E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরায় তীব্র দাবাদহে মারা যাচ্ছে পাটগাছ , হতাশায় কৃষক

২০১৫ জুন ১০ ১৬:১৩:৪৯
মাগুরায় তীব্র দাবাদহে মারা যাচ্ছে পাটগাছ , হতাশায় কৃষক

মাগুরা প্রতিনিধি :  স্মরনকালের তীব্র দাবাদহে সৃষ্ট দীর্ঘ খরায় মাগুরা জেলার সকল উপজেলার  মাঠের পাটগাছ শুকিয়ে  যাচ্ছে। পাটগাছের মাথা তামাটে রং ধারন করে কুঁকড়ে যাচ্ছে। দেখলে মনে হয় আগুনে পুড়ে গেছে। পাটক্ষেতে মাকড়ের আক্রমণ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সদর ও তিন উপজেলায় এ মৌসুমে পাটের উৎপাদন মারাত্নক হ্রাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ এলাকার কৃষকেরা। দীর্ঘ খরায় ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাটগাছ। পাট ক্ষেতের বাড়ন্ত গাছগুলোতে প্রচন্ড রোদে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এতে পাট গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে। দেখলে মনে হয় কেউ যেন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে মাঠের পর মাঠ পাটক্ষেত । যে কারণে কাটার উপযোগী না হলেও কৃষকরা বাধ্য হয়েই পাট গাছ কেটে প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্য ফসল চাষের। এতে করে চলতি পাট মৌসুমে স্থানীয় কৃষকরা পাট চাষের সুফল থেকে যেমন বঞ্চিত হবেন। তেমনি পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার চারটি উপজেলায় এবার ৩২ হাজার ৭৭২ হেক্টরে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাদ হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৯০ হেক্টরে। এর মধ্যে সদরে ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর, মহম্মদপুরে ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর, শালিখায় ৪ হাজার হেক্টর ও শ্রীপুর উপজেলায় ৯ হাজার ৯০ হেক্টরে পাটের আবাদ হয়েছে।
প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৩ বেল ( এক বেল = ৫ মণ) পাট উৎপাদন হয়। সে হিসেবে জেলায় এবার ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭০ বেল পাটের উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত গ্রামের প্রায় সব মাঠের পাটের পাতা তীব্র খরায় বিবর্ণ হয়ে গেছে। গাছের পাতা শক্ত ও বাদামি ও গাছের কান্ড আঁকাবাকা হয়ে যাচ্ছে। খরায় পাটক্ষেতে মাকড়ের আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় গাছের মাথা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের পাটগাছ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামি সাত দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে সমস্ত পাটগাছই নষ্ট হয়ে যাবে বলে কৃষকেরা জানান।
সদর কৃষক কবির হোসেন জানান, রোদে পাতা পুড়ে যাওয়ায় গাছগুলো লিকলিকে হয়ে গাছের বৃদ্ধি কমে গেছে। পানির অভাবে গাছ মরে যাচ্ছে। সেচ দিলেও খরায় মাটি পানি ধরে রাখতে পারছে না।
মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের পাটচাষী লিয়াকত হোসেন বলেন, গত বছর ৩ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলাম। এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছি। কিন্তু এমন বিপযর্য়ের মধ্যে অতীতে কখনো পড়িনি। পাটে দাম না থাকায় তিনি পাটে সেচ দিচ্ছেন না বলে জানান।
শ্রীপুরের কাজলী গ্রামের আবীর হোসেন বলেন, সাধারণত প্রতি একরে ২৫-৩০ মণ পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। খরায় পাটগাছের উচ্চতা বাড়ছে না। যেসব গাছের উচ্চতা তিনফুটের কম সেগুলোর আর ফলন হবে না। গাছ ছোট বড় হওয়ায় পাটের উৎপাদন ৩০থেকে ৪০ভাগ কমে যাবে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে পাট লাগানো, নিড়ানিসহ সার ওষুদের দামই উঠবে না। যে কারণে বাধ্য হয়েই পাট কেটে ধান লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।

শালিখার বুনাগাতি পাটচাষী মোস্তাাফিজুর রহমান। তিনি এবার ২ একর জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। আশা ছিল ৮০ মন পাট পাবেন। কিন্তু ক্ষেতের যে অবস্থা তাতে ৪০ মন পাট পাবেন কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন হাজরাহাটি গ্রামের পাট চাষি সরোয়ার হোসেন, আইয়ূব বিশ্বাস সহ আরো অনেকে। তাদের জমির ৬০ভাগ পাটগাছ রোদে পুড়ে গেছে। বৃষ্টির আশায় সেচ দেন নি বলে তারা জানান।
মহম্মদপুর সদরের পাটচাষী অলতাফ হোসেন বলেন, এ এলাকার প্রধান ফসল পাট। বাজারদও যাই থাক না কেন তাদেও পাট আবাদ না করে উপায় নেই। তাই পাটকে ঘিরেই তাদেও সব স্বপ্ন ।
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা, অসীম কুমার সাহা বলেন, প্রচন্ড খরায় পাট ক্ষেতে মাকড়ের আক্রমন হয়ে থাকে । বৃষ্টি হলে প্রাকৃতিক নিয়মেই এই রোগ দমন হয়ে যায়।এবার খরা দীর্ঘ হওয়ায় এর বিস্তার মারাত্নক পর্যায়ে পৌছেছে। এ থেকে প্রতিকারের জন্য প্রতি দশ শতাংশ জমিতে ৭০গ্রাম থিয়োভিট দশ লিটার পানিতে গুলিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, ‘মাগুরা পাট প্রধান এলাকা। পাটের দামের উপর কৃষকদের অর্তনৈতিক স্বচ্ছলতা অনেকাংশেই নির্ভরশীল। আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকেরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। দ্রুত বৃষ্টি হলে কৃষক এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।’
(ডিসি/পিবি/জুন ১০,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test