E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাটোরে তিন দিনের ব্যবধানে মশুর ডালের দাম মণে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি

২০১৬ মার্চ ১৫ ১১:৩৬:৩১
নাটোরে তিন দিনের ব্যবধানে মশুর ডালের দাম মণে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি

নাটোর প্রতিনিধি :নাটোরে গত তিন দিনের ব্যবধানে মশুর ডালের দাম প্রতি মণে ৫’শ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার নলডাঙ্গাহাটে প্রতি মণ মশুর ডাল ৪ হাজার ৩’শ থেকে ৪ হাজার ৫’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত হাটে প্রতি মণ মশুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৩৫’শ থেকে ৩৮’শ টাকা দরে ।

নলডাঙ্গার হাট ইজারাদার আমিনুল ইসলাম হাদু ঘটনার সত্যতা নিশ্চি করে জানান, গত শনিবার এই হাটে প্রতি মণ মশুর ডাল ৩৫ থেকে সর্বচ্চো ৩৮’শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মশুর ডালের আমদানিও বেশ ভাল ছিল। গত হাটে অন্তত সাড়ে তিন’শ মন শশুর ডাল কেনা বেচা হয়েছে। মঙ্গলবার হাটে মশুরের আমদানি আরো বেশি, দামও প্রতি মণে ৫’ টাকা বেশি। মসুরের বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকরাও বেশ খুশি।

নলডাঙ্গার হাটে মশুর ডাল বিক্রি করতে আসা ইয়ারপুর গ্রামের কৃষক মোজাহার আলী জানান, গত শনিবার হাটে তিনি দুই মণ মশুর ডাল ৩৬’শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। মঙ্গলবার হাটে একই মশুর ডাল ৪ হাজার ৪৫০ টাকা দরে তিন মণ বিক্রি করেছেন। এবছর তিনি আড়াই বিঘা জমিতে মশুর চাষ করে বিঘা প্রতি ১১ মণ করে ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার মশুরের দাম বেশি।

একই কথা শোনালে হলুদঘর গ্রামের আজাহার হোসেন, কোমরপুর গ্রামের সমসের আলী, মাধবপুর গ্রামের রইচ উদ্দিন। তারা জানান, এবছর নতুন মশুর তোলার সময় গত বছরের তুলনায় কিছুটা দাম পাওয়া গেছে। তবে গত তিন দিনের ব্যবধানে তারা মণে ৪’শ তেকে ৫’শ টাকা বেশি পেয়েছেন। এই দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে।

নলডাঙ্গা বাজারের মশুর ডাল ব্যবসায়ী আলহাজ্ব জহির উদ্দিন জানান, গত হাটে প্রতি মণ মশুর ডাল ৩৭’শ টাকা দরে ১৫০ মণ কিনেছিলেন। বেশি দাম পাওয়ায় মঙ্গলবার হাটে ওই মশুর ডাল প্রতি মণ সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিন দিনের ব্যবধানে তার লাভ হয়েছে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

অপর ব্যবসায়ী আব্দুল হাফিজ জানান, প্রতি হাটে কৃষকদের কাছ থেকে মশুর ডাল কিনে ঘরে মজুদ রেখে পরের হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী অথবা মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বেশ লাভবান হয়েছেন। তিনি জানান, এখানকার মশুর ডাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলের তেল মিলে সরবরাহ করা হয়। নলডাঙ্গারহাটে মশুর ডালের আমদানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে।

এদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় উত্তরের কৃষি প্রধান জেলা নাটোরে মসুর ডাল চাষের পরিধি বাড়ছে। গত ৪ বছরে এই জেলায় অন্তত ৮০ শতাংশ হারে মসুর ডালের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। মশুর ডালের উৎপাদন ভাল, দামও বেশি।
কৃষি সংশ্লিষ্টদের মতে, জমি থেকে পুরোদমে মশুর ডাল তোলার কাজ চলছে। কৃষকরা ভালোয় ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারলে চলতি বছর অন্তত ২৫২কোটি ২৯ লাখ টাকার মসুর উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নাটোর জেলায় গত ২০১২-১৩ মৌসুমে ২৩ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে মসুর ডাল চাষ হয়। এতে মসুর ডাল উৎপাদন হয় ৩৬ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ মৌসুমে মসুর আবাদ বেড়ে ২৪ হাজার ৬২১ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এতে প্রায় ৩৫ হাজার ১৫২ মেট্রিক টন মসুর উৎপাদন হয়। ২০১৪-১৫ মৌসুমে আরো মসুর আবাদ বেড়ে ২৬ হাজার ১৮৮হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। ওই মৌসুমে উৎপাদন হয় ৩৭ হাজার ৯৭২মেট্রিক টন। তবে চলতি মৌসুমে বিগত মৌসুমের তুলনায় মসুর আবাদ বেড়ে ২৬ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৭২৫মেট্রিক টন।

নাটোর কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, মসুর একটি লাভজনক ফসল। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন মসুর আবাদের দিকে কৃষকরা ঝুঁকে পড়ছে। আগামীতে আরো বেশি পরিমানে মসুর আবাদের পরিমান বাড়বে বলে আশা করছি।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসের শেষ দিকে মৃদু শৈত প্রবাহ এবং বৃষ্টির কারনে সামান্য পরিমানে মসুর গাছ ক্ষতি হয়েছে। তবে বর্তমানে মসুর ডালের দাম বেশি থাকায় সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কৃষকরা।



(এমআর/এস/মার্চ১৫,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test