E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশের কৃষি

২০১৬ মে ০৫ ২০:১৯:১৫
বাংলাদেশের কৃষি

কৃষি ও কৃষক বাংলাদেশের মূল ভিত্তি অর্থনৈতিক প্রাণ ও প্রধান চালিকা শক্তি। বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনে যে নীরব বিল্পব সাধিত হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়, যদি আমরা ইতিহাসের দিকে নজর দেই ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার মানুষের পেট ভরাতে হত বার্মা থেকে চাউল আমদানি করে। বর্তমানে আমাদের খাদ্যের চাহিদা বহু গুনে বেড়ে গেলেও আমাদের কৃষকরা দেশকে খাদ্য স্বয়ং সম্পন্ন করেছে । এটা যে কত বড় সাফল্য তা আমরা পুরোপরি উপলব্ধি করি না, এই স্বার্থকতার মূল প্রাপক কৃষকরা । আর এই কৃষকদের স্বার্থকতার পিছনে কৃষি বিজ্ঞানীদের যে অবদান তাও আমরা উপলদ্বি করি না, যদিও অবশ্যই করনীয় বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ।

কৃষি প্রধান এই দেশে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদনের হার বৃদ্ধি উৎপাদিত দ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাত করনের জন্য এবং কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত নবতর প্রযুক্তি কৃষকদের মধ্যে বিস্তার ও প্রয়োগের জন্য এই কৃষিবিদগণ চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করবে। কৃষি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও কৃষকরা সবসময়ই থাকেন নানা সমস্যায় ও বিড়ম্বনায়। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এক অপরূপ অনিন্দ্য সুন্দর বাংলাদেশ। কবি তাই যথার্থই বলেছেন- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভুমি। কিন্তু আমাদের অপরিণামদর্শি কর্মকান্ডের কারনে আজ আমাদের দেশ তথা বাংলাদেশের মেরুদন্ড কৃষি নানামূখী চ্যালেঞ্জের সম্মূখীন। জীবন জীবিকার জন্য এদেশের জনগণ ও অর্থনীতি মূলত: কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখনও শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জনসাধারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং মোট জিডিপি এর ২২ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। তাই কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটলে দেশের সামাজিক অর্থনীতি তথা অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।

পৃথিবীর মধ্যে জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। লোক সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ৭০০০ নতুন মুখ, বছরে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ২৫ লক্ষ লোক। অপরদিকে রাস্তা-ঘাট, মিল-কারখানা, অপরিকল্পিত বাড়ীঘর ইত্যাদি অবকাঠামো তৈরীতে চাষযোগ্য জমি হতে প্রতিদিন ২২০ হে: হিসেবে প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৮০,৩০০ হেক্টর জমি। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য পাল্লা দিয়ে নিবিড়ভাবে চাষ করা হচ্ছে ধান আর ধান। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ধানের সাথে আনুপাতিক হারে অন্যান্য ফসলের (ডাল, তেল, শাক-সব্জি, ফল-মূল) চাষ আশানুরুপ বাড়ানো যায়নি। দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হলেও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে পারেনি। খাদ্য নিরাপত্তার প্রথম এবং প্রধান শর্তই হচ্ছে- খাদ্য যোগানের সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা থাকা অর্থাৎ নিশ্চিত আয়ের সংস্থান থাকা যার দ্বারা সবাই চাহিদা ও পছন্দ মতো নিরাপদ এবং প্রয়োজনীয় আমিষ সহ পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করতে পারে।

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এক অপরূপ অনিন্দ্য সুন্দর বাংলাদেশ। কবি তাই যথার্থই বলেছেন- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভুমি। কিন্তু আমাদের অপরিণামদর্শি কর্মকান্ডের কারনে আজ আমাদের দেশ তথা বাংলাদেশের মেরুদন্ড কৃষি নানামূখী চ্যালেঞ্জের সম্মূখীন। জীবন জীবিকার জন্য এদেশের জনগণ ও অর্থনীতি মূলত: কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখনও শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জনসাধারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং মোট জিডিপি এর ২২ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। তাই কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটলে দেশের সামাজিক অর্থনীতি তথা অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।

