E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সবজিতে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না ঝিনাইদহের চাষীরা

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৩:২৬:৪৫
সবজিতে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না ঝিনাইদহের চাষীরা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের সবজি চাষীরা চাষে যথেষ্ট পরিমান উৎপন্ন করলেও এর ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। এই এলাকার চাষীরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় সবজির ফলন ভালো হচ্ছে।

জেলার মাঠে ফুলকপি, বাধাঁকপি, মূলা, লাউ, কুমড়া, শসা, খিরা, শিম, পটল, ঝিঙা, বেগুন, বরবটি, করলা, উচ্চে, শাক, টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন হয় প্রচুর পরিমানে। ঝিনাইদহ জেলার বারো বাজার, কালিগঞ্জ, হলিধানী, ডাকবাংলা, নগরবাথান, ভাটই, গাড়াগঞ্জ, চড়িয়ার বিল ও শেখপাড়া সবজির হাট হিসেবে বিষেশভাবে পরিচিত। এ সব হাট থেকে প্রতিদিন এক‘শ ট্রাক সবজি ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারের মোকামে যায়।এ সব সবজি রাজধানী বা ঝিনাইদহ শহরের খুচরা বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে এর তিন ভাগের একভাগ দামে পাইকারী বাজারে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় চাষীরা। সবজি বিক্রি করে কোন রকমে উৎপাদন খরচ উঠে আসছে বলে জানিয়েছেন এলাকার বেশ কয়েকজন সবজি চাষী। এলাকার হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে শহরের খুচরা বাজারে সবজির দাম চড়া হলেও পাইকারী হাটে চাষীরা সবজি বিক্রি করছেন পানির দামে। উৎপাদক ও বিশ্লেষকদের মতে, প্রক্রিয়াজাত করণের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই এলাকার চাষিরা কমদামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে গত খরিপ মৌসুমে জেলায় ৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ হয়। এতে উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৭৬ টন। রবি মৌসুমে আবাদ হয় ১০ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় এক লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৯ মেট্রিকটন সবজি। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জানান, এ জেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি প্রচুর পরিমানে উৎপাদন হয়ে থাকে। মৌসুমী বাজারে সবজির আমদানী বাড়লে পাইকারী-ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম কমিয়ে দেয়। ফলে কৃষকেরা কমদামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকেরা। সরকারী ভাবে এলাকায় সবজি প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকলে এ ক্ষতির হাত থেকে চাষিদের কিছুটা রক্ষা করা সম্ভব হতো।সবজি চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে নতুন সবজি ওঠার সময় দাম একটু বেশী পাওয়া গেলেও আমদানী বেশি হওয়ার সাথে সাথে দাম কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা সবজির পাইকারী হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টকা দরে, লাউ এর পাইকারী বাজারমূল্য ১০ টাকা প্রতিটি। অন্যদিকে শহরের খুচরা বাজার গুলোতে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ এবং ৩৫-৪০ টাকায় একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে। চাষীদের অভিযোগ দিন-রাত হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সবজি ফলিয়ে কোন রকমে খরচের টাকা তুলতে পারছেন তারা। মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দামে সবজি বিক্রি করে ব্যাপক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। হরিণাকুন্ডুর কুলবাড়িয়া গ্রামের সিরাজ মালিতা উদ্দিন ২২ কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে এসেছেন হাটে। ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন আড়তদার, ফড়িয়া ও ব্যাপারীরা এখানকার হাট নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যে দাম নির্ধারণ করে দেবে সেই দামেই আমাদের মাল বিক্রি করতে হবে। কৃষি উপকরণের দামের তুলনায় সবজির দাম কম। কাঁচা সবজি গাছে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বাধ্যহয়ে বিক্রি করে দিতে হয় । গোয়ালপাড়া সবজির বাজারে আসা চাষি বিশারত মিয়া জানান, তিনি এ বছর ২৭ শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন। প্রথমদিকে প্রতিটি লাউ বিক্রি করেছেন ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। এখন বিক্রি করছেন ১০ থেকে ১২ টাকা দরে। এ দামে লাউ বিক্রি করে কোন রকমে আবাদের খরচ ওঠছে বলে তিনি জানান।সাধুহাটি গ্রামের সবজি চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, ৬০ কেজি সিম নিয়ে বাজারে এসেছেন। তিনি ১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, জমি তৈরী, সার, কীটনাশক ও জন (শ্রমিক) এর দাম বাদ দিয়ে আর কিছু থাকে না। এ দামে সবজি বিক্রি করে আমাদের কোন লাভ হচ্ছে না। পুরুষ পরম্পরায় চাষ করে আসছে তাই করি। ঢাকার সবজি ব্যবসায়ী মখলেস মিয়া বলেন, চাষির কাছ থেকে যে দামে সবজি কেনা হয়, তার উপর খাজনা, লেবার খরচ, আড়তদারী ও পরিবহন খরচদিয়ে ঢাকায় পৌছাতে সবজির দাম দ্বিগুণেরও বেশি পড়ে যায়। এখানে একটি লাউ ১০ টাকায় কিনলে ঢাকার বাজারে আবার আড়তদারী দিয়ে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি না করলে লাভ হয়না।শেখপাড়া হাটে সবজি কিনতে আসা ফরিদপুরের ব্যবসায়ী মিনার হোসেন এবং ফরিদপুরের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, তারা প্রতি কেজি পটল ১২ টাকা, কাঁচামরিচ ৩০ টাকা, বেগুন ৩০টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা ও মূলা ১০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। হাটের খাজনা, আড়তদারী ও পরিবহন খরচ দিয়ে ঢাকা কিংবা বরিশালে পৌছাতে সবজির মূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর পরও তাদের লাভের প্রশ্ন থকে।ঝিনাইদহ শহরের নতুর হাটখোলায় বাজার করতে আসা আদিলুর রহমান জানান, কৃষক সবজি উৎপাদন করে যে দামে বিক্রি করে তারচেয়ে তিনগুণ বেশিদামে শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি মরিচ বর্তমানে চাষি বিক্রি করছেন ২৫ টাকায়। অথচ আমাদের কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। সাধারন ফড়িয়ারা ব্যবসায়ীরা বড় একটি অংশ লাভ নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উৎপাদনকারী, চাষী ও ভোক্তারা।
(জেআর/পিবি/ফেব্রুয়ারি ২৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test