E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নন্দীগ্রামে সজনে ডাঁটার বাম্পার ফলন

২০১৬ এপ্রিল ০২ ১৮:২৩:১০
নন্দীগ্রামে সজনে ডাঁটার বাম্পার ফলন

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার সবত্রই এখন সজনের দেখা মিলছে। পুক্ত না হতেই হাট-বাজারে উঠছে সজনে। দ্বিগুন দামে হলেও সজনে কিনছেন ক্রেতারা। বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি সজনে ডাঁটা ৮০টাকা থেকে ১০০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দাম বেশী হলেও সজনে হাতে বাড়ি ফিরছেন গৃহকর্তারা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগীতা ও পরামর্শে বাড়ছে সজনে চাষ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের মেঠো পথে, বাড়ির আঙ্গিনায়, উঁচু ভিটায়, চাষাবাদী জমির ধারে, বাড়ির পাশে, পুকুর পাড়ে ও ফাঁকা পরিত্যাক্ত জায়গায় সজনে গাছের ভাঙা বা কাটা ডাল রোপন করেছিল উপজেলার কৃষকেরা। বিশেষ করে সজনে চাষে নারীদের আগ্রহ বেশী।

সজনে গাছের ডাল মাটিতে রোপন করে যত্ন ছাড়াই ভালো ফলন হয়েছে। ইংরেজীতে সজনের নাম ‘‘ড্রামস্ট্রিক’’। যার অর্থ ঢোলের লাঠি। বীজ থেকে সজনে চারা তৈরি ব্যয়বহুল, কষ্টসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সজনে ডাঁটা পুষ্টি ও ঔষধি গুণসমৃদ্ধ সবজি। চৈত্রের দহনে প্রকৃতি রুদ্র হয়ে গাছে গাছে দেখা মিলছে সজনে ডাঁটা। সজনের ফুল-পাতা-ডাঁটা সবটাই খাওয়া যায়। রয়েছে সমান পুষ্টিগুণ।

মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে সজনেতে। গ্রীষ্মকালে রুদ্র প্রকৃতিতে নানা রোগ দেখা দেয়। জলবসন্ত, ডায়রিয়া, লিভারজনিত রোগ প্রতিরোধ করে সজনে। সজনের ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সজনের ডাঁটা ক্যানসার রোধ করে, রাতকানা দূর করে, দুর্বল হাড় শক্ত করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে রক্তচাপ কমায়। প্রতি ১০০ গ্রাম সজনেতে জ্বলীয় অংশ ৮৩.৩ গ্রাম, খনিজ ১.৯ গ্রাম, আঁশ ৪.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬০ কিলোক্যালোরি, প্রোটিন ৩.২ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ১১.৪ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ২১.০ মিলিগ্রাম, লোহা ৫.৩ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ১০.০৪ মিলিগ্রাম, বি ১০.০২ মিলিগ্রাম, সি ৪৫.০ মিলিগ্রাম খাদ্যপোযোগী পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সজনের গাছের প্রতি তেমন আগ্রহ না থাকলেও ডাটার প্রতি আগ্রহ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, সজনের ডাল রোপণ করলেই গাছ হয়। কোনো খরচ নেই। চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গোটা বৈশাখ মাস পর্যন্ত সজনে পাওয়া যাবে। বীজ ও ডাল এর মাধ্যমে সজনের বংশ বিস্তার করা সম্ভব। এদেশে বীজ থেকে চারা তৈরি করে চাষাবাদের রীতি এখন পর্যন্ত অনুসরন করা হয়না। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসে গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে। সেটিকে শুকিয়ে ফাটলে বীজ পাওয়া যাবে। এবীজ শুকনো বায়ুরোধী পাত্রে ১-৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখার পর জুলাই-আগষ্ট মাসে বীজ তলায় অথবা পলি ব্যাগে বপন করতে হয়। বপনের আগে বীজগুলোকে ২৪ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে বীজ থেকে চারা গজাতে সুবিধা হয়। বীজ থেকে চারা বের হতে সময় লাগে ১০থেকে ২০দিন। চারা বের হবার পর নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও অন্যান্য যত্ন পরিচর্যা করতে হয়। বীজ থেকে সজনে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডাল পুঁতে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের চেয়ে কিছুটা দেরিতে ফল আসে। সজনে চাষে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয়না। সজনে ডাল লাগানোর আগে ডালের গোড়ায় তেড়ছা করে কাটতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে যেন থেঁতলে না যায়। একাজটি করলে ডালটি টিকে থাকার সম্ভবনা অনেকগুন বেড়ে যায়। ডালটি একহাত মাটির নিচে থাকে। নড়াচড়া করলে নষ্ট হতে পারে।

নতুন লাগানো গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে শীঘ্রই শিকড় গজাতে পারে। শুস্ক ও রৌদ্রজ্জ্বল সময় প্রায় দুই মাস সেচ দিতে হবে। সজনের গাছ একবার লেগে গেলে তেমন পানির প্রয়োজন হয়না। সজনের গাছে তুলনামূলক কীট পতঙ্গ ও রোগ সহনশীল ভাবে মাঝে মাঝে প্রার্দুভাব দেখা যায়। ডিপ্লোডিয়ার কারণে জলাবদ্ধ মাটিতে শিকড় পচা রোগ দেখা দিতে পারে। কীট পতঙ্গ শুস্ক ও ঠান্ডায় বেশী আক্রমণ করে। টারমাইটস্, এফিড, সাদা মাছি প্রধান কীট পতঙ্গের প্রভাবে গাছে হলুদ রোগ দেখা দেয়। উপদ্রপ বেশী হলে রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মুশিদুল হক উপরোক্ত তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সজনের পাতা ও ফল সবজি হিসেবে খুবই পুষ্টিযুক্ত। সকল সবজির তুলনায় সজনেতে বেশি পরিমান ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। সজনেয় নানা রকমের রসনাযুক্ত খাবার তৈরি হয়। এ সবজি চাষে যদি কৃষকেরা একটু মনোযোগী হলেই এউপজেলায় সজনের উৎপাদন বাড়বে। অন্যান্য সবজি উৎপাদনের চেয়ে সজনে লাভজনক।

(এমএনআই/এএস/এপ্রিল ০২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test