E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরিষার ফুলে ফুলে ঢাকা চলনবিলের বিস্তৃর্ণ মাঠ

২০১৫ ডিসেম্বর ১৬ ১২:৪৩:৫৯
সরিষার ফুলে ফুলে ঢাকা চলনবিলের বিস্তৃর্ণ মাঠ

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সরিষার ফুলে ফলে ঢাকা পরেছে চলনবিলের বিস্তৃর্ণ মাঠ। বিলের যে দিকেই তাকাই না কেন চারিদিকে শুধু হলুদ ফুলের সমাহার। মাঠঘাট সর্বত্র সরিষার হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে দিগন্তজোড়া মাঠ। লক্ষ মৌমাছি গুন গুন শুরে কৃষককে মহিত করে তুলেছেন।

সকাল থেকে সন্ধ্য পর্যন্ত ফুলে ফুলে মৌমাছির আনাগোনা। চলতি বছরে চলনবিলে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পুরণ করেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরিয়া বিক্রি করা যাবে। চলনবিলে এবার ১লাখ ৪৫হাজার মেট্রিকটন সরিষার লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হলে এ বছর চলনবিলে বাম্পার সরিষার ফলন হবে। কৃষক সরিষার আবাদ করতে কোন বাধার সম্মুখিন যাতে না হয় এজন্য কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক তদারকি ও কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন।

কৃষি অধিদপ্তর ও এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চাটমোহর, গুরুদাসপুর, আত্রাই রানীনগর এবং সিংড়া উপজেলায় প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কৃষক মাঠে সরিষার বীজ বোপন করেছেন। চলনবিলে এক সময় প্রচুর পরিমানে বোনা আমন ধানের আবাদ হত। সময়ের পেক্ষাপটে আমন ধানের বিকল্প হিসেবে চলনবিলের কৃষকরা বোরো ধানের চাষে ঝুঁকে পড়ে। চলনবিলের নিচু জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে। যা এক সময় কল্পনা করা যেত না।

এ সব মাঠে কৃষক কখনো সরিষার আবাদ করার কথা ভাবেনি। এখন থেকে ১০/১২ বছর আগে চলনবিলের কৃষক সমাজ ভাবতে পারেনি এ জমিতে সরিষা চাষ করার কথা। গত কয়েক বছর বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় চলনবিলের মাঠে মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে পুরোদমে। ৪৫দিনের ফসল হিসেবে কৃষক সরিষার আবাদ বেছে নিয়েছে। বর্তমানে সরিষার গাছে হলুদ ফুলে ঢাকা পরেছে।। প্রায় ফুলেই মৌমাছি বসে মধূ আহরন করছে। কৃষক আশা করছে কোন রোগ বালাই না হলে এবার চলনবিলে বাম্পার সরিষার ফলন হবে।

তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের মাকড়শোন গ্রামের কৃষক সেরাজুল, রায়হান, আলতাব পিন্টু জানান, এ বছর জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না হলে প্রতিবিঘা জমিতে ৫থেকে ৭মন হারে সরিষার ফলন হবে। দিঘি সগুনা গ্রামের আব্দুল আব্দুর রউফ, জুব্বার মন্ডল, বাবুল আকতার জানান, সরিষার আবাদের পরই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। এতে জমিতে সার কম লাগে। সরিষার পাতা ও শিকড় সবুজ সারের কাজ করে এবং বোরো ধানের ফলনও বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। অল্প সময়ের মধ্যে ২টি ফসল ঘরে তুলতে পারছে কৃষক। এক সময় বন্যার পানি নামতে দেরী হওয়াতে শুধুমাত্র বোরো ধানের আবাদ করতাম। বর্তমানে মাঠে সরিষার ও ভূট্রার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া সহজেই বিক্রয় করা যায়।

সরিষার আবাদ ঘরে তোলার পর ওই জমিতেই সার ছাড়াই বোরো ধানের চাষ করা যায়। তাই চলনবিলের কৃষকরা গত ১০/১২ বছর ধরে সরিষার চাষ করে আসছে। ধাপতেতুলিয়া গ্রামের কৃষক আমিন মন্ডল বলেন, সরিষার আবাদ এ অঞ্চলের কৃষককে লাভের মুখ দেখাতে পেরেছে। সরিষার পাশাপাশি এবার ভুট্টার আবাদও হয়েছে ব্যাপক। মাত্র দেড় থেকে ২ মাসের মধ্যে সরিষা জমি থেকে ঘরে তোলা যায়। সরিষার পাতা ও শিকর জমিতে জৈব্য সারের কাজ করে।

সিংড়া উপজেলার সরিষা বাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল রহিম, উজ্জল, সোবাহা, লিয়াকত জানান, চলনবিলে সরিষার চাষ হয় তা ভাবতেই অবাক লাগে। কখনও আমাদের নিচু জমিতে সরিষার আবাদ হয়নি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমরা নিচু জমিতে সরিষার আবাদ করছি এবং সরিষা ঘরে তোলার পর সঙ্গে সঙ্গে ওই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়।

গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা গ্রামের কৃষক আলিম, মতলেব, শফিকুল, ইসলাম জানান, আগে আমাদের উচু জমিতে সরিষা, রায়, মাল ও তীলের চাষ হত। কিন্তু বর্তমানে বোরো জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে। কৃষক দুই ফসল পেয়ে লাভবান হচ্ছে। সরিষা চাষে ১ বিঘা জমিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩হাজর টাকা খরচ হয়। অথচ যদি ঠিকমত সরিষা ঘরে তোলা যায় তাহলে ৫/৭মন হারে সরিষা পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে পুরাতন সরিষার দাম ২হাজার থেকে ২১শত টাকা বিক্রি হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মিজানুর রহমান বলেন, সরিষার চেয়ে আমার উপজেলায় রসুনের আবাদ বেশী হয়। তাছাড়া গম রাই,পিয়াজ বেশী আবাদ করে এখানকার কৃষকরা। তিনি আর জানান, শস্য বহুমুখী করন করার ফলে সব আবাদই ভাল হয়। মাঠে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের সাথে কাজ করছে যাতে কৃষক ফসল ফলিয়ে লাভবান হতে পারে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, তাড়াশসহ চলনবিলে এবারও বাম্পার সরিষার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানা ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ সার্বক্ষনিক মাঠে কাজ করছেন। যাতে কৃষকের কোন প্রকার সম্যসার সৃষ্ঠি না হয়। আমি আশা করছি প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে এবার তাড়াশসহ চলনবিলে সরিষার বাম্পার সরিষার ফলন হবে।

(এমএমএইচ/এএস/ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test