সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা করলে জেলার পান চাষে চাষিরা আবার আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। কারণ পান চাষ লাভজনক বলেই বিগত দিনে বার বার ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে এবং নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও কৃষকরা পুনরায় পান চাষে ফিরে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে বহু চাষি পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

কালকিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নানা প্রতিকুলতায় এই উপজেলায় আগের চেয়ে অনেক কম পান চাষ হয়।

মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেলার কৃষকরা আগের মতো পান চাষ করেনা। তারা অল্প খরচে নানা ধরণের ফসল চাষ করতে দেখা যায়। তবে কেউ যদি পান চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে আমরা সব ধরণের সাহায্য করবো।

(এএসএ/এএস/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test