পৃথিবীর মধ্যে জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। লোক সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ৭০০০ নতুন মুখ, বছরে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ২৫ লক্ষ লোক। অপরদিকে রাস্তা-ঘাট, মিল-কারখানা, অপরিকল্পিত বাড়ীঘর ইত্যাদি অবকাঠামো তৈরীতে চাষযোগ্য জমি হতে প্রতিদিন ২২০ হে: হিসেবে প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৮০,৩০০ হেক্টর জমি। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য পাল্লা দিয়ে নিবিড়ভাবে চাষ করা হচ্ছে ধান আর ধান। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ধানের সাথে আনুপাতিক হারে অন্যান্য ফসলের (ডাল, তেল, শাক-সব্জি, ফল-মূল) চাষ আশানুরুপ বাড়ানো যায়নি। দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হলেও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে পারেনি। খাদ্য নিরাপত্তার প্রথম এবং প্রধান শর্তই হচ্ছে- খাদ্য যোগানের সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা থাকা অর্থাৎ নিশ্চিত আয়ের সংস্থান থাকা যার দ্বারা সবাই চাহিদা ও পছন্দ মতো নিরাপদ এবং প্রয়োজনীয় আমিষ সহ পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে বছরে ৮০ লক্ষ মেঃ টন আলু উৎপাদন হয়। সংরক্ষণের অভাবে এর উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট হয়। পৃথিবীর অনেক দেশ যেমন-ডেনমার্ক, হল্যান্ড, ব্রাজিলের জনগণ প্রধান খাদ্য হিসেবে আলু খেয়ে থাকে। আমরা ১০০ গ্রাম চালের পরিবর্তে আলুসহ অন্যান্য সব্জি ও ফল খাদ্য তালিকায় প্রতিস্থাপন করতে পারলে চালের উপর অনেকাংশে চাপ কমবে। আর এর জন্য প্রয়োজন একটু সচেতনা বৃদ্ধি, মানসিকতা এবং খাদ্যাভাসের পরিবর্তন।

মাটির স্বাস্থ্য নির্ভর করে মাটির মধ্যে বিদ্যমান পানি, বায়ু আর জৈব উপাদানের উপর। আর এসব নির্ভর করছে মাটির নিচে বসবাসরত অনুজীব সমষ্টির উপর। অপরিকল্পিত ভাবে রাসায়নিক সার, বালাইনাশক ও আগাছা নাশক ব্যবহারের ফলে এ অনুজীব ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু মাটির অনুজীব বা মাটির স্বাস্থ্য নয়, ধ্বংস হচ্ছে জীব বৈচিত্রসহ পরিবেশের। ফসলের জমিতে ক্রমাগত আগাছা নাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাসসহ ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। নিবিড় ফসল ও ফলচাষে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার। মাটির প্রাণ হচ্ছে জৈবসার। জৈব পদার্থ হারিয়ে মাটি অনুর্বর ও অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়ছে। মাটিতে ৫% জৈব পদার্থ থাকা দরকার কিন্তু মাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে জৈব পদার্থ রয়েছে শতকরা ০.৫ – ১.০ভাগ বা তারও কম। জমির আদর্শ খাদ্য হল গোবর সার, দেশের অনেক এলাকায় এই আদর্শ গোবর সার জমিতে প্রয়োগের পরিবর্তে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডেনর্মাকসহ অনেক উন্নত দেশে মাটির জৈব পদার্থ সংরক্ষণের জন্য জমিতে গোবরসার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। বলা হয় “সবার আগে জৈব সার তারপর অন্য সার” আমরা চলছি উল্টো পথে।

অপরিকল্পিত বালাই নাশক ব্যবহারের ফলে পোকা-মাকড়, রোগ-বালাইয়ের প্রাকৃতিক শত্রু, বন্ধু পোকা ধবংস হচ্ছে। শত্রু পোকার বালাইনাশক সহনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কম ক্ষতিকারক নিম্ন প্রজাতির পোকা-মাকড় ক্ষতিকারক হিসেবে আত্ম প্রকাশ করছে। ফসলে যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহার, ফলে ও মাছে বিভিন্ন তিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর ফলস্বরূপ মানবদেহে সৃষ্টি হচেছ- ব্লাড ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, ব্্েরস্ট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি। খাদ্যে ভেজালের কারনে গ্যাসট্রিক, আলসার, হৃদরোগ, অন্ধত্ব, কিডনী রোগ, স্নায়ু রোগ প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হচেছ মানুষ। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী আজ অসহায় হয়ে পড়ছে।

পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের ” বিষাক্ত খাদ্য জন স্বাস্থের জন্য হুমকি” শীর্ষক সেমিনারে বলা হয় শুধুু মাত্র ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়বেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনী রোগের আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারিরীক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকালঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। যা এক কথায় ভয়াবহ (বাংলাদেশ প্রতিদিন-২৬ অক্টোবর’২০১৪)। বাতাসে- সীসা, পানিতে- আর্সেনিক, চাউলে- ক্যাডমিয়াম, মাছে- ফরমালিন, ফলে- কার্বাইড, ফলের রসে ও বিস্কুটে বিভিন্ন ইন্ডাসট্রিয়াল- রং, সব্জীতে কীটনাশক, মুরগীর মাংসে- ক্রোমিয়াম সর্বদিকে বিষ আর বিষ পাওয়া গেছে।

শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য ৭০ এর দশকে এদেশে সার ও কীটনাশক ব্যবহার শুরু হয়। ফসল আবাদ বৃদ্ধির কারনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অনেক শিল্পাঞ্চল এলাকার উত্তম আবাদী জমি আজ পরিবেশ দূষণের মারাত্বক শিকার। কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য গিয়ে মিশছে নদী-নালা, খাল-বিলে। খাল-বিলের পানি ব্যবহৃত হচেছ জলাশয়ের আশেপাশের আবাদী জমিতে। আবাদী জমি হারাচ্ছে উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা। শিল্পের বর্জ্যরে মাধ্যমে এসব এলাকার মাটিতে জমা হচ্ছে ভারী ধাতব বস্তু (লেড, ক্যাডনিয়াম, ক্রোমিয়াম)। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ সব এলাকার উৎপাদিত চাউলে ক্যাডমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে।

এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আইপিএম, আইসিএম বর্তমানে আইএফএম (IFM) বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কাবের সদস্যদের প্রচার-প্রচারণা ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির ফলেই বালাইনাশকের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে। আশার কথা হলো সারাদেশে যেখানে ২০০৮ সালে দেশে বালাইনাশক ব্যবহার হয়েছিল ৪৮,৬৯০ মেঃ টন, ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০,৮৮২ মেঃ টন। সারাদেশে আইপিএম, আইসিএম ক্লাবের বর্তমান সংখ্যা ১০,০০০ টি এবং প্রশিক্ষিত কৃষক কৃষাণীর সংখ্যা ৩,০০,০০০ জন। আগামিতে ২০,০০০টি আইপিএম/আইএফএম ক্লাব স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে কীটনাশকের জুডিশিয়াল/পরিমিত ব্যবহার, পরিবেশ রক্ষায় কীটনাশকের পরিবর্তে সব্জিতে ফেরোমেন ট্রাপ, ব্রাকন, ট্রাইকোগামা (উপকারী অনুজীব দ্বারা ক্ষতিকর পোকা দমন) ব্যবহার বৃদ্ধি করা, ধানের জমিতে পার্চিং করা ও ফল পাকানোতে প্রাকৃতিক পদ্বতি অবলন্বন করে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো পরিহার এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাব সর্ম্পকে ব্যাপক প্রচার করতে হবে। আমাদের বাঁচার তাগিদেই এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

একদিকে আবাদী জমি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে ফসলী জমিতে বেআইনীভাবে ইটভাটা স্থাপন করায় তার কালো ধোয়া আশেপাশের ফসলী জমি ও গাছ পালার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। প্রতি বছর কোথাও না কোথাও ধানে চিটা, ফসলহানী সহ ফল গাছে ফলশূন্য হওয়ার অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে। গত ২০১৩ সালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ ও তাড়াশ উপজেলার বোরো ধানের জমি এতে আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের কৃষি প্রকৃতি এখনও জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উপর পড়ছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। এর ফলে শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি, বন্যা, খরা, জলোচ্ছাস ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

