E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকের চোখে পানি

২০১৭ মার্চ ১৪ ১৫:৫৫:৩৮
অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকের চোখে পানি

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : বসন্তের হঠাৎ বৃষ্টিতে ক্ষেতের তরমুজ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। দুই হাতে পরম মমতায় তরমুজগুলো তুলে শুকনো স্থানে রাখছেন তরমুজ চাষি আল-আমিন। বৃদ্ধ এই চাষি তরমুজ খেতের পানি সেচ দিতে দিতে বিষণ্ন আর হতাশ। ক্লান্ত মনে হতশায় মুখে বললেন, হঠাৎ এমন বৃষ্টি ফসলের ক্ষতি মাঝে মধ্যিই হয়, তা পুষয়েও যায়। কিন্তু এই সোনার জমিতে আর কদিন ফসল ফলাতি পারব, তা নিয়েই চিন্তায় আছি। জানি না কি হবে।

পটুয়াখালীতে গত তিনদিনের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে রবি মৌসুমের প্রায় ২৫ প্রজাতের রবিশস্যের মাঠ। ফলে তরমুজ, আলু, মুগডাল, চিনাবাদ ও সরিষাসহ নানা প্রজাতির রবিশস্য এখন পানির নিচে রয়েছে। কৃষকরা পাম্প বসিয়ে খেতের পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এবার ফাগুনের আগাম বর্ষার ফলে কৃষকের মুখে হাসির বদলে চোখ থেকে পানি ঝরছে।

দেখা গেছে, আলু, তরমুজ, মুগডাল, খেসারির ডাল, চিনাবাদা, ফেলন, তিল ও মরিচ পানির নিচে তলিয়ে আছে। খেতের কোথাও কোথাও গড়ে এক ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় রবি মৌসুমে ১ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৬০ আক্রান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৮ হাজার ০৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেলও আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ০৫০ হেক্টর, ৮৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ হলেও আক্রান্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর মুগডাল, ৫ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম চাষ হলেও আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬০৭ হেক্টর, ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হলেও আক্রান্ত ২ হাজার ১০০ হেক্টরের, ৮ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হলেও আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ৯২২ হেক্টর, খোসারির ডাল ২৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরের, ফেলন ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও আক্রান্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টরেরে।

এছাড়া জেলায় ১৬ লাখ ৬ হাজার ৯৩৯ হেক্টর জমিতে রবিশষ্যে আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ২ হাজার ৪২৯ হেক্টর জমির রবিশস্য আক্রান্ত হয়েছে।
মোট ফসলি জমির তুলনায় ক্ষতির শতকরা হার ২০% থেকে ৫০ % পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে কয়েক শত কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জৈনকাঠী গ্রামের মুগডাল চাষি মোছলেম মৃধা। তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কথা বলতে গেলেই তার চোখ বেয়ে নেমে আসে পানি। তিনি বলেন, অনেকটা আশা ছেড়ে দিয়েই পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। জানি না এই ক্ষতি কী দিয়ে কাটিয়ে উঠব। কী করে আমরা দাদনের টাকা পরিশোধ করবো এ চিন্তা করলেই অস্থির।

গলাচিপা পৌর শহরের তরমুজ চাষি আল আমিন জানান, এবার তরমুজের আনুমানিক ৩০ কোটি টাকা কৃষকের লাভ হতো। কিন্তু এই বৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। এ লোকসান আমরা কীভাবে কাটিয়ে উঠবো তা বুঝে উঠতে পারছি না।

রাঙ্গাবালী উপজেলা কাউখালী গ্রামের হাজেরা বেগম বলেন, একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে কিছু জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। কিন্তু বৃষ্টি পানিতে তার খেত এক ফুট তলিয়ে গেছে। ফলে এ বছর তরমুজ চাষ থেকে লাভ তো দূরের কথা মূল ধন আসবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম মাতুব্বর জাগো নিউজকে বলেন, আমারা কৃষকদের পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি ফসলের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়ও দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

(এসডি/এএস/মার্চ ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test