E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নালিতাবাড়ীতে বোরো ধানে শীষ মরা রোগ, দুশ্চিন্তায় কৃষক

২০১৫ এপ্রিল ১৮ ১৭:৪৮:১২
নালিতাবাড়ীতে বোরো ধানে শীষ মরা রোগ, দুশ্চিন্তায় কৃষক

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে চলতি বোরো আবাদে ধানের শীষ মারা রোগে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান ২৬ ও ব্রি-ধান ২৮ জাতের এ রোগের সংক্রমন বেশী হয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে এ রোগের সংক্রমন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

তারা বলেছেন, এটি ধানের ‘নেক ব্লাষ্ট’ রোগ। উপজেলার প্রায় ৫০/৬০ হেক্টর জমিতে এ রোগের লক্ষন দেখা দিয়েছে। তারমধ্যে মধ্যে প্রায় ১০ একর জমির ধান সম্পুর্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, মহামারী আকারে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। একেবারে ধান কাটার আগ মুহুর্তে শীষ মরা রোগের আক্রমণে কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই বোরো আবাদে এই রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্রি-ধান ২৬ ও ব্রি-ধান ২৮ জাতের এ রোগের সংক্রমন বেশী হয়েছে। তবে পোড়াগাঁও, রূপনারায়নকুড়া, নন্নী, কাকরকান্দি, সমেশ্চুড়া ইউনিয়ন এবং নালিতাবাড়ী পৌর এলাকার কিছু অংশের বোরো ধানক্ষেতে ‘নেক ব্লাস্ট’ রোগের সংক্রমন হয়েছে সবচেয়ে বেশী। পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস (৫০) বলেন, আমি ৮ একর জমিতে ব্রি-ধান ২৬ ও ২৮ জাত লাগিয়েছিলাম। এতে আমার পৌণে দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

এখন প্রায় ৬ একর জমির ধানের শীষ সম্পূর্ণরূপে মরে গেছে। তিনি বলেন, খুব চিন্তায় আছি। আমার এখন উৎপাদন খরচতো দূরের কথা, ধান কাটা ও মাড়াই খরচও উঠবে না। কৃষক নজরুল ইসলাম (৩২), ইমান আলী (৪৫) ও জয়নুন্দিন মিয়া (৪৩) বলেন, ধানের শীষ মরা রোগ প্রতিরোধের জন্য এমিষ্টার টম, জেলি ও ট্রুপার নামক ছত্রাক নাশক বোরো ক্ষেতে স্প্রে করেও কোন ফল পাইনি। ক্ষেতের সব ধান মরে গেছে। তারা বলেন, আমরা কৃষক মানুষ, আমাদের ইনকামের আর কোন পথ নাই। প্রকৃতি নির্ভর এই আবাদে আমরা বিরাট মাইর খাইছি। তারা জানান, হাতের টাকা খরচ করে বোরো ধান লাগিয়েছেন। কেউবা ঋন-ধার করে আবাদ করেছেন। পুরো আবাদই নষ্ট হওয়ায় এখন তাদের আর কোন উপায় নেই। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষীরা পড়েছেন মহাবিপাকে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবার উপজেলা ২১ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় ৫০/৬০ হেক্টর জমিতে নেক ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, এ বছর বোরো আবাদে নেক ব্লাস্টের আক্রমণ হতে পারে আবহাওয়ার তথ্য পর্যারোচনায় আমরা কৃষকদের আগে থেকেই সতর্ক করার চেষ্টা করেছি। এজন্য এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে আগাম সতর্কতামুলক ব্যবস্থা হিসেবে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রচারনা চালানো হয়েছিলো। কিন্তু কৃষকরা সেভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় ব্রি ধান-২৬ ও ব্রি ধান-২৮ জাতে বেশ কিছু এলাকায় এর সংক্রমণ দেখা দেয়।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মো. শরীফ ইকবাল বলেন, এ বছর বোরো আবাদের শেষের দিকে বেশি বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় কিছু কিছু এলাকায় নেক ব্লাাষ্ট বা শীষ মরা রোগ দেখা দিয়েছে। ঠিক মাত্রায় ছত্রাক নাশক ঔষধ স্প্রে করলে ধানের ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমরা ছুটির দিনও কাজ করছি। তাছাড়া এলাকায় গিয়ে ক্যাম্পেইন করে কৃষকদের সচেতন করছি। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। নেক ব্লাস্টে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

(এইচবি/এএস/এপ্রিল ১৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test