E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধানের বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

২০১৫ মে ০৮ ১৫:৩০:৩৫
ধানের বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : এ বছর শরীয়তপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তারপরেও উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, কৃষানের অভাবে পাকা ধান সময়মত তুলতে না পারা এবং ভরা মৌসুমে দেশের বাইরে থেকে চাল আমদানীর ফলে আড়ৎ ও মিল মালিকেরা ধান ক্রয় না করায় ক্রিমুখী সংকটে পরেছে শরীয়তপুরের অন্তত ১ লক্ষ ১০ হাজার বোরো ধান চাষি। কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্য পেতে উৎপাদন মৌসুমে প্রতিবেশী দেশ থেকে চাল আমদানী বন্ধ করে জরুরী ভিত্তিতে সরকারীভাবে ধান ক্রয় শুরু করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তুর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শরীয়তপুর জেলার ৬ উপজেলায় ২৯ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবছর বিগত সময়ের থেকে কৃষকের ইরি আবাদে বীজ, চাষ, পানি, সার, কীটনাশক, শ্রমিক ব্যয়সহ উৎপাদন খরচ অনেক বেশী হয়েছে। বাজারে সার বীজের দাম বেশী হওয়ায় এনজিও থেকে ঋণ আর দাদন ব্যবসায়ীদের থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে অনেক বর্গাচাষি কৃষক ধান আবাদ করেছিল। কিন্তু বাজারে ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেনা তারা। যেখানে প্রতি এক মন ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে সাড়ে ৫ শত থেকে ৬ শত টাকা সেখানে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৪ শত টাকায়। অপর দিকে ধান কর্তনের জন্য স্থানীয় শ্রমিক না পাওয়ায় খুলনা, সাতক্ষিরা, রাজবাড়ি ও জামালপুর জেলা থেকে উচ্চ মূল্যের পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শ্রমিক এনে ধান কাটাতে হচ্ছে কৃষকের।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা জানিয়েছেন, যে সময়ে সারা দেশ ব্যাপী কৃষকের পাকা ধান ঘরে তোলার সময় হয়েছে ঠিক সেই সময়েই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরকারী সহায়তায় প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বীনা শুল্কে কম দামের চাউল আমানী করে বাজার সয়লাব করে ফেলেছে। ফলে, দেশের বড় বড় মিলগুলি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ায় কৃষকের ধান বিক্রি হচ্ছেনা। ঋনের টাকা শোধ করতে তাই কৃষকরা স্থানীয় আড়ৎ বা ফড়িয়ার কাছে বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বিক্রি করছে। এভাবে ধানের বাজার পরে যাওয়ায় ত্রিশংকুল অবস্থায় পরতে হয়েছে জেলার লক্ষাধিক কৃষককে।



শরীয়তপুর সদর উপজেলার আটং, পাটানী গাঁও ও আটিপাড়া গ্রামের ধান চাষি আব্দুল হান্নান পেদা, মকবুল হোসেন, আব্দুল জলিল মোল্য, আব্দুল লতিফ বেপারী, নড়িয়া উপজেলার দুলুখন্ড, পাচক ও চান্দনী গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ শেখ, গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, হানিফা জমাদ্দার এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ছয়গাঁও, সিঙ্গাচুড়া ও লাকাত্রা গ্রামের জান শরীফ সরদার, অলি উল্লাহ আকনও সামাদ গাজী বলেন, আবাদের সময় অনেক বেশী খরচ হলেও গত কয়েক বছরের মধ্য এবার আমরা ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছি। কোন বালাই বা পোকার আক্রমন ছিলনা। আবহাওয়াও ছিল অনুকুলে। স্থানীয় শ্রমিক সংকট থাকার কারনে বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষাণ ভাড়া করে এনে আমাদের ধান কাটাতে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম নেই। মাত্র সাড়ে ৪ শত টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতিমন ধান। শুনেছি এই সময় সরকার বিদেশ থেকে চাউল আমদানি করছে,তাই কোন মহাজন বা মিলের মালিকরা ধান কিনছেনা। আমরা সরকারের কাছে ধানের ন্যায্য মূল্য দেয়ার জন্য জোর দাবি জানাই।

খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার ধান কাটা শ্রমিক নূর মোহাম্মদ কাজী ও রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার সানা মিয়া মোল্যা বলেন, আমরা এবছর শরীয়তপুরে কয়েকটি কৃষান দল এসেছি। প্রতি দলে ৬০ থেকে ৯০ জন করে শ্রমিক রয়েছে। আমরা জমির মালিকদের সাথে চুক্তিতে ধান কাটি। তাদের ৬ মন দিয়ে আমরা ১ মন নিয়ে থাকি। সারা দিন ধান কেটে রাতে তা বোঙ্গা মেশিনে মারাই করি। ২৫-২৮ দিন ধান কেটে প্রতিজনে আমরা ৪০/৫০ মন ধান নিয়ে বাড়ি ফিরবো ইনশআল্লাহ।

জেলা সদরের আঙ্গারিয়া বাজারের চাউল ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার ও নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বন্দরের আড়ৎ মালিক শ্যামল কুমার পাল বলেন, প্রতি বছর এই সময় আমাদের আড়তে হাজার হাজার বস্তা ধান ক্রয় করে সে ধান মোকামে ও বিভিন্ন মিলে বিক্রি করি। এবছর প্রতিবেশী দেশ থেকে সস্তায় চাউল আমদানি করার কারনে দেশে মিল কারখানা বন্ধ রয়েছে এবং এই কারনে ধানের দাম কম। তারা বলেন, কৃষক বাঁচাতে হলে এই উৎপাদন মৌসুমে বাইরের চাউল আমদানি বন্ধ করে ধানের দাম বাড়াতে হবে।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, শরীয়তপুর জেলায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদন খরচের সাথে বাজার মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় কৃষক বিপাকে পরেছে। তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে সরকারীভাবে ন্যায্য মুল্যে ধান সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করে সরকারকে কৃষকের পাশে দাড়াতে হবে এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে চাউল আমদানি শিথিল করতে হবে।

(কেএনআই/এএস/মে ০৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test