E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাটোরে আগাম বোরো ধান কাটার ধুম

২০১৫ এপ্রিল ২৫ ১৬:৪৮:৩০
নাটোরে আগাম বোরো ধান কাটার ধুম

নাটোর প্রতিনিধি : দফায় দফায় ঘূর্নিঝড় আর শিলাবৃষ্টির কারণে নাটোরে বোরো চাষীদের আগাম ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। ফলে তড়িঘড়ি করে ধান কাটতে গিয়ে শ্রমিক সংকট, শ্রমিক মজুরী বেশী এবং ধানের ফলন কম হওয়াসহ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করছেন কৃষকরা।

তবে আগাম ধান কাটায় ফলনের খুব একটা পার্থক্য হবে না এবং শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই এমন আভাস দিয়ে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে ফায় দফায় ঘূর্নিঝড় আর শিলাবৃষ্টির কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় উঠতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতেই কৃষকদের আগাম ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া ছাড়া অব্যাহত প্রাকৃতিক বির্পযয় থেকে কৃষকদের রক্ষা করা সম্ভব নয় বলেও জানানো হয়েছে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে চলনবিল ও হালতিবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলার ৭টি উপজেলায় ৫৭ হাজার ৩৩৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৫৭ হাজার ৪৯২ হেক্টর। গত বছরে জেলায় ৫৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। ধানের উৎপাদন হয় ২ লাখ ৭৪ হাজার ১১৬ মেট্রিক টন। এ বছর বোরোর আবাদ বিগত বছরের তুলনায় অনেকটাই ভাল হয়েছে। অনুকুল আবহাওয়ায় উৎপাদন ভালো হবে এমন আশা ছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু বৈশাখ মাস শুরু হওয়ার আগে থেকেই কয়েক দফায় জেলার বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে শিলা বৃষ্টি আর ঘূর্ণিঝড় হয়। এতে জেলার ৭টি উপজেলায় ১৭ হাজার ৬৯২ হেক্টর বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়। এদের মধ্যে ২ হাজার ২৯৫ হেক্টর ভুট্টা, ৫০ হেক্টর পিঁয়াজ কদম, ৭৬০ হেক্টর আম গাছ, ৩৮৯ হেক্টর কলা গাছ, ৯২ হেক্টর লিচু গাছ, ৬৫ হেক্টর সজিনা, ২১ হেক্টর পান বরজ, ২০ হেক্টর সবজি ক্ষেত ঝড়ে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আর যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য জমিতে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ধান পাকা থাকলেই তা কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে ফলনের খুব একটা পার্থক্য হবে না বলে জানান তারা। ফলে কৃষকরা তড়িঘড়ি করে ধান কাটা শুরু করেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকট, ফসল কাটতে শ্রমিকদের মজুরী বেশি লাগা ও ফলন কম হওয়া সহ নানা বিপত্তিতে ভুগতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, এই পরিস্থিতিতে ধানের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উৎপাদিত এসব ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষকদের বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
চলনবিলের কৃষক হাসেম আলী, আফছার মন্ডল, ফয়েজ উদ্দিন ও হালতির বিল এলাকার দীন মোহাম্মদ, আলাউদ্দিন মাষ্টার, সামাদ মন্ডল, নূরুল ইসলাম সহ অনেকে জানান, আগাম ধান কাটায় তাদের প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় দুই থেকে তিন মন করে ফলন কম হচ্ছে। তড়িঘড়ি করে ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের মজুরীও বেশী দিতে হচ্ছে। খাজুরা গ্রামের বড় চাষী সাদেক আলী জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই ধান কাটার কারনে ধানে চিটার পরিমান বেশি দেখা যাচ্ছে।
এদিকে সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার ডঃ সাইফুল আলম জানান, চলতি বছর ধানে বিঘা প্রতি জাত ভেদে গড়ে ২০ মন হারে.ফলন হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি বেশ কিছু এলাকায় ক্রপ কাটিং করে বিঘায় কাঁচা ধান ২৪ মন এবং শুকনো অবস্থায় ২২ মন হারে ধান উৎপাদনের হার নির্নয় করেছেন। বৃষ্টির পুর্বে ধানে ময়েশ্চার ২১ দশমিক ৯ ভাগ এবং ঝড় ও বৃষ্টির পরে ময়েশ্চার ২৪ ভাগ লক্ষ করা গেছে। এবছর ধানে চিটার মাত্রা শতকরা ৫ ভাগ বলে জানান তিনি।
এদিকে স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, এই পরিস্থিতিতে ধানের সঠিকমূল্য নির্ধারণ ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষকদের বাঁচাতে সরকার এগিয়ে আসতে হবে। তা না করা গেলে মরার ওপর খাঁয়ের অবস্থায় পড়তে হবে কৃষকদের।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডঃ আলহাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, শিলাবৃষ্টি এবং ঝড়ের কারণে ফসলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে আর যাতে বড় ধরণের কোন ক্ষতি না হয় সেদিক বিবেচনা করে কৃষকদের জমিতে অবস্থিত ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ পাকা ধান কেটে ফেলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে ফলনে বড় ধরণের তারতম্য হবে না। কৃষকদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি ।

(এমআর/পিবি/ এপ্রিল ২৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test