E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাত ভাগের এক ভাগ চুক্তিতে ডাল তোলা

২০১৫ মার্চ ০৬ ১৮:৩৩:৫৬
সাত ভাগের এক ভাগ চুক্তিতে ডাল তোলা

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডাল তুলেও মুখে হাসি নেই মহিমা বেগমের। প্রায় ১১ ঘন্টা পরিশ্রম করার তার ভাগ্যে জুটেছে মাত্র আড়াই কেজি ডাল। যার বাজার মূল্য মাত্র ৫০ টাকা। সাত ভাগের এক ভাগ চুক্তিতে এ ডাল পেয়েছেন তিনি। হাতে কাজ নেই, তাই স্বামী আনোয়ার হোসেনের সাথে ডাল তুলতে এসেছেন তিনি। মাছ ধরা বন্ধ, বন্ধ রাস্তার মাটি কাটার কাজ। তাই তাদের মতো কলাপাড়ার প্রায় ছয় শতাধিক শ্রমিক এখন এই চুক্তিতে ডাল তুলতে নেমেছেন।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় প্রায় আটশ’ হেক্টর জমিতে ফেলন ডালের আবাদ হয়েছে। ক্ষেতে ডাল পেকে যাওয়ায় এখন চলছে পাকা ডাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

কলাপাড়ায় বালিয়াতলী, মিঠাগঞ্জ ও ধুলাসার ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় শতশত শ্রমিক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ক্ষেতের ফেলন ডাল সংগ্রহে। এদেরই একজন তিন সন্তানের জননী মহিমা বেগম। তিনি বলেন, আগে রাস্তায় মাডি কাটতাম। এ্যাহনতো মাডি কাডা বন্ধ। অন্য কাজও নাই। হেইয়ার লাইগ্যা ডাইল তুলি। আইজ আড়াই কেজি ডাইল পাইছি। এইয়া বেইচ্চা পঞ্চাশ টাহা পাইতে পারি। জানি এই টাহায় সংসার চলবে না। কিন্তু কাম নাই। তাই এইয়া ছাড়া উপায়ও নাই। তার মতো ক্ষেতে ডাল তুলছে, হেলেনা বেগম, আম্বিয়া খাতুন, জয়নব, জাহানারা, কোহিনুর ও আনোয়ার হোসেন।

১১ বছরের কিশোরী জয়নব। স্কুল খোলা কিন্তু স্কুলে না গিয়ে সে এখন ব্যস্ত ডাল সংগ্রহে। তার ভাষায়, ঘরে চাউল নাই। মোর তো আর আব্বা নাই। হেইয়ার লাইগ্যা মুই আর মা দুই ক্ষ্যাতে ডাইল তুলি। আইজ মুই দেড় কেজি ডাইল পাইছি। মায় পাইছে তিন কেজি। আরও ৩/৪ দিন মোরা ডাইল তুলমু। হেইয়ার পর স্কুলে যামু। এই সাত ভাগের একভাগ ডাল পেলেও খুশি শ্রমিকরা। কারণ তাদের বিকল্প আর কোন কাজ নেই এই মৌসুমে।

জমির মালিক ফরিদ উদ্দিন জানায়, প্রায় সাত একর জমিতে ফেলন ডাল হইছে। ওরা নিজ উদ্যোগেই ডাল তুলছে। প্রতিদিন যা তুলতে পারবে তার সাত ভাগের একভাগ পাবে। এভাবেই এবার ডাল তুলছে সবাই। এতে তারাও লাভবান হচ্ছে আর তারও ঝামেলা নেই।

একাধিক শ্রমিক জানায়, হরতাল-অবরোধে ঢাকায় কাজ করতে যেতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে এলাকায় কাজ করছেন। এখন যে অবস্থা এই ডাল তুলতে না পারলে তাদের না খেয়ে থাকতে হতো। কেননা মাছ ধরা বন্ধ। মাটি কাটার মেীসুমও শেষ। তাই ডাল সংগ্রহ করাই এখন ভরসা।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, এবার ফেলন ডালের ফলন ভালো হয়েছে। তকে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় তিনশ হেক্টর জমিতে কম উৎপাদন হয়েছে।

(এমকেআর/এএস/মার্চ ০৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test