E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাটোরে ভুগর্ভস্থ পানি সাশ্রয়ে বিকল্প ও লাভজনক ফসল চাষ

২০১৬ জানুয়ারি ২৫ ১৬:৪০:৪৬
নাটোরে ভুগর্ভস্থ পানি সাশ্রয়ে বিকল্প ও লাভজনক ফসল চাষ

নাটোর থেকে মামুনুর রশীদ : ভুগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে এবং উপরোস্ত পানি সাশ্রয়ে নাটোরের কৃষকরা বিকল্প ও লাভজনক ফসল চাষে মাঠে নেমেছে কৃষকরা। চলতি মৌসুমে কৃষকরা বোরো ধানের পাশাপাশি গম, ভুট্টা, রসুন,কালোজিরা, মশুর, মটরশুটিসহ বিভিন্ন শাকসবজির চাষ করছেন। কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বিকল্প ফসল চাষ লাভজনক। ফলে এ বছর বোরো ধানের পরিবর্তে বিকল্প ও লাভজনক ফসল চাষের পরিমান অনেকাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় চলনবিল অধ্যুষিত এই জেলার সর্বত্রই এখন চলছে বিশাল কৃষি কর্মযজ্ঞ। এতে কৃষকদের সময় ও অর্থ দু'টই সাশ্রয়ী হবে। কৃষি বিভাগের সাম্প্রতিক এক তথ্য বিবরনীতে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় ৫৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো রোপন হয়েছে। গত বছর লক্ষমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার ৩৩৭ হেক্টর। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় ৫৭ হাজার ৪৯২ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় ১ হাজার ১৩২ হেক্টর কম জমিতে বোরোর চাষ হচ্ছে। অপরদিকে গত মৌসুমে ভুট্টাচাষ হয়েছিল ৩ হাজার হেক্টর।

চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৪ হেক্টর। সেখানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৯ হেক্টরে। অথর্ৎি গত বছরের তুলনায় এবছর ৫৬৯ হেক্টর বেশি চাষ হচ্ছে। গত মৌসুমে ১৯ হাজার জমিতে রসুন চাষ হয়েছিল। এবছর ২০ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হচ্ছে। মশুর গত বছর ছিল ২৬ হাজার হেক্টর। চলতি মৌসুমে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮’শ হেক্টর। গত মৌসুমে গমের চাষ হয়েছিল ২৫ হাজার ৬০ হেক্টর। এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর সবজি চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ৯০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৯০ হেক্টর। এপর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৯৯০ হেক্টর। গত মৌসুমে ধনিয়া চাষ হয় ৬৭০ হেক্টর, এবছর বেড়ে চাষের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৯১০ হেক্টর । কালোজিরা গত বছর ছিল ২৪০ হেক্টর, এবছর ৬১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের একটি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই জেলায় ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর কৃষি আবাদী জমি রয়েছে। কিন্তু কৃষি জমিতে বিভিন্ন অবকাঠামো নিমার্ণর কারনে প্রতিবছর প্রায় ১ শতকরা হারে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া জেলায় মোট খাদ্য চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমান উৎপাদন হচ্ছে এবং প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য উদ্বৃত্ত থাকছে। ফলে বোরোর চাষ কমলেও কোন ক্ষতির কারন নেই। বরং বোরোর পাশাপাশি বিকল্প ও লাভজনক ফসল চাষ করলে অর্থনৈতিক ভাবে কৃষকরা আরো বেশি লাভবান হবেন।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার ডঃ সাইফুল আলম জানান, বিকল্প ফসল চাষাবাদ একদিকে যেমন কৃষকরা সময় ও অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হবেন। তেমনি উৎপাদনেও অনেকাংশ লাভজনক হবেন। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান চাষে প্রায় ১ লাখ লিটার পানি প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ বোরো চারা রোপন থেকে শুরু করে ধান ওঠা পর্যন্ত ২৪ থেকে ২৫টি সেচ দিতে হয়। অপরদিকে গম বা ভুট্টা চাষে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার লিটার বা ৩ থেকে ৪টি সেচ প্রয়োজন হয়। তাই কৃষকরা বিকল্প ফসল চাষাবাদ করলে দেশের ভুগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমে যাবে।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার আমিরুল ইসলাম জানান, বিকল্প ও লাভজনক ফসল চাষাবাদে পানির সংকট নিয়ে একদিকে কৃষকদের আর ঝামেলায় পড়তে হবে না অপরদিকে দেশের জীব ও বৈচিত্র্য রক্ষাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে। এজন্য কৃষকদেরকে বোরোর সাথে বিকল্প ও লাভজনক ফসল চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে কৃষকরা বলছেন, কৃষি উপকরণ প্রাপ্তিতে সহজলভ্যতা, উৎপাদন বৃদ্ধি ও লাভজনক দাম পেলেও এতোদিন বিকল্প ফসল চাষের সুযোগ বা পন্থা তাদের জানা ছিল না। তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে শুধুমাত্র বোরোর চাষাবাদ করে আসছেন। তবে কৃষি বিভাগের দেওয়া নতুন ফর্মূলা পাওয়ায় তারা বোরোর পাশাপাশি বিকল্প ফসল চাষের জন্য চিন্তা ভাবনা করছেন এবং প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে কৃষি ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রার সুচনা হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামের কৃষক উজ্জল ও রাজু আহমেদ জানান, এক বিঘা জমিতে বোরোর চাষে খরচ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হয় ২২ থেকে ২৫ মন। সেচ লাগে অন্তত ২৪ থেকে ২৫টি। কিন্তু এক বিঘা জমিতে গম ও ভুট্টা চাষে পানি সেচ দিতে হয় মাত্র ২ থেকে ৩টি। বিঘায় উৎপাদন খরচ পড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। সে তুলনায় বোরোর চেয়ে এই ফসলে সময়, অর্থ ও সেচ কম লাগে।

একই উপজেলার শাখাড়িপাড়া গ্রামের কৃষক আজগর আলী জানান, এক বিঘা জমিতে কালোজিরা চাষাবাদে খরচ পড়ে ১০ হাজার টাকা। সময় ও সেচ কম লাগে। বিঘায় উৎপাদান হয় ৩ থেকে ৪ মন। প্রতিমন কালোজিরার বাজার মূল্য ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এহিসাবে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় অন্তত ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। বিকল্প ফসল চাষ অবশ্যই লাভজনক।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডঃ আলহাজ উদ্দিন জানান, দেশের জীব ও জৈব বৈচিত্র রক্ষা, ভুগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান করতে বিকল্প ফসল চাষের বিকল্প নেই। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারেই কৃষকদেরকে বোরোর পাশাপাশি বিকল্প ফসল যেমন, গম, ভুট্টা, মশুরসহ নানা শাকসবজি চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা পরামর্শ গ্রহন করে বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আশা করি সরকারের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সফল হবে। কৃষকরাও লাভবান হবেন। দেশ বাঁচবে।

(এমআর/এএস/জানুয়ারি ২৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test