E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সিংড়ায় ৭ বিঘা জমির উঠতি ধান আগাছা নাশক দিয়ে বিনষ্ট

২০১৬ এপ্রিল ০৭ ১৬:৩৫:১০
সিংড়ায় ৭ বিঘা জমির উঠতি ধান আগাছা নাশক দিয়ে বিনষ্ট

নাটোর প্রতিনিধি : শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার দুর্গম পাওটা বাঁশবাড়িয়া গ্রামের এক ভূমিহীন কৃষকের লিজ নেওয়া ৭ বিঘা জমির মিনিকেট ধান আগাছানাশক ছিটিয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। এতে রফিকুল ইসলাম নামে ওই কৃষকের দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্যরা এখন দিশেহারা হয়ে প্রলাপ বকছে। রফিকুলের স্ত্রী সারা বছরের সঞ্চয় হারানোর শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন।

এদিকে রাতের অন্ধকারে এক সঙ্গে রফিকের ৭ বিঘা জমির পার্শে অপর তিন কৃষকের জমিতেও আগাছা নাশক দেওয়ায় গ্রাম জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীরা এখন রাত জেগে জমি পাহারা দিচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্থ রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে গত ৭ বছর ধরে মিনিকেট ধানের চাষ করে আসছেন। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরী কাজ করায় তিনি বাড়িতে থাকেন না। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে জমিগুলো চাষ করে। দাদন ব্যবসায়ীর কাছে ৬০ হাজার টাকা কর্জ করে এবার ধান চাষ করা হয়। আর ক’দিন পর ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে কে বা কারা ৮ বিঘা জমির মধ্যে ৭ বিঘা জমিতে আগাছা নাশক ছিটিয়ে দিয়ে সব ধানগাছ পুড়ে গেছে।

লালবর্ণ রং ধারন করায় ছেলে তাকে ফোন করে জানালে তিনি ছুটে এসে দেখেন সব ধান গাছ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে কৃষি বিভাগের ৩ জন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জমি পরিদর্শন করে জানান,আগাছা নাশক ছিটিয়ে দেওয়ার কারনে গাছসহ ধানগুলো বিনষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঘরে তার খাবারের যোগান নেই। এরপর দাদন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে নেওয়া ৬০ হাজার টাকা সুদে আসলে ৯০ হাজার টাকা শোধ করতে হবে। কিন্তু ধান ঘরে তুলতে না পারায় তারা পথে বসেছেন। তার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ নেই। এঘটনায় তিনি বুধবার থানায় একটি জিডি করেছেন।

রফিকের স্ত্রী আলেয়া খাতুন জানান, তার স্বামী অন্য জায়গায় দিনমজুরী করে। তাই বাড়িতে থাকেননা। দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি কৃষিকাজ করেন। এছাড়া তারা অন্যের জমিতেও কাজ করে। শত্রুতা করে কেউ এসব করেছে। গত বছর তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কেন এমন শত্রুতা তা তিনি জানেননা। এখন দাদন ব্যবসায়ীর ঋন শোক করতে তাদের ভিটা মাটি বিক্রি করতে হবে।

প্রতিবেশী আবুল হোসেন জানান,রফিকুল কালিগঞ্জ এলাকায় অন্যের দোকানে কাজ করে। রফিকের বউ দুই ছেলেকে নিয়ে জমি চাষ করে। জমিগুলি অন্যের কাছে থেকে লিজ নেওয়া। এই ক্ষতি হওয়ায় তাদের পথে বসতে হবে। এখন তাদের দু'বেলা খাবার হবে কিনা তা আল্লাহ মালুম জানেন।

অপর দুই প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক ও স্বপন জানান, রফিকুলের জমির পাশের দু’একটি জমিতেও আগাছা নাশক ছিটানো হয়েছে। রফিক সহ তিনজনের জমিতে আগাছা নাশক ছিটানো হয়। এরমধ্যে রফিকের সাত বিঘা জমির মিনিকেট ধান পুড়ে গেছে। তাই তারা এখন পালা করে রাতে জমি পাহারা দিচ্ছে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কৃষক রফিককে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি কৃষি বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

সিংড়া থানার ওসি নাছির উদ্দিন মন্ডল জানান, এব্যাপারে জিডির কপি তিনি হাতে পাননি।

(এমআর/এএস/এপ্রিল ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test