E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সফল কৃষি উদ্যোক্তা নাটোরের আলফাজুল আলম

২০১৫ অক্টোবর ১৯ ১৭:১৭:২১
সফল কৃষি উদ্যোক্তা নাটোরের আলফাজুল আলম

নাটোর থেকে মামুনুর রশীদ : একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা নাটোরের আলফাজুল আলম আহম্মেদ। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা কৃষি খামারে পেয়ারা, বরই,লিচু, বেদেনা, রকমারি আম, কলা, লেবু, ড্রাগনসহ নানা ফলের চাষ করে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন ৩১ বছর ধরে।

তার সাম্রাজ্যে শুধু কৃষি উৎপাদন নয়। একই সাথে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অন্যদের অনুপ্রেরণা দিয়ে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে মাছ উৎপাদনে অবদান রেখে চলেছেন। কৃষি ও মৎস্য চাষসহ সফল যুব ও যুব মহিলা আত্মকর্মী সৃষ্টির জন্য পেয়েছেন দেশ সেরার সম্মাননা। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন অপরদিকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছেন অন্তত ২২০ জন। তারাও আলফাজুলের মত কৃষিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

আলফাজুল আলমের কৃষি খামার এখন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তার এই প্রতিষ্ঠানে বহুমুখী প্রকল্প চালু আছে। তার উৎপাদিত কৃষিপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের মাটিতে রপ্তানী হচ্ছে। প্রতিদিন ১৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারী করছে।

এছাড়া স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে পার্টটাইম কাজ করে লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধরাও অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়ে থাকে। তার এসব কাজে সহায়তা করেন আমেরিকা প্রবাসী ছেলে আখেরুল আলম।

নাটোর শহরের নীচাবাজার এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে আলফাজুল আলম আহম্মেদ ১৯৫২ সালের ২১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাই আর ৬ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশুনার কারণে পড়ালেখায় বেশি দূর এগোতে পারেনি। পৈত্রিক ব্যবসা মুদির দোকান দেখাশুনা করতে করতে এক সময় পারিবারিক কলহের কারণে বাড়ি ছাড়া হন। দীর্ঘ সময় তিনি বাইরে কাটিয়েছেন।

১৯৮৪ সালে এলাকায় ফিরে এসে তিনি সার ও কীটনাশকের ব্যবসা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ৯ বিঘা পুকুর লিজ নিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ। এরইমধ্যে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষের পরিধি বাড়িয়ে দেন। ১৯৯০ সালে একজন সফল মৎস্য উদ্যোক্তা হিসাবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর রাষ্ট্রীয় ভাবে এবং ১৯৯৩ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ মাছ চাষী হিসাবে পুরস্কার প্রদান করেন। পরবর্তীতে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কৃষি বিষয়ক প্রতিবেদন দেখে পরামর্শ নেন কৃষি বিভাগের। ২০০৪ সালে ১ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে গড়ে তোলেন থাই জাতের পেয়ারা বাগান।

পেয়ারা চাষে সাফর‌্য দেখে তিনি আরো অনুপ্রাণিত হয়ে ৫ বছরের জন্য ২৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারা চাষকে সম্প্রসারিত করেন। এরপর থেকে এই কৃষি উদ্যোক্তার শুধুই সামনে এগিয়ে চলা। গড়ে তোলেন বহুমুখী কৃষি প্রকল্প। শত শত যুবক ও আগ্রহীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করছেন। সাফল্যের এই গতিধারায় আলফাজুল আলম তার ফলের বাগানকে সম্প্রসারিত করেছেন এক’শ ৩৮ বিঘায়।

এরমধ্যে বাগাতিপাড়ার তমালতলা যোগিপাড়ায় ১৯ বিঘা, নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকায় ২৩ বিঘা, সদর উপজেলা একডালা পুকুরপাড় এলাকায় ২০ বিঘা, বাকশোরঘাট এলাকায় ৪১ বিঘা, তেবাড়িয়া রেলগেট সংলগ্ন সোহাগ নার্সারীতে সাড়ে ১৯ বিঘা। তার খামারে বর্তমানে আপেল কুল, বাউ কুল, নারিকেল কুল ৫ হাজার, চায়না লেবু ৩ হাজার, এলাচি লেবু ৪ হাজার ৯৪৫টি, কলম্বো লেবু ৩১’শ, বেদেনা ২১’শ, ড্রাগন ফল ৪৭০ খুটি, লিচু চাষ হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন জাতের ৯০ হাজার বড়ই গাছ, ১ লাখ আম, ২’শ জাম, ৭ হাজার কাঁঠাল ও ৫০ হাজার মেহগিনি গাছ। তার খামারে উৎপাদিত পেয়ারা ও অন্যান্য ফল কীটনাশক ও সব রকমের রাসায়নিক মুক্ত।

আলফাজুল আলম আহম্মেদ জানান, সুদীর্ঘ এই পথ চলায় সাফল্যের মাফকাঠি বেশি। তবে নানা প্রতিবন্ধকতাও তাকে বার বার ভর করেছে। কিন্তু তাকে দমাতে পারেনি। অনেকে শত্রুতা করে বাগাতিপাড়ার প্রজেক্টে ২৮’শ গাছ এবং শহরের আলাইপুর এলাকায় ২৩ বিঘা জমির বাগানে কৃত্রিম ভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে ৩৬’শ গাছ বিনষ্ট করেছে। সেখানে মনোবল ফিরিয়ে এনে আবার নতুন উদ্যোমে বাগান শুরু করেছেন।। পাশাপাশি তিনি আবারও মাছ চাষ শুরু করেছেন। বর্তমানে তিনি ১৪ বিঘা জমির পুকুরে ৩ লাখ কৈ মাছের পোনা ছেড়ে ৪ মাসে ৬০ মন কৈ মাছ উৎপাদন করেছেন। তিনি খামারে চাষাবাদ সর্ম্পকে বলেন, গাছের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য মাটিতে জৈব সার এবং পোকামাকড় দমনে সেক্সর ফেরোমেন হরমোন প্রযুক্তি ব্যবহার করি ।

ক্ষতিকারক মাছির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গাছের পেয়ারাগুলোকে পিপি পলিথিনে মুড়ে দেওয়া হয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তার খামারের পেয়ারা, আপেল কুল, ড্রাগন ফল, লিচু, কলা, আম, জাম, কাঁঠাল ও লেবু কিনতে পাইকাররা আসেন। বর্তমানে তার বাগানের কলম্ব, চায়না ও এলাচি লেবু বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। কৃষিই তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, দেশের বেকার যুবকেরা হতাশায় দিন না কাটিয়ে আলফাজুল আলমের মত একজন বয়স্ক মানুষের মতো প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সারা দেশে ফলের রাসায়নিক দূষণের আতঙ্ক সংবাদে আলফাজুলের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং ক্রেতা পর্যায়েও প্রশান্তির।

(এমআর/এএস/অক্টোবর ১৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test