E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে বোরো চাষের দু’হাজার একর জমি অনাবাদি

২০১৬ জানুয়ারি ২৩ ১৬:৪৫:০৫
বরিশালে বোরো চাষের দু’হাজার একর জমি অনাবাদি

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : একমাত্র ব্লক পানি বিক্রেতাদের খামখেয়ালীপনার কারণে পানি সংকটে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলার গৌরনদী উপজেলার ২৫টি ব্লকের প্রায় দু’হাজার একর জমি অনাবাদি রয়েছে। বছরের বারো মাসের খাবার সংগ্রহের একমাত্র উৎস জমিতে এবার ইরি-বোরো ধান চাষ করতে না পেরে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এজন্য কৃষকেরা পানি বিক্রেতা ও ব্লক ম্যানেজারদের খামখেয়ালীপনাকেই দায়ী করেছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ চাঁদশী, বালিয়ারপাড়, বাদামতলা, গোবরদ্ধর্ণ, কুমাড়ভাঙ্গা, দক্ষিণ-পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণ শিহিপাশা এবং শাওড়া গ্রামের ২৫টি ব্লকের প্রায় দু’হাজার একর জমির ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল ওইসব গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। এসব ব্লকে বোরো চাষের জন্য পানি সরবরাহ করা হতো গয়নাঘাটা খালের মুখের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন আল-আমিন টেকনিক্যাল কলেজের পাশের পালরদী নদীর শাখা খাল থেকে।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, দীর্ঘদিন পূর্বে খালের মুখে অপরিকল্পিতভাবে স্লুইজ গেট ও সরকারি খালের একটি অংশ অবৈধভাবে দখল করে টেকনিক্যাল কলেজের ভবন নির্মান করায় খরাস্রোত খালটি তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। পরবর্তীতে ব্লকে পানি সরবরাহের জন্য দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় মোঃ শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদার খালের মুখে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প বসিয়ে খালে পানি সরবরাহ করতো। বিভিন্ন ব্লকের ম্যানেজাররা তাদের কাছ থেকে ব্লকের জমি অনুযায়ী পানি ক্রয় করে পূর্ণরায় সেচ পাম্পের সাহায্যে স্ব-স্ব ব্লকে পানি সরবরাহ করতেন। ব্লক ম্যানেজারদের কাছ থেকে চড়ামূল্যে পানি ক্রয়ের পর জমিতে বোরো চাষ করে বাম্পার ফলন ফলিয়ে বারো মাসের খাবার মজুদের পর উদ্বৃত ফসল বিক্রি করতেন চাষীরা।

উত্তর চাঁদশী গ্রামের চাষী শেখ শামীম, দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের শাহীন সরদার, মাহাবুব সরদার, শাওড়া গ্রামের মনিরুজ্জামানসহ অসংখ্য চাষীরা জানান, প্রতিবছর তারা প্রতি বিশ শতক জমিতে পানি উত্তোলন বাবদ ব্লক ম্যানেজারদের ছয়’শ টাকা করে পরিশোধ করতেন। চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতে অতীত বছরের ন্যায় পানি সরবরাহের কথাছিলো। সেমতে তারা বোরো চাষের বীজতলা তৈরীসহ সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

এরইমধ্যে ভরা মৌসুমে ব্লক ম্যানেজাররা পানি সরবরাহ না করায় তাদের বীজতলার বীজ নষ্টসহ সব জমি অনাবাদি রয়েছে। এতে তারা খাদ্য সংকটের পাশাপাশি আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলেও উল্লেখ করেন। ব্লক ম্যানেজার হিরন ফরিয়া ও শেখ এনামুল হক জানান, তারা প্রতিবছর আল-আমিন কলেজের পাশ থেকে খালে পানি সরবরাহ করা শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদারের কাছ থেকে প্রতি বিশ শতক জমির জন্য ৩’শ টাকা দরে পানি ক্রয় করে খাল থেকে পূর্ণরায় সেচ পাম্পের সাহায্যে চাষীদের জমিতে পানি সরবরাহ করে আসছিলেন। চলতি মৌসুমেও একইভাবে পানি সরবরাহের কথা থাকলেও জনৈক শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদার খালে পানি সরবরাহ না করায় তারা ব্লকের জমিতে পানি সরবরাহ করতে পারেননি। তারা আরও অভিযোগ করেন, জনৈক শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদারের কাছে মোটা অংকের টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল থাকায় চলতি মৌসুমে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে তাদের বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগ দেয়া হয়নি।

এজন্য তারা (শাহ আলম ও হাবুল তালুকদার) বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প বসিয়ে খালে পানি সরবরাহ করতে না পারায় ব্লকের জমি অনাবাদি রয়েছে। অভিযোগ স্বীকার করে শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদার জানান, ২৫টি ব্লকের অধিকাংশ ম্যানেজার সঠিক ভাবে টাকা পরিশোধ না করার কারণেই বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। খোঁজখবর নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

(টিবি/এএস/জানুয়ারি ২৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test