E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বল্প সময়ে ফলন বেশি ব্রি-৫৮ ধান

২০১৫ মে ১৪ ১৫:০৭:০৭
স্বল্প সময়ে ফলন বেশি ব্রি-৫৮ ধান

নাটোর প্রতিনিধি : ধান দেখতে অনেকটা খাটো, চিকন ও সরু। সহজে এই ধান হেলে পড়ে না, রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেক কম। এই ধানের জীবনকাল কম, পাতার রঙ গাঢ় সবুজ, ডিগপাতা খাড়া; কাণ্ড, পাতা ও শীষ খুবই শক্ত। পরিপক্ক অবস্থায় ঝড়ো বাতাসেও ধানের শীষ ঝরে পড়ে না। পাকা ধানের রঙ স্বাভাবিক সোনালি রঙের। উৎপাদন খরচ কম, ফলনও বেশ ভাল। অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করলে অন্য জাতের ধানের তুলনায় অন্তত ১০দিন আগেই ধান ঘরে তোলা সম্ভব।

কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হলুদঘর গ্রামের বোরো চাষী লুৎফর রহমান। তিনি জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ১৪ বিঘা জমিতে ব্রি-২৯, ব্রি-১৪সহ বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন। তবে এবছর পরীক্ষা মুলকভাবে কৃষি বিভাগের সরবরাহকৃত ব্রি-৫৮ জাতের ৪ কেজি বীজ নিয়ে পৌনে দুই বিঘা জমি চাষ করেছেন। শুরু থেকেই এ ধানের অবস্থা ভাল ছিল। গত কয়েক দফা ঝড় আর শিলা বৃষ্টি হলেও জমিতে থাকা ৮০ ভাগ পাকা ধান কিছুই হয়নি। গত বুধবার কৃষি বিভাগের নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নীলিমা জাহান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহফুরুর রহমান ও সাইদুর রহমানের উপস্থিতিতে তিনি ধান কেটেছেন।

বিঘা প্রতি ভিজা ৩২ মন আর শুকনো ২৮ মন হারে এই ধানের ফলন হয়েছে। হলুদঘর মাঠে অন্য জাতের ধান কাটতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। তবে হালতি বিলে বোরো ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ হয়েছে। সেখানে জাত ভেদে বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৫ মন হারে উৎপাদন হয়েছে। ব্রি-৫৮ জাতের ধান অন্য ধানের তুলনায় কমপক্ষে বিঘা প্রতি ৪ থেকে ৫ মন বেশি উৎপাদন হবে। আগামীতে অধিক পরিমান জমিতে এই জাতের ধান চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য তিনি বীজ সংরক্ষণ করছেন। একই সুরে কথা বললেন, সিংড়া এলাকার কৃষক মুসলেম উদ্দিন ও বড়াইগ্রামের কৃষক সালা উদ্দিন। তারাও এই জাতের ধান চাষ করে সফল হয়েছেন। বিঘা প্রতি তাদের শুকনো অবস্থায় ২৮ থেকে ৩০ মন পর্যন্ত ফলন হয়েছে। আগামীতে ব্রি-৫৮ জাতের ধান নিয়ে আশাবাদী।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বৈরী আবহাওয়াসহিষ্ণু জাতের ধান ব্রি-৫৮ মাঠ পর্যায়ে সফলভাবে চাষ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই জাতের ধান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সিংড়ায় ১১০ হেক্টর ও বড়াইগ্রাম এবং নলডাঙ্গা মিলে ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক স্বপ্নের এ ধান চাষ করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে। টানা কয়েকদিনে বর্ষণ আর দফায় দফায় ঝড় আর শিলা বৃষ্টিও এ ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। অথচ পাশে লাগানো অন্য জাতের ধানগুলো কাদামাটির সঙ্গে লেপ্টে হলদে, বিবর্ণ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। প্রকৃতির সাথে লড়াই করার পরও এ জাতের ধান ফলন দেবে তুলনামূলক বেশি দাবী কৃষি বিভাগের।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নীলিমা জাহান জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন এ ধান উদ্ভাবন করেছে। ২০১২ সালে জাতটি উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। আগামী বোরো মৌসুমে নতুন জাতের এ ধান বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। জিন বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমের পাটের জন্মরহস্য উন্মোচনের পর কৃষি উদ্ভাবনে এটি হচ্ছে বাংলাদেশের আরেকটি নতুন চমক। এই ধানের জীবনকাল ১৫০ থেকে ১৫৫ দিন। অন্য ধানের আগেই এই ধান কাটা যায় এবং ফলনও বেশ ভাল। দেখতে সরু, চিকন ও ভাত দেখতে সাদা ঝরঝরে এবং খেতে খুব সুস্বাদু ।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বিঘায় যদি ৪ থেকে ৫ মন ধান বেশি উৎপাদন হয়, তাহলে এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে প্রায় ৫ টন হবে। যা চালে হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ৫ টন পাওয়া যাবে। যা খাদ্য চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে দেশ স্বাবলম্বি হবে, দেশ এগিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে দেশের বৃহত্তম চলনবিল ও হালতিবিলে গত কয়েক বছর ধরে বোরো চাষ সঠিক সময়ে হচ্ছে না। অনেক সময় কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে চাষ মৌসুমের নির্ধারিত সময় থেকে বোরো চাষ প্রায় ২০দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত বিলম্বিত হয়। ফলে কৃষকদের বীজতলার বয়স্ক চারা রোপণ করতে হয়। আবার অনেক সময় কৃষকের দ্বিতীয়বার চারা রোপণে অর্থ ও শ্রম যেমন ব্যয় হয়, তেমনি দেরিতে রোপণে ফলনও কম হয়। অনেক কৃষক চারার অভাবে কিংবা আর্থিক সংকটে পড়ে চারা রোপণ করতে পারেন না। ফলে তাদের জমি পতিত থেকে যায় কিংবা অন্য ফসল চাষ করতে হয়। অন্যদিকে মৌসুমের মাঝ সময়ে এসে পানির স্তর নিচে নেমে গেলে সেচ বেশি দিতে হয়। এতে সময় বেশি লাগে, খরচও বেশি লাগে। এছাড়া প্রতি বছর সরকারের বিরাট অঙ্কের টাকা কৃষি পুনর্বাসনে খরচ হয়ে থাকে। এজন্য উচ্চফলনশীল ও স্বল্প জীবনকালীন ব্রি-৫৮ ধানের জাত এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হবে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডঃ আলহাজ্ব উদ্দিন জানান, ব্রি-৫৮ জাতের ধানের ফলন সন্তোষজনক। অন্য জাতের চেয়ে তুলনা মুলক বেশি উৎপাদন হয়। মাঠে কৃষকরা এই ফলনে খুশি। আগামী বছর বানিজ্যিক ভাবে ব্রি-৫৮ জাতের ধান উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে।
(এমআর/পিবি/মে ১৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test