নদ-নদীর উৎস পথে বা তার গতিপথে বাঁধা সৃষ্টিকারী বাঁধ পানির স্বল্পতাসহ খরার সৃষ্টি করছে। উজানে বিভিন্ন অপরিকল্পিত বাঁধ ভাটিতে মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর কারণে বাংলাদেশে কৃষি, মৎস্য ও পরিবেশ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় সমুদ্রের পানির উজানমুখী ধাক্কা বাড়ছে। কারণ খরার সময় উজানের পানি প্রবাহ বাঁধার কারণে নদীতে পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামার কারনে এবছর বরেন্দ্র অঞ্চলসহ সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া উপজেলার ৩৮০টি অগভীর নলকূপ ৮-১০ফুট গভীরে স্থাপন করে সেচ প্রদান করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলায় চরাঞ্চলের পরিমাণ প্রায় ৪৪,০০০ হেক্টর (২৪%) যা নদীর নাব্যতার কারণে প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।

নদীতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে দেশের দক্ষীণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা লবণাক্ততায় ভরে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লক্ষ হেক্টর জমি লবণাক্ত আক্রান্ত। তার মধ্যে মাত্র ২,৫০,০০০ হেক্টর জমিতে লবণ সহিষ্ণু ফসল চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছে। বাকী জমি এখনও চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের ১২টি জেলায় লবণাক্ততার প্রভাবে স্বাভাবিক চাষাবাদ হয়না। ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইল্যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জমি লবণাক্রান্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। যা এখনো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি।

তাপমাত্রা ও উষ্ণতা রোধে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই। একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫% গাছপালা/বন থাকা দরকার, আমাদের দেশে রয়েছে বর্তমানে মাত্র ১০-১২%। এ সমস্যা উত্তরণের জন্য সরকার বৃক্ষ রোপণের উপর অত্যধিক জোর দিয়েছেন। কিন্তু কিছু আগ্রাসী প্রজাতির গাছ আমাদের দেশকে মরুময়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে রাস্তার দুইপার্শে¦ কড়াই গাছ বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে উক্যালিপটাস গাছ বাগান আকারে চাষ করা হচ্ছে। যে গাছে পাখি বাসা বাঁধেনা, মৌমাছি মধু আহরণ করেনা এবং আমাদের ভূ-নিম্নস্থ পানি ব্যাপক শোষণ করে উড়িয়ে দিয়ে দ্রুত মরুময়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগতভাবে নি¤œমূখী হচ্ছে, ফলশ্রুতিতে পানিতে আর্সেনিকসহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও যদি এ প্রজাতির গাছ লাগানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় যাবে তা সহজেই অনুমেয়। অথচ আমরা এর পরিবর্তে বেলজিয়াম, একাশিয়া, ইপিল-ইপিল, মেহগনি ইত্যাদি কাঠের গাছের সাথে ফল গাছ (আম, জাম, কলা, লিচু, পেয়ারা, কাঠাল তাল, খেজুর ইত্যাদি) লাগিয়ে একদিকে পরিবেশের উন্নতি সাধন অন্যদিকে ফলের চাহিদা ও পূরণ করতে পারি।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১১ লক্ষ মেঃ টন বীজ ব্যবহার হয় তারমধ্যে বিএডিসি সরবরাহ করে মাত্র ধানের ৩৫-৪০ ভাগ এবং অন্যান্য ফসলের মাত্র ১০-১২ ভাগ। সরকার কৃষকদের ভাল মানের বীজ সরববাহের লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে (ডিএই) কৃষক পর্যায়ে ভিত্তি বীজের প্রদর্শনী স্থাপন করে এ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছে। কৃষক পর্যায়ে উৎপাদিত এ বীজ দিয়ে বর্তমানে প্রায় ৭০ ভাগ উন্নত মানের ধান বীজের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। সরকারের নন ইউরিয়া সারের মূল্য কমানো এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তদারকির ফলে বর্তমানে জমিতে সুষম (Balanced) সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গত ৫ বছর যাবৎ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফল স্বরুপ গত ৩ বছর যাবৎ এক টন চালও বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়নি। এত প্রতিকুল পরিবেশেও কৃষি উৎপাদন গত ৫ বছর শক্ত ভিত্তির উপর দাড়িয়েছে, ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভাল অবস্থানে আছে।

