E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে আমন চাষ ব্যাহতের আশঙ্কা

২০১৫ জুলাই ২৪ ১৫:৫৬:৩১
বাগেরহাটে আমন চাষ ব্যাহতের আশঙ্কা

বাগেরহাট প্রতিনিধি :বাগেরহাটের শরণখোলায় এবছর আমন চাষে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিপাতের ফলে চাষের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় জমি চাষাবাদ শুরু করতে পারছেননা কৃষকরা। মৌসুমের প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও এ উপজেলার কোনো চাষী-ই এখন পর্যন্ত আমনের বীজতলা তৈরী করতে পারেননি।

দ্রুত আবাদী জমির পানি নিষ্কাশন করা না হলে এবছর উপজলার সর্বত্রই আমনের চারা সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে। একারণে আমন চাষও ব্যাহত হবে মারাত্মকভাবে। এর ফলে, দেখা দিতে পারে চরম খাদ্য সংকট। এমন আশঙ্কায় উপজেলার প্রায় ১২ হাজার চাষীর মধ্যে চরম হাহাকার শুরু হয়েছে। সর্ব¯তরের মানুষ পড়েছেন উৎকন্ঠায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এপর্যন্ত চাষীরা তিন দফা বীজতলা তৈরীর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। জষ্ঠ্যি মাসের শেষের দিকে প্রথম ধাপে চাষীরা জমিতে অঙ্কুরিত বীজ ছিটানোর পর পরই বৃষ্টি শুরু হয়। দীর্ঘদিন পানির নিয়ে থাকায় সেই বীজ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। পরে একটু খরা দিলে আবার আশায় বুক বেধে তারা জমিতে বীজ ফেলেন। এভাবে তিন দফাই তাদের চেষ্টা ব্যাহত হয়। এখন কোনো চাষীর ঘরেই আর অবশিষ্ট বীজ ধান নেই। সরেজমিন ঘুরে জলাবদ্ধতার এমন ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। জমিতে কোমর সমান পানি জমে আছে। থৈ থৈ করছে মাঠের পর মাঠ। কৃষকের মুখে হাসি নেই। অনেকে বীজ জাগ দিয়ে রেখেছেন কিন্তু জমিতে ফেলতে পারছেন না। বীজের অঙ্কুর নষ্ট হয়ে অকেজো হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বান্দাঘাটা এলাকার প্রধান স্লুইস গেটটি-ই এখন কৃষকদের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই গেট থেকে পানি না নামার কারণে জমিতে জলাদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তাদের ইচ্ছেমতো গেট থেকে পানি ওঠানামা করিয়ে সেখানে মাছ ধরে থাকেন। একারণে কৃষকদের প্রয়োজনে তা ব্যবহার হচ্ছেনা। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়ি বাধে ছোটবড় ২০টি স্লুইস গেট রয়েছে। এই গেটগুলো রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পাউবোর কোনো কর্মী এখানে নিয়োজিত না থাকায় গেটগুলো সঠিকভাবে রক্ষানাবেক্ষণ করা হয়না। ফলে ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রধান ওই গেট থেকে নিয়মিত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলে এখনও যে সময় আছে তাতে বাজার থেকে বীজ কিনে তা থেকে বীজতলা তৈরী করা সম্ভব। সঠিকভাবে পানি উঠানামা করতে পারলে সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন চাষীরা।

উপজেলার আমড়াগাছিয়া এলাকার চাষী মিলন গোলা (৩৫) জানান, তিনি এবার তিন একর জমিতে আমন চাষ করবেন। চার মন ধানের বীজ তলা তৈরীর জন্য বীজ ধান ভিজিয়ে জাগ দিয়ে রাখেন। কিন্তু সময় মতো বীজ মাঠে ফেলতে না পারায় তা সবই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর তার ঘরে কোনো বীজ ধান নেই। দু-একদিনের মধ্যে জমির পানি না সরলে বীজতলা তৈরীর সময়ও থাকবেনা। পূর্ব আমড়াগাছিয়া গ্রামের অমূল্য মন্ডল (৬০) জানান, তার ১২ একর জমির ১০ মন ধানের বীজতলা দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকায় তা পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। বাধাল গ্রামের খোকন হাওলাদার (৫০), মঠেরপাড় গ্রামের নাছির খলিফাসহ অনেকই তাদের এই দুর্দশার কথা জানান। খাদা গ্রামের ফুল মিয়া আকন ও আ. কাদের আকন মাঠে চারা তৈরী করতে না পেরে তাদের বসত বাড়ীর আঙিনার সবজী ক্ষেত নষ্ট করে সেখানে বীজ তলা তৈরী করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বলেন, সকল ব্লক সুপারভাইজাদের উপজেলার হাটবাজারগুলোতে হাট সভা ও বাড়িতে বাড়িতে উঠান বৈঠক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা এই সভা ও বৈঠকের মাধমে কৃষকদেরকে বাড়ির আঙিনায়, স্কুল মাঠে ও উচু ভিটায় বীজতলা তৈরীর পরামর্শ দিচ্ছেন। এভাবে বীজতলা তৈরী করতে পারলে এবং মাঠের পানি দ্রুত অপসারণ করা গেলে সংকট অনেকটা কেটে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ অতুল মন্ডল জানান, এলাকার অবস্থা ভয়াবহ। জলাবদ্ধতা নিরশনের জন্য সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। কৃষকদের দুর্দশার কথা জেলা মিটিংয়েও বলা হয়েছে। কিন্তু গেট পরিচালনার কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হয়নি। এক শ্রেণির লোক গেট তাদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে মাছ শিকার করে। বহুবার বলা হলেও তারা ফিরছেনা। এখন
মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈনউদ্দিন জানান, তাদের জনবল সংকটের কারণে সব সময় সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব হয়না। আমন মৌসুমে যাতে ফসলি জমির পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা যায় সে ব্যবস্থা করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ গেটগুলোয় সার্বক্ষণিক লোক নিয়োজিত থাকবে।


(একে/এসসি/জুলাই২৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test