E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানসম্মত রেনু পোনার অভাবে গলদা চিংড়ির উৎপাদন হ্রাস

২০১৬ জানুয়ারি ০৯ ১৭:৪৬:৩৯
মানসম্মত রেনু পোনার অভাবে গলদা চিংড়ির উৎপাদন হ্রাস

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে মানসম্মত রেনু পোনার অভাবে গলদা চিংড়ি চাষীরা কাঙ্খিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেনু পোনা আহরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকার কারণে হ্যাচারীর অপুষ্ট ও দুর্বল রেনু পোনা চাষ করে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষীরা।

মৎস্য বিভাগ বলছে, সরকারিভাবে স্বাদু পানির রেনু উৎপাদনে জেলায়-জেলায় হ্যাচারী রয়েছে। ঐসব হ্যাচারীর মাধ্যমে উৎপাদিত মানসম্মত পোনা চিংড়ি চাষীদের মাঝে সরবরাহ করা গেলে সমস্যা সমাধান হবে।

চিড়ি চাষীরা জানায়, বাগেরহাটের ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পরিমানে গলদা চিংড়ির চাষ করা হয়। এসব এলাকার হাজার হাজার চিংড়ি চাষীদের প্রতি বছর কয়েক কোটি রেনু পোনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনু পোনা আহরন বন্ধ থাকায় এবং সরকারী ভাবে উৎপাদিত রেনু পোনা চাহিদা মেটাতে না পারায় বেসরকারি হ্যাচারী থেকে উৎপাদিত অপুষ্ট ও গুণগত মানহীন পোনা চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষীরা।

চাষীরা বলছেন, প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরিত রেনুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, দীর্ঘদিন বাচেঁ, অনেক বড় হয় এবং গুনগত মানসম্মত হওয়ায় চাষে উৎপাদন ভালো হয়। কিন্তু হ্যাচারীর পোনার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় ঘেরে গলদা মারা যায় এবং উৎপাদন ভালো হয় না। গুণগত মানসম্মত রেনুর অভাবে দূর্বল হ্যাচারীর পোনা চাষ করে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

ফকিরহাটের গলদা চিংড়ি চাষী রহমত আলী বলেন, ‘হ্যাচারীর রেনু চাষে খরচ খুব বেশি হয়। আড়াই হাজার রেনিু পোনা কিনে ঘেরে ছাড়লে এর ভেতর ৮-৯’শ রেনু পানির সাথে মানাতে না পেরে মারা যায়। হ্যাচারীর রেনু পোনার খাবারের পমিান বেশি দরকার হয়। এছাড়া শীত মৌসুমে এই গলদা তাপমাত্রার কারণে মারা যায়’।

বাগেরহাট জেলার সবচেয়ে বড় চিংড়ি বিক্রয় কেন্দ্র ফকিরহাটের ফলতিতা বাজার। সেখানের গলদা চাষী ও ব্যবসায়ী তৌহিদুর রহমান বলেন, নদীর রেনু থেকে যে গলদা হয় তা ঘেরে ২ থেকে আড়াই বছরও রেখে বড় করা সম্ভব। খাবারের পরিমান কম দরকার হয় এবং মাছের ওজনও অনেক ভালো হয়। হ্যাচারীর রেুনু পোনার চেয়ে নদীর রেনু চাষে হাজার প্রতি কমপক্ষে ১২ হাজার টাকা বেশি লাভ করা যায়। প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনু পোনা আহরণ করতে পারলে চিংড়ির উৎপাদন বাড়বে এবং বেশি পরিমান বৈদিশক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে সরকারের কাছে দাবি জানান চাষীরা।

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইফতেখারুল আলম জানান, মৎস্য সংরক্ষন আইনে নদী থেকে গলদার রেনু আহরন নিষেধ রয়েছে। কারণ নদী থেকে রেনু সংগ্রহ করতে গিয়ে রেনু আহরনবারীরা অন্য মাছের অনেক পোনা নষ্ট করে ফেলে। সরকারিভাবে স্বাদু পানির রেনু উৎপাদনে জেলায় জেলায় প্রকল্প রয়েছে। তবে ঐ প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত রেনু চাহিদার ২০ ভাগ ও মেটাতে পরেনা। সম্প্রতি সরকারি রেনু উৎপাদন কেন্দ্রে রেনুর বাড়াতে বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করা হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে চাষীদের প্রয়োজনীয় রেনু পেনা সরবরাহ করতে পারলে চাষীদের সমস্যা দূর হবে। তবে তিনি স্বীকার করে বলেন, রেনুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় কতিপয় অসাধু হ্যাচারী মালিকরা গুণগত মানের তোয়াক্কা না করে শুধু ব্যবসার দিকে নজর দেওয়ায় চাষীরা ক্ষতির সম্মুখী হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় ৭ হাজার ৯০০ চিংড়ি ঘেরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি পিচ হ্যাচারীর রেনু চাষ করা হয়েছে। এই চাষের সাথে প্রায় ৮ হাজার চিংড়ি চাষী জড়িত রয়েছে।

(একে/এএস/জানুয়ারি ০৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test