২০১০ সালের একটা গবেষণায় দেখা গেছে জনসংখ্যা বর্তমান হারে বৃদ্বি পেতে থাকলে এবং খাদ্য গ্রহণ ৪৫৪ গ্রাম/জন/দিন হিসেবে আগামী ২০২৫ সালে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা দাড়াবে ১৯ কোটি, খাদ্যের প্রয়োজন হবে ৩ কোটি ১৫ লাখ মে. টন। আর ২০৫০ সালে লোকসংখ্যা দাড়াবে ২৫ কোটি এবং খাদ্য চাহিদা দাড়াবে ৪ কোটি ২৫ লাখ মে: টন। সেই সাথে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দাড়াবে ২০২৫ সালে বর্তমানে ৮১ লাখ হে: থেকে কমে ৬৯ লাখ হেক্টরে এবং ২০৫০ সালে দাড়াবে মাত্র ৪৮ লাখ হেক্টরে। সুতরাং এত অল্প পরিমাণ চাষযোগ্য জমিতে ৪.২৫ কোটি মে: টন চাল উৎপাদন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতএব এখন থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন, পুষ্টি সমুন্নত রেখে খাদ্যাভাস পরিবর্তন এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। (Seminar on science for food security-2010)

উপসংহার:

আমরা জানি কৃষিতে নানাবিধ সমস্যা আছে যার সমাধান ও রয়েছে। আমরা কৃষিতে অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছি। আমাদের চাল উৎপাদন যথেষ্ট যা ধরে রাখতে হবে। শ্রীলংকাতে এবছর পঞ্চাশ হাজার টন চাল রপ্তানী হচ্ছে। তাপমাত্রা সহিঞ্চু গমের জাত উদ্ভাবনের ফলে গমের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ লক্ষ টন গমের চাহিদা রয়েছে, উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১১-১২ লক্ষ টন। যার জন্য খাদ্যশস্য হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লক্ষ টন গম আমদানি করতে হচেছ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৮০ লক্ষ টন আলু উৎপাদন হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে সল্প পরিসরে বিদেশে আলু রপ্তানি হচ্ছে। এ মহুর্তে সব্জি ও ফলের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। ডাল ও তৈল জাতীয় ফসলে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। ভোজ্য তেলের প্রায় ৭০% ভাগ আমদানী করতে হচ্ছে। অবশ্য বর্তমানে ধানের কুড়া থেকে রাইস বার্ণ
অয়েল উৎপাদনের ফলে সয়াবিন তৈল আমদানী দিন দিন কমে যাচেছ। সরিষার আবাদ বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। নতুন নতুন সরিষার জাত উদ্ভাবিত হয়েছে যা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ডালের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে ডাল জাতীয় ফসলের উৎপাদন ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ডালের মূল্য ও আমদানীর পরিমাণ কমেছে। এ সময়ে চাহিদার ৫০% ডাল দেশে উৎপাদন হচ্ছে। চাষীরা মূল্য পাওয়ায় পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে এবং আমদানীও কমেছে। সারা বছর ব্যাপী ফল উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কলা, পেপে, থাই পেয়ারা, আপেল কুল চাষ বেড়েছে। আংশিক বৃষ্টি নির্ভর আউশ ও পুরো বৃষ্টি নির্ভর রোপা আমন চাষে সরকার কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ব্যাবসায়িক ভিত্তিতে কৃষি খামার স্থাপন, খামার যান্ত্রিকীকরণ ও সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টা বর্তমান কৃষিকে একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ অবস্থানে নিয়ে যাবে। যেখানে কৃষি, কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষিত হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে আর ও গতিশীল করে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

(লেখক :ইন্দ্রজিত দাস, ফারহানা ফেরদৌস, রফিকুল ইসলাম এবং মির্জা মোঃ আজিম হায়দার উন্নয়ন কর্মী)

(ওএস/এস/মে০৫,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test