E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অজ্ঞাত রোগে বিবর্ণ হয়ে পড়ছে বিস্তীর্ণ আমন ক্ষেত

২০১৫ অক্টোবর ০৯ ১৭:৩৮:৫১
অজ্ঞাত রোগে বিবর্ণ হয়ে পড়ছে বিস্তীর্ণ আমন ক্ষেত

দিনাজপুর প্রতিনিধি : ধানের জেলা দিনাজপুর অঞ্চলের আমন ক্ষেতে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে অজ্ঞাত রোগ। এই রোগে বিস্তীর্ণ সবুজ আমন ক্ষেত শুকিয়ে হয়ে পড়ছে বিবর্ণ।

শীষ বের হওয়ার প্রাক্কালে ধান ক্ষেতের এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেও ফল না পাওয়ায় আমনের ফলন নিয়ে শংকায় পড়েছেন কৃষকরা। আর কৃষি বিভাগ এই রোগকে ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট (বিএলবি) হিসেবে আখ্যায়িত করলেও এই রোগ নির্মূলে কার্যকরী কোন পরামর্শ দিতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তরের তিন জেলা দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে এবার ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। কিন্তু কৃষকরা এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আমন রোপন করেছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দিনাজপুর জেলায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫২০ হেক্টর, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫২৮ হেক্টর এবং পঞ্চগড় জেলায় ৯৪ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে আমন রোপন করা হয়।

কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম আর সঠিক পরিচর্যায় সবুজ সমারোহে পরিনত হলেও ঠিক শীষ বেরুনোর প্রাক্কালে হঠাৎ এক রোগে বিবর্ণ হয়ে পড়ছে এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ আমন ক্ষেত। দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, পাবর্তীপুর, ফুলবাড়ী, বিরলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় আমন ধান গাছের পাতা শুকিয়ে খরের মতো হয়েছে। আর কাঠারী ধান ক্ষেতে এই আক্রমণের মাত্রা বেশি।

কৃষকরা জানান, আমন ক্ষেতের এই রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে না পারায় তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেই চলেছেন কিন্তু এতেও কোন কাজ না হওয়ায় আমন ফলন নিয়ে শংকা আর হতাশায় পড়েছেন তারা।

দিনাজপুর সদর উপজেলার নুলাইবাড়ী গ্রামের কৃষক ইমতিয়াজ হোসেন জানান, মোট ১০ একর জমিতে আমন আবাদ করছেন তিনি। এর মধ্যে বেশির ভাগ জমিতেই আমন ক্ষেতের পাতা শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন ইতোপূর্বে এ ধরনের রোগ দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে কয়েক ধরনের কীটনাশক ও অন্যান্য ওধুধ এবং পরিশেষে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে পটাশ প্রয়োগ করেও কোন কাজ হয়নি বলে জানালেন কৃষক ইমতিয়াজ হোসেন। এ অবস্থায় আমন আবাদ নিয়ে শংকায় রয়েছেন তিনি।

একই এলাকার বয়স্ক কৃষক রুস্তম আলী জানান, ইতোপূর্বে তিনি এ ধরনের রোগ দেখেননি।

কৃষকরা এই রোগকে অজ্ঞাত রোগ বললেও কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই রোগকে বলছেন ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট (বিএলবি)। সদর উপজেলার শেখপুরা এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আকবর জানান, জমিতে পটাশের ঘাটতির কারনেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, এই রোগ প্রতিরোধে জমিতে পটাশ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এবং এলাকায় বিভিন্ন লিফলেটও বিতরন করা হচ্ছে।

কিন্তু কৃষকরা বলছেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের এসব পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেও কোন ফল হচ্ছে না। এ বিষয়ে শেখপুরা ইউনিয়নের বলতৈড় গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা জানালেন, তার ধারনা মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা এই রোগটি নির্ণয় না করেই পটাশের ঘটতির কথা বলছেন। কারণ তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পটাশ প্রয়োগ করেও কোন কাজ হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে আমন ক্ষেত রক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা অথবা কৃষি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা কামনা করেছেন কৃষক সেলিম রেজা।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক জানান, কৃষকরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় হয়তো পটাশ বা অন্যান্য ওধুধ প্রয়োগ করতে পারছে না। আর এ কারণেই ফল সঠিক ফল পাচ্ছেন না কৃষকরা।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র কাটারী ও চিকন জাতের আমন ক্ষেতেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা যে ভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে চলেছেন, তাতে এই সমস্যা কাটিয়ে আমন ফলনে কোন প্রভাব পড়বে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

(এটি/এএস/অক্টোবর ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test