E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নন্দীগ্রামে কৃষি জমিতে সূর্যের আলোয় পানি সেচ

২০১৫ মার্চ ১৮ ১৭:২২:৩১
নন্দীগ্রামে কৃষি জমিতে সূর্যের আলোয় পানি সেচ

নন্দীগ্রাম(বগুড়া) প্রতিনিধি : বিদ্যুতের সংযোগ নেই, লোডশেডিংয়ের ভয় নেই, ডিজেল ইঞ্জিনের ভটভট আওয়াজ নেই। নেই কোন বাড়তি খরচ। ডিজেলের জন্য অপেক্ষাও নয়।

অথচ সূর্যের আলোয় একরের পর একর জমিতে পানি সেচ কার্যক্রম চলছে। সবুজ ফসলে ভরে গেছে মাঠের পর মাঠ। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের বান্দিরপুকুর ও মুরাদপুর এলাকার কৃষি জমিতে চলছে সৌর সেচ পদ্ধতি বা সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম। সূর্যালোকের সাহায্যে ফসলি জমিতে এই সেচ ব্যবস্থা কৃষকদের জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলতার হাত থেকে বাঁচিয়েছে।

সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে ওই এলাকার কৃষকরা জমি চাষ করছেন। বান্দিরপুকুর ও মুরাদপুর এলাকায় চাষাবাদি জমিতে পানি সেচ কার্যক্রমে অল্প খরচে বিদ্যুত বাঁচিয়ে দুই বছর আগে স্থানীয় একটি উন্নয়ন সংস্থা ইলেক্ট্রো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের কারিগরি সহযোগীতায় জি,এইচ,ই,এল সোলার ইরিগেশন প্রজেক্ট-২ পাম্পিং সিস্টেম স্থাপন করে। একার্যক্রমে উপকৃত হচ্ছেন কয়েকশ’ কৃষক। ওই প্রকল্পের অনুকুলে প্রায় ৫০বিঘা জমি চাষের আওতায় নেয়া আছে। নির্মিত সোলার সিস্টেমে ৩২টি সোলার প্যানেল রয়েছে। সৌর শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে এই পাম্পের মাধ্যমে। আপাতদৃষ্টিতে প্রকল্পটি ব্যয়বহুল মনে হলেও কৃষকদের কাছে সৌর শক্তি ব্যবহার সহনশীল এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মুশিদুল হক জানান, সৌর বিদ্যুত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিত্বে কৃষকের আশা জুগিয়েছে। আধুনিক কৃষি পদ্ধতি চালু করে দেশে একটি সবুজ কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
সৌর বিদ্যুত প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, সোলার সিস্টেম একবার স্থাপন করে কোনো ধরনের খরচের ঝামেলা ছাড়াই ২০বছর টানা সার্ভিস দিয়ে যাবে। ব্যাটারি ছাড়া সরাসরি সূর্যের আলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন পানি দিয়ে যাচ্ছে এই সোলার সিস্টেম। সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি পরিবেশবান্ধব কৃষি কাজের সূচনা করা হলো। স্থায়িত্বশীল প্রাকৃতিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হিসেবে সোলার ইরিগেশন সিস্টেমের মাধ্যম সেচ দিলে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সাশ্রয় হবে। ডিজেল এবং বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে ও সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে কৃষি উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করতে হবে বলে এমনটি জানিয়েছেন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
বান্দিরপুকুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রায় ৫০বিঘা জমিতে সৌরবিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপের পানি দিয়ে ফসল ফলানো হচ্ছে। সময়মতো পর্যাপ্ত পানিপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা আর ডিজেল বা বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের চেয়ে পানি সেচ কাজে ব্যয় কম হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে এসেচ পাম্প ব্যবহারের আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষক নান্নু মিয়া ও নজরুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক মৌসূমে ডিজেল চালিত ‘স্যালো মেশিনে প্রতি বিঘা জমিতে সেচ বাবদ ২হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা ব্যয় করতে হতো। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে সময়মতো সেচ না দেওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতো কৃষকেরা। তবে সৌর বিদ্যুতের এই প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেচের কারণে প্রত্যেক মৌসুমে বিঘাপ্রতি জমিতে সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ১হাজার ৫শত টাকা থেকে ১হাজার ৭শত টাকা পর্যন্ত। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে চাষাবাদি জমিতে পানি সেচ কাজে খরচ কম হচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম তানসেন বলেন, এই সেচ ব্যবস্থা সরকারের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। কৃষকরা বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশবান্ধব এসেচ প্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্পখরচে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হবে। তিনি আরোও বলেন, দেশের জাতীয় সম্পদ বিদ্যুৎকে অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে। এতে দ্রুত দেশের উন্নয়ন হবে।

(এনআই/পিবি/মার্চ ১৮,২০১৫)






